আনন্দ সংবাদ!
আমার সম্পাদনায় ‘কাব্য কৌমুদী’ আজ আলোর মুখ দেখেছে।  যৌথ কাব্যগ্রন্থটি সম্পাদনা করতে পেরে আমি তুষ্ট, পরিতৃপ্ত ও গর্বিত। এই কাব্যগ্রন্থের নেপথ্যের ইতিহাসটি পাতার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করছি।

এক শারদীয় বিকেলের কথা –
তখনো কবি কবীর হুমায়ূন দ্বিতীয় দফায় দুর্ঘটনায় পতিত হননি। কাজের অবসরে বাংলা কবিতা-আসরের কয়েকজন কবি যেমন প্রায়ই আমরা মিলিত হই। সেদিনও তিন কবির বৈকালিক আড্ডা হচ্ছিল ‘রসের ফোঁটা’য় বসে। কবি জালাল উদ্দিন মুহম্মদ প্রথম প্রস্তাবটি রাখেন – “আমরা কজন মিলে একটা কবিতা সংকলন বের করলে কেমন হয়?” তারুণ্যের প্রতীক - প্রাণবন্ত কবি কবীর হুমায়ূন প্রস্তাবটা লুফে নেন। একই সাথে ভালোবাসার আব্দার হিসাবে এর সম্পাদনার গুরুভারটি চাপিয়ে দেন আমারই কাঁধে। যেই কথা সেই কাজ; আমিও বেশ মজাই পেলাম। সম্পাদনার বিষয়ে আনাড়ি আমি প্রথমে একটু ভড়কে গেলেও হতাশ হইনি। কেন না, ইতোমধ্যে নিজের বেশকিছু বই প্রকাশনার কাজ করতে গিয়ে খানিকটা আস্থা অর্জন করেছি। এছাড়া অধুনা প্রকাশিত বেশ কিছু যৌথ-প্রকাশনার নমুনা দেখে এমন প্রতীতি জন্মেছে যে, যত আনাড়িই হই না কেন গুণগত মানে অপেক্ষাকৃত ভালো কিছু আমি করতে পারবোই। আজ বইটি হাতে পেয়ে সে আস্থা আরো বেড়েছে।

জানতাম; লেখা যোগাড় করা কোন বিষয়ই না। কবিতা-আসরে গত দুবছরের বিচরণে যেটুকু আন্তঃকবি সম্পর্ক ও আস্থা-ভালোবাসা অর্জন করেছি তাতে জনা-পঞ্চাশেক অগ্রণী কবির লেখা পাতায় পোস্ট না দিয়ে নেহায়েত ব্যক্তিগত যোগাযোগেই সংগ্রহ করা সম্ভব। হলোও তাই, Informal যোগাযোগে মাত্র দুদিনেই আশাতীত সাড়া পেলাম, বেশকিছু লেখা এসে গেলো। আর সময় নিলে সামাল দিতে পারবো না, তাই থামলাম। প্রায় দুশ’র অধিক কবিতা হাতে এসে গেলো। তা থেকে বাছাই করে ১৬ কবির একশ কবিতা নিয়ে সংকলনের কাজে হাত দিই। প্রত্যেককে ন্যূনতম মাত্র ছ সাত পাতা করে বরাদ্দ দিতে গিযেও সংকলনটির কলেবর পাঁচ ফর্মা থেকে বাড়িয়ে সাত ফর্মায় উন্নীত করতে বাধ্য হই।

প্রকাশনাটি বাংলা-কবিতা আসরের কবিদের নিয়ে হলেও এখানে আসরের কোন উপস্থিতি রাখতে চাইনি বলে পাতায় কোন পোস্ট দিইনি। তাই কেউ জানতেও পারেননি। আগেই বলেছি, তাহলে সামাল দিতে পারতাম না। এটা ছিলো আমার টেস্ট কেইস। সফল হলে পরবর্তীতে আরো ব্যাপক আয়োজনের চিন্তা করা যাবে তখন আরো বেশি কবিকে সন্তুষ্ট করা যাবে। বাংলা কবিতা আসরের মাননীয় এডমিন বিষয়টি জানতে পেরে হৃষ্টচিত্তে নিজের লেখা দিয়ে আমাকে অনুপ্রাণিত করেন। এই অবসরে তাঁকেও ধন্যবাদ জানাই।

কবিতা তো পেলাম, বাছাই সম্পাদনা প্রুফ ইত্যাদির কাজ পুরোদমে চলছে। এরই মাঝে আমার একমাত্র বড়ভাই - স্ত্রী-সন্তানহীন উদাসীন মানুষ, মারাত্মক অসুস্থ হয়ে মফস্বলের হাসপাতালে শয্যাগত। তাঁর চিকিৎসার জটিলতা মোকাবেলায় ও উন্নততর ব্যবস্থাপনায় কদিন খুব নাস্তা-নাবুদ হতে হলো। অবশেষে তাঁর একটি পা চিরতরে বিসর্জন দিয়ে আপাতত মুক্তি পাওয়া গেলো। এখনো তিনি ধুঁকছেন (এখনো তাঁকে নিয়ে ঝঞ্ঝাট পোহাচ্ছি), সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী। কদিনের মধ্যেই কবি বন্ধু কবীর হুমায়ূনও দ্বিতীয় দফায় Hip Joint এ Fracture হয়ে  হাসপাতালে বন্দি। শেষ পর্যন্ত তাঁরও Hip Joint Replacement হয়েছে।

