লেখক কবি ও পাঠক বন্ধুরা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানবেন। আগে একটু নিজের কথা বলে নিই?
আজ থেকে পনেরো মাস আগে এই পাতায় যখন প্রথম লিখি তখন প্রচুর বানান ভুল হ’ত। পণ করলাম; বানান শুদ্ধ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব। অপরাপর অনেকের মতই ব্যাকরণের অকারণ ভীতি ছাড়াও ভাষা এবং বানান বিষয়ে পরামর্শসূচক এমন নিরেট শাস্ত্রবিধি পড়তে আমারো ভাল লাগত না। তবু প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়েই কিছু ব্যাকরণ পড়ে নিজের মত করে চর্চা করতে থাকি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত চেষ্টা করেই যাচ্ছি, পরিপূর্ণ শুদ্ধতা অর্জন করতে পারি নি তবে, কিছু সুফল পেয়েছি। বানান বিষয়ে আমার অর্জিত অভিজ্ঞতা ও অনুসারিত কৌশলসমূহ পাতার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার মানসেই মাঝেমাঝে পাতায় একই শিরোনামে আরো ৭টি পোস্ট দিয়েছি। কেউ কেউ উপকৃত হয়েছেন জানিয়ে আরো লিখার আহ্বান জানিয়েছেন। তাই কৌশলগুলো ছোট ছোট ‘টিপস্’-এর মত করে পোস্ট দিচ্ছি:
আজ মাত্র ৫টি ‘টিপস্’ নিয়ে আলোচনা করব:
১) ‘রেফ’-এর পর দ্বিত্ব হবে না
২) শব্দের শেষে (ঃ)‘বিসর্গ’ থাকবে কি থাকবে না
৩) (্)হস্-চিহ্নের প্রয়োগ ও বর্জন
৪) ঊর্ধ্ব-কমা যথাসম্ভব বর্জন করা
৫) ‘কি’ এবং ‘কী’-এর ব্যবহার
১) প্রাচীন বানান-রীতিতে ‘রেফ’-এর পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হ’ত। প্রমিত রীতিতে ‘রেফ’-এর পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব ব্যবহার তুলে দেয়া হয়েছে। যেমন; কর্জ, কোর্তা, মর্দ, সর্দার, অর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্তন, কর্ম, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কার্তিক, বার্ধক্য, বার্তা, সূর্য ইত্যাদি।
উল্লেখ্য: ‘য-ফলা’ ব্যঞ্জনবর্ণ ‘য’-এর প্রতিনিধিত্ব করে সুতরাং ‘রেফ’-এর পর আর ‘য-ফলা’ দেয়ার দরকার নেই, অথচ প্রায়ই আমরা এমন ভুলগুলোই করে থাকি। যেমন; সূর্য্য, সৌন্দর্য্য, আশ্চর্য্য, বর্জ্য, কর্জ্জ, সর্দ্দার, পর্দ্দা, অর্চ্চনা ইত্যাদি বানান এখন ভুল বলে বিবেচিত।
২) প্রাচীন বানান-রীতিতে বেশ কিছু শব্দের শেষে(ঃ)‘বিসর্গ’-এর ব্যবহার হ’ত। যেমন: কার্জ্জতঃ/কার্জতঃ, মূলতঃ, প্রধানতঃ, প্রয়াতঃ, বস্তুতঃ, ক্রমশঃ, প্রায়শঃ ইত্যাদি। বর্তমান রীতিতে শব্দের শেষে(ঃ)‘বিসর্গ’-এর ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, তবে পদমধ্যস্থ (ঃ)‘বিসর্গ’ থাকবে। যেমন; নিঃসংকোচ, নিঃসম্বল, নিঃশ্বাস, নিঃস্ব, অধঃপতন, অতঃপর ইত্যাদি। তবে অভিধান-সিদ্ধ হলে পদমধ্যস্থ(ঃ)‘বিসর্গ’-এর ব্যবহারও বর্জনীয়। যেমন; দুস্থ, নিস্পৃহ ইত্যাদি।
৩) ‘হস্-চিহ্ন’(্) যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। যেমন; কাত, মদ, চট, ফটফট, কলকল, ঝরঝর, তছনছ, জজ, টন, হুক, চেক, ডিশ, করলেন, বললেন, শখ, টাক, টক। ‘হসন্ত’ ছাড়া উচ্চারণেই এসব শব্দ স্পষ্ট বোঝা যায়। সুতরাং ‘হসন্ত’ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে, যদি ভুল উচ্চারণের আশঙ্কা থাকে বা উচ্চারণে স্পষ্ট না হয় তাহলে হস্-চিহ্ন(্) ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন; উহ্, যাহ্, আহ্,
এছাড়া; যদি অর্থের বিভ্রান্তির আশঙ্কা থাকে এবং তুচ্ছ অনুজ্ঞাসূচক ক্রিয়াপদে হস্-চিহ্ন(্) ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন: কর্, ধর্, মর্, বল্।
৪) ঊর্ধ্ব-কমা(‘)যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। যেমন : করল (=করিল), ধরত, বলে (=বলিয়া), হয়ে, দু জন, চার শ, চাল (চাউল), আল (=আইল)। উচ্চারণে ভুল হবার সম্ভাবনা থাকলে অথবা ভাব প্রকাশে অস্পষ্টতার ভয় থাকলে ঊর্ধ্ব-কমা(‘)ব্যবহার করা যায়। যেমন; হ’ল(হল/হইল), হ’ত(হত/হইত), ম’ল(মরল/মরিল)ইত্যাদি।
উল্লেখ্য: ‘হল’ ‘হত’ ‘মল’ ইত্যাদি ক্রিয়া-পদগুলোর ভিন্ন অর্থ রয়েছে। কাজেই স্পষ্টতার খাতিরে এ-সব শব্দে ঊর্ধ্ব-কমা(‘)ব্যবহার করা যায়।
৫) সর্বনাম পদরূপে এবং বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ পদরূপে ‘কী ‘শব্দটির বানান এ-রূপ হবে: কী করছো? কী পড়ো? কী খেলে? কী আর বলব? কী জানি? কী যে করি! এটা কী বই (এটা কীসের বই)? কী করে যাব? কী বুদ্ধি নিয়ে এলে? কী আনন্দ! কী দুরাশা!
প্রশ্ন বোঝাতে বা অব্যয় পদরূপে(ি)’ই-কার’ দিয়ে ‘কি’ শব্দটি লেখা হবে। সহজ ভাবে বলতে; 'কি' প্রশ্নের জবাবে যদি 'হ্যাঁ' অথবা 'না' হয়। যেমন; তুমি কি যাবে? কি করবে? আমি কি খাব? কি রূপ আর কি-বা গুণ!
আজ এখানেই থামছি। অন্যদিন অন্যকোন বিষয় নিয়ে আবার হাজির হব। ততক্ষণ সবাই ভাল থাকুন।