পাতার কবি ও পাঠক বন্ধুরা,
প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানবেন। যাপিত জীবনের সময় বাস্তবতায় আশা করি সবাই ভাল আছেন – কামনাও তা-ই। কিন্তু আমি ভাল ছিলাম না মোটেও আর সে কৈফিয়ত দিতেই এ লেখার অবতারণা। এখন রাত প্রায় দুইটা, শরীরও সইছে না, কবিতা পড়া বা পাতায় পাতায় উপস্থিতি জানানোও আপাতত সম্ভব না। তবু এতদিন পর সুযোগ পেয়ে বন্ধুদের কাছে দু-কলম না লিখে যাই কি করে? তাহলে শুনুন – গত একমাস কেন সুষুপ্তিতে ছিলাম:
শরীরগত সমস্যায় আছি দীর্ঘদিন। মাঝে মাঝে মানসিক প্রশান্তি ও বায়ূ পরিবর্তনের নিমিত্তে নগরের বৈভব ছেড়ে পল্লীজীবনে ফিরে ফিরে আসা এখন আমার নিত্য জীবনের চিরায়ত পথ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আড়াই মাস ঢাকায় অবস্থান কালে কাজের চাপ আর নগরজীবনের তাপে হাঁফিয়ে উঠছিলাম - যথারীতি পল্লীতে ফেরা...
এখানে বরাবর একটি মাত্র মোবাইল অপারেটরের নীরবাচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক মিলে, অন্যসব ওঠা-নামায় বেজায় পটু। সুতরাং অন্তর্জালিক জগৎসহ সভ্য দুনিয়ার সাথে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা - সবেধন নীলমণি সেই অপারেটরটিও গত আট ফেব্রুয়ারী দুপুরে একটি পোস্ট দেয়ার পর থেকে এমনই লাপাত্তা হ’ল যে বিগত একমাস সাংসারিক বিপুল ব্যস্ততার মাঝেও সময়ের একটা বোঝা বুকের উপর যেন চেপে বসেছিল। শত ব্যস্ততায় যতই ডুবে থাকি না কেন, সব সময় মনে এক হাহাকার – মনের অতৃপ্তি আর অপূর্ণতা; কী যেন নেই, কী যেন হারাচ্ছি...
‘গরীব গরীবের কদর বোঝে’ এই প্রচলিত মতবাদটি আমার ক্ষেত্রে বেশ মানানসই ছিল। কেন না, আমার পর্ণ কুটিরে নামিদামি বনেদী অপারেটরদের প্রবেশে যেখানে দ্বিধা কাজ করে সেখানে ওই গরীব অপারেটরটির কোন সংকোচ বা জড়তা ছিল না। আমার পর্ণ কুটিরেও সে স্বচ্ছন্দে ঢুকে পড়ত। আর তারই কল্যাণে অজ-পাড়া-গাঁয় বসেও দিব্বি অন্তর্জালিক সুবিধা নিয়ে আধুনিক দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ ও সখ্যতা ছিল আমার নিত্যদিনের সহজাত কর্ম। কিন্তু এবারে ভাগ্য আমার সাথে এমনই প্রতারনা করেছে যে আজ অব্দি সেই অভাগার সন্ধান আর পেলাম না। অন্য অপারেটরে ধর্ণা দিয়ে গাছে চড়ে মাঠে ঘুরে কোন রকম ভয়েস কলের কাজটি চালাতে পারলেও নেটের জন্যে যে নীরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক চাই তা আমার ঘরে মোটে মিলে না।
প্রায় দেড় বছর যাবত বাংলা-কবিতা ও পাতার বন্ধুদের সাথে এতটাই আত্মীক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে যে; প্র্রতি মুহূর্তেই মনে হ’ত – আমি বুঝি প্রিয়স্থান ও প্রিয়জন বঞ্চিত কোন এক ভিনগ্রহে অন্তরীন আছি। তাই সময় সময় মাঠে ঘুরে গাছে চড়ে মুঠোফোনে কবিতা-পাতায় ঢুঁ দিয়ে দেখতাম। এ যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মতই। ওইটুকুই – তার বেশি না হত ঠিকমত পড়া না হত নিজের উপস্থিতি ও অভিব্যক্তি জানানো। একমাসের নিবিড় কর্মব্যস্ততা ও অন্তর্জালিক বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়ে অবশেষে আজ ঢাকায় ফিরলাম সেইসাথে যেন দুর্বিসহ কয়েদি জীবনেরও অবসান হল। যেন এক সুষুপ্তির জাগৃতিতে নতুন করে জীবনের স্বাদ পেলাম। ব্যস্ততা কাটিয়ে উঠতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে তবু আশা যে, কম হলেও আসরে আসতে পারব। বন্ধুদের সাথে অন্তত কুশলটুকু বিনিময় করা যাবে।
আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভাল থাকুন। আশা করি সময় সময় দেখা হবে।
শুভরাত্রি -