চোখে সর্ষে ফুল দেখছিলাম। ভীষণ ভড়কে গেলাম; তবে কি গতবারের নেয়া কবি শিমুল শুভ্র’র উদ্যোগটির মতই আমার উদ্যোগটিও ভেস্তা যাবে? মনে পড়ে; গতবার মায়ের অসুস্থতাজনিত কারণে কবি শিমুল শুভ্র’র উদ্যোগ থেমে গিয়েছিলো। এতদসত্ত্বেও আমি ছিলাম খুবই আস্থাশীল। তাই অনেক প্রতিকূলতা ও ব্যক্তিগত বিপদাপদ সত্ত্বেও অবিশ্বাস্য স্বল্পতম সময়ে সংকলনটি আলোর মুখ দেখতে পেরেছে। আর এরই মাধ্যমে প্রমাণ হলো; আন্তরিক নিষ্ঠা ও সততা থাকলে লক্ষ্য অর্জনে যেকোন বাধাকেই অতিক্রম করা যায়। বন্ধুদের আস্থা ও ভালোবাসাকে সমুন্নত রেখে বইটির সুষ্ঠু প্রকাশনা সুসম্পন্ন করতে পারার জন্য পরম করুণাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতা ও প্রকাশককে ধন্যবাদ জানাই। আগামীকাল লেখক কবিদের বই কুরিয়ারে পাঠানো হবে।

উল্লেখ্য, ‘কৌমুদী জ্যোৎস্না’র শারদীয় তিথিতে সংকলনটির জন্ম। প্রাজ্ঞকবি খায়রুল আহসান প্রস্তাবিত নামটি অধিকাংশ কবির পছন্দ হওয়ায় সংকলনের নাম ‘কাব্য কৌমুদী’ রাখা হয়। প্রচ্ছদ শিল্পী আমাদের থিম অনুযায়ী প্রচ্ছদ করতে পারছিলেন না। অবশেষে কবি কবীর হুমায়ূনের ছেলে সানী কবীর প্রচ্ছদটি এঁকে দেন। সংকলনটির একটি সুন্দর প্রচ্ছদ এঁকে সহায়তা করার জন্যে নবীন শিল্পী সানী কবীরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

নিন্মোক্ত যে ষোলজন কবির ১০০ কবিতা নিয়ে ‘কাব্য কৌমুদী’ আলোর মুখ দেখেছে তাঁদের সকলকে জানাই প্রাণের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। নিচে তাঁদের নাম দেয়া হলো:

সর্বকবি জনাব – মো: সানাউল্লাহ্‌, সরকার মুনীর, শাহীন আহমদ রেজা, মোহাম্মদ রুহুল আমীন, নূরুল ইসলাম, জালাল উদ্দিন মুহম্মদ, জসীম উদ্দীন মুহম্মদ, খায়রুল আহসান, খলিলুর রহমান, কৌশিক আজাদ প্রণয়, কামরুন্নাহার রুনু, কামরুল ইসলাম, কবীর হুমায়ূন, আশফাকুর রহমান পল্লব, আল মামুন ও অনিরুদ্ধ বুলবুল।

আমার প্রতি আস্থা ও ভালোবাসায় যেসব বন্ধুরা স্বপ্রণোদিত হয়ে লেখা দিয়ে সহায়তা করেছেন তাঁদের প্রতি সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। যেসব বন্ধুরা এ সংখ্যায় লেখা দিতে পারেননি। তাঁদের বলবো; হতাশ হবেন না, অচিরেই আরো বৃহত্তর পরিসরে নতুন উদ্যোগ আসছে। তাতে অনেক কবিকেই ঠাঁই দেয়ার আশা রাখি। প্রয়োজনে আগেই আপনার পাতা বুক করুন।

দৃষ্টিনন্দন ঝকঝকে মলাটে আবদ্ধ সাত ফর্মার উন্নতমানের (আশি গ্রাম রঙিন কাগজে ছাপা) বইটি একুশের বইমেলা-২০১৭ তে ‘মানুষজন’ প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাবে। এতদিন অপেক্ষা করতে না চাইলে এখনই যারা বইটি পেতে চান ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

আকাশডাক:arrowtech79@yahoo.com
ফেসবুক:https://web.facebook.com/mazibur338
মুঠোফোন: 01911-385 955

- - - - - - - - - - - - - - - - -
একটি কৈফিয়ত:

অনেক ভারতীয় কবি বন্ধুর সাথে নিবিড় সম্পর্ক ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও কাউকেই সাথে রাখতে না পারার মর্মবেদনা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বই কিংবা টাকার আন্তঃদেশীয় আদান-প্রদানের সমস্যাজনিত কারণেই সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনি। বাস্তবতার আলোকে বন্ধুরা বিষয়টিকে মেনে নেবেন আশা করি। ভারতীয় কবি বন্ধুদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও মরমের অনুভূতি ভাগ করছি। ধন্যবাদ।