(পুনর্লিখন)
একজন লেখক কিছু লিখে তা জনসমক্ষে প্রকাশ না করে যতক্ষণ নিজের জিম্মায় রাখেন ততক্ষণ লেখাটি তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত কিন্তু যখনই প্রকাশ করে ফেলেন(তা প্রিন্ট মিডিয়া-ই হোক বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়-ই হোক) তখন তা হয়ে উঠে পাঠকের। লেখাটি প্রিন্ট মিডিয়ার প্রকাশনী, সিডিতে বা পিডিএফ/জেপিজি ফর্মেটে প্রকাশ হলে লেখায় কোন সংশোধন পরিবর্তন পরিমার্জনের সুযোগ খুবই কম(কেবলমাত্র পরবর্তী সংস্করণেই তা করা সম্ভব)কিন্তু ব্লগ সাইটের সুবিধা হ’ল – ঐ কাজগুলো সব সময়ই করা যায়। তাতে লেখক চাইলে লেখাটা সংশোধন পরিবর্তন পরিমার্জনের মাধ্যমে আপ-ডেটেড রাখতে পারেন।
সুতরাং, প্রত্যেকেরই উচিৎ - কোন লেখা প্রকাশের আগে বানান ও যতিচিহ্নের ব্যবহারটা যথাসম্ভব পরখ করা। কেন না, লেখার মাধ্যমে তিনি পাঠককে যতটুকু বোঝাতে পেরেছেন পাঠক ঠিক ততটুকুই বুঝবে। তিনি যদি ভুল বানান ও যতিচিহ্নের ভুল প্রয়োগ করে থাকেন তাতে পাঠক ভুল মানেটাই বুঝবে। তাতে লেখকের লেখনীর মান সম্পর্কে পাঠকের কাছে ভুল সংকেত পৌঁছে যায়। কেউ-ই নিশ্চয় নিজেকে অপরের কাছে তুচ্ছ বা হেয় প্রতিপন্ন করতে চাইবেন না!
যেহেতু কেউ আমরা পেশাদার লেখিয়ে অথবা পণ্ডিত ব্যক্তি নই সুতরাং আমাদের যতিচিহ্নের ব্যবহার ও বানানের শুদ্ধতায় গলদ থাকতেই পারে। যেকোন বিষয়ে গলদ থাকা দোষের কিন্তু একটু-আধটু গলদের জন্য তা পরিত্যাজ্য হবে এমনটা ভাবা মানেই হ'ল সাহিত্যের সেই সৃষ্টি কিংবা তার স্রষ্টার প্রতিই অবিচার করা। তবু, বানানের প্রতি আমাদের আরো সতর্ক দৃষ্টি প্রয়োজন। পাতার বন্ধুদের সুবিধার জন্যে বাংলা বানানের শুদ্ধতা নিশ্চিত করতে এখানে আমি দু’টি অনলাইন ভার্সন অভিধানের সাইট লিঙ্ক দিচ্ছি:
http://www.ovidhan.org/
http://www.english-bangla.com/bntobn
সাইট দুটি এবার ডাউনলোড করে নিন। সামান্য সন্দেহ হলেই শুদ্ধ বানানটি খুঁজে নিতে পারবেন। আমার বিশ্বাস; লেখক/কবি আন্তরিক হলে ৯৮ ভাগ বানানই শুদ্ধ করে পোস্ট দিতে পারবেন। কেউ চাইলে এই পাতায় আমার লেখা – “বানান শুদ্ধ করার উপায়” শির্ষক পোস্টগুলো পড়ে নিতে পারেন।
এবার আসি যতিচিহ্নের কথায়: মনের ভাবের যথাসম্ভব সুবোধ্য প্রকাশ এবং কবিতার কথামালার লালিত্যকে ফুটিয়ে তুলতে যেমন বানান শুদ্ধতা অপরিহার্য তেমনি যতিচিহ্নের যথাসম্ভব সঠিক প্রয়োগেরও বিকল্প নেই। বাংলাভাষায় মূল যতিচিহ্ন মাত্র তিনটি; দাড়ি(।) কমা(,) ও প্রশ্নবোধক চিহ্ন(?)। কালে কালে অন্যান্য ভাষা চর্চা করে আমরা দেখলাম; মনের ভাবকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে কোলন(:) সেমি-কোলন(;) ড্যাশ(_) হাইফেন(-) উধৃতি কমা(‘’/””) ডটস্(...) আশ্চার্যসূচক চিহ্ন(!) ইত্যাদি প্রচুর চিহ্নের ব্যবহারে ভাবকে আরো সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। ক্রমে বাংলা ভাষায় সে সবের চর্চার বিস্তৃতি পাচ্ছে। ওইসব যতিচিহ্নের ব্যবহারে বাংলা ভাষা এখন আরো বেশি সহজবোধ্য হয়ে উঠেছে আর ভাষার পরিস্কার ভাবটি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে।
যতিচিহ্ন প্রয়োগের কিছু গদবাধা নিয়ম-কানুন আছে বটে কিন্তু সে-সবই শাশ্বত নয়। লেখক তার বোধ ও জ্ঞানমতই ব্যবহার করবেন। মনে রাখতে হবে; যথার্থ যতিচিহ্ন প্রয়োগে লেখায় সঠিক বোধটি যেন সুন্দরভাবে ফুটে উঠে। লেখক মনের ভাব আবেগ বিষ্ময় প্রশ্ন অবদমিত উচ্ছ্বাস ভাললাগা ও মন্দলাগা-বোধ তিরস্কার শংসা ইত্যাদির যথার্থ প্রকাশের জন্যে নিজের মত করেই যতিচিহ্নের ব্যবহার করবেন তবে, তা যেন সাধারণ্যে গ্রহণযোগ্য হয়। তার জন্য চাই নিবিড়ঘন পর্যবেক্ষণ ও বেশিবেশি চর্চা। কেন-না, যতিচিহ্নের যথার্থ প্রয়োগের অভাবে অনেক সময় ভাবটা ঠিকমত প্রকাশ পায় না অথবা ভুলভাবে প্রকাশ পায়।
সবশেষে আর একটা কমন ভুলের উল্লেখ করেই আমার লেখা শেষ করব। কোন কোন লেখককে দেখি; মনের অজান্তেই ক্রিয়াপদের মূলশব্দের শেষের ‘ই’-র স্থলে ‘য়’ আবার ‘য়’-র স্থলে ‘ই’ ব্যবহার করে থাকেন। ভুলগুলি এরূপ: আমি/আমরা যায়, সে যাই, (আসলে হবে; আমি/আমরা যাই, সে যায়) (আমি)দেখতে পায় - , (সে/তারা)দেখতে পাই – ... এরূপ প্রচুর বেখেয়ালের ভুল আছে। লেখক/কবিকে অবশ্য এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে নইলে লেখার বোধটাই পাঠকের কাছে গড়বড় হয়ে উঠে যে!
আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে অন্য কোন বিষয় নিয়ে হাজির হ'ব – সে প্রত্যাশায়ই এখনকার মত শেষ করছি। সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা -