দুঃখজনক এই পোস্টটি রাস্তায় চলমান অবস্থায় লিখছি। নিজেও আমি এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জটিল রোগী নিয়ে মফস্বলের হাসপাতালে - বিভীষিকাময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি। প্রায়শই তিনি ফোন করে খবরা-খবর নিচ্ছিলেন। কিন্তু আজ সকালে কবির ফোন পেয়ে বাকহারা হয়ে গেলাম। নিয়তির নির্মম পরিহাস - তিনি আবারো দুর্ঘটনায় নিপতিত!
তাঁর দুর্ঘটনার একটু আগে, গত সন্ধ্যায়ই কুশল বিনিময় হলো। কদিনের উপর্যোপরি ছুটি তাই, আজ সকালেই তাঁর গ্রামের বাড়ি যাবার কথা ছিলো। বন্ধুবাৎসল আড্ডাবাজ কবি প্রায়ই যেমন আড্ডার আমন্ত্রণ জানান, এবারের ছুটিতেও তেমনি আড্ডার আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলেন; ১৪/১৫ তারিখের কোন এক সুবিধাজনক সময়ে মিলিত হবো।
অথচ নিয়তির চক্রান্তে তিনি আবারো দুর্ভোগের শিকার হলেন। গতবছর ২৬ নভেম্বর এক তুচ্ছ দুর্ঘটনায় তিনি ডান পায়ে মারাত্মক আঘাত পেয়ে দীর্ঘ একবছরের চিকিৎসা ও পরিচর্যার পর কেবল একটু হাঁটা-চলা করছিলেন। একবছরও পূর্ণ হয়নি; গত সন্ধ্যায় আসরের প্রিয় কবি কবীর হুমায়ূন আবারো নিয়তির ফেরে সেই একই ধারার দুর্ঘটনায় অপর পা'টিতেও আঘাত প্রাপ্ত হন। তাঁর ভাষ্য থেকে জানা যায়; গত ১০/১০/২০১৬ তারিখ, মংগলবার, সন্ধ্যার পর কবি রিক্সা করে যাচ্ছিলেন। চলন্ত অবস্থায় রিক্সার চাকা বিছিন্ন হয়ে তিনি ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। তৎক্ষণাৎ হাসপাতাল - এক্স-রে সিটি স্ক্যান ইত্যাদি করে জানা যায়, বামদিকের হিপ জয়েন্টের হাড়ে ফাটল হয়েছে। সম্ভবত আগামী সোমবার ' বাংলাদেশ স্পাইন এন্ড অর্থপেডিক্স হাসপাতাল' পান্থপথ-এ অপারেশন হবে। তিনি এখন বাসাতেই আছেন।
হায়! আবারো সার্জারি, আবারো দীর্ঘ বিশ্রাম। আর দীর্ঘ বিশ্রাম মানেই কর্মচঞ্চল একটা মানুষকে জোর করে হাজতবাস করানো। এ বড় দুর্বিসহ, বড়ই কষ্টদায়ক। সদাহাস্য সহজ সরল মানুষটির এই দুর্ভোগ মনে বড় কষ্টের উদ্রেক করছে। তাই নির্বিকার থাকতে পারছি না। তাঁর জন্য সবার দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করছি।
বাংলা কবিতার আসর – একটি পরিবার বিশেষ। এই পরিবারের সদস্যদের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ অপরের সাথে ভাগ করে আমাদের মধ্যকার সাম্য-প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে আরো জাগ্রত করতে পারি। তেমনি দায়বদ্ধতা থেকেই এই পোস্ট...
এই আসরে আমার দুবছরের পথচলায় বহু অকৃত্রিম বন্ধু-হিতার্থী পেয়েছি। ভার্চুয়াল বন্ধুদের অনেকেই হৃদ্যতায় ও অন্তরিকতায় ব্যক্তিগত ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে রূপান্তরিত হয়েছেন। অনেকের সাথেই আন্তরিক যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। এই পাতার কবি হিসাবে (আর কোথাও সম্মান-খাতির পাই বা না পাই) এখানে অহরহই ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে শুভেচ্ছা ও ভাব বিনিময় করছি। কে জানে সবার অলক্ষ্যে কোনদিন আমিও বা অতীত হয়ে যাবো। আমার পাতায় এসে কবিতা পড়ে মন্তব্য করে কেউ আর জবাব পাবেন না। এই পাতাটি হয়তো আর কেউ কোনদিন খুলবেনও না।
ভেবে দেখুন; যাকে প্রতিদিন বন্ধুরা এতো ভালোবাসা জানাতো, কদিনের অদর্শনে হয়তো তাকে আর কারো মনেই পড়বে না। যেমন প্রয়াত কবি দেবাশিস সেন সহ কোন কোন কবিকে কেউ আর স্মরণও করি না। গত কদিনের আমার অনুপস্থিতিও তেমনি ইঙ্গিত দিচ্ছে যেন।
হয়তো একদিন অতীত হয়ে যাবো, ব্যক্তিগত বন্ধু ছাড়া কেউ হয়তো জানতেও পারবেন না। আমার জন্য পাতায় কোন স্মৃতিচারণ হবে না, দুকলম লেখা হবে না। কিন্তু যদি কোন জানাশোনা বন্ধু আমার বিষয়ে আসরে দুকলম লিখেন – আমার বিশ্বাস আসরের বন্ধুদের মাঝে ভালোবাসা ও আশীর্বাদের বান বয়ে যাবে - অতীতেও এমনটাই দেখেছি!
ভেবে দেখুন; যে বন্ধুদের বুকে নিয়ে এই আসরে রাতদিন কাটয়েছি, ভালোবাসা দিয়েছি, পেয়েছি সেই আমি সবার অলক্ষ্যে নিভৃতে চলে গেছি অথবা জীবনের সন্ধিক্ষণে একা একা যুদ্ধ করছি অথচ আসরের কোন বন্ধু জানতেও পারলেন না, সহানুভূতি বা ভালোবাসাও জানাতে পারলেন না... তা কি কোন বন্ধুর জন্যই সুখকর হবে?
কাজেই, আসুন আমরা সবাই সবার বন্ধু হই, সুখ-দুঃখ ভাগ করি। তাতে আমাদের জাগতিক কোন ক্ষতি হবে না বরং একজনের দুঃখটা অন্যেরা ভাগ করে নিতে পারায় দুর্দশাগ্রস্তের দুঃখের ভার খানিকটাই লাঘব হতে পারে।
আাসুন, সবাই তাঁর জন্যে দোয়া/আশীর্বাদ করি।
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।
** যারা কবিতা-পাতায় ও টেলিফোনে তার অসুস্থতার খবরা-খবর নিচ্ছেন, তাঁদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।