বন্ধুরা, পূর্বেই বলেছি; আমি ব্যাকরণের অন্ধি-সন্ধি বুঝি না সুতরাং ও-সব কঠিন বিষয়ে যাব না। নিজে যে ভাবে জেনেছি সে ভাবে নিজের মত করে সহজ নিয়মে বানানের কিছু টিপস্ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি:
লক্ষ্য করলে দেখা যায়; বানানের বেশির ভাগ ভুলগুলো হয় – ই, ঈ, উ, ঊ এবং এদের স্বরচিহ্ন =ি, ী, ু, ূ; তিনটা ‘স’ আর দুইটা ‘ন’ এর মাঝেই। এই ভুলগুলোর মিমাংশা করে ফেলতে পারলে বানানের প্রায় আশিভাগ আয়ত্তে এসে যায়। এ-ছাড়া অন্যান্য বেশির ভাগ ভুলই আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্ট। একটু সতর্ক থাকলে সে সব আপনাতেই ঠিক হয়ে যায়।
আজ ভুলের গুরু ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ আর এদের সংক্ষিপ্ত রূপ(স্বরচিহ্ন)=ি, ী, ু, ূ, ৃ, ে, ৈ, ো, ৌ এবং ‘র’-এর উপস্থিতিতে যে ‘স’ উচ্চারণের এত বায়নাক্কা সেটা দেখি!
ব্যাকরণে আমরা ‘তৎসম শব্দ’ দেখি, সেটা কি? চেনারই বা উপায় কী? তাকে না চিনলে তৎসম শব্দের বানানে যে ‘ষ-ত্ব বিধান’ বলে ‘ষ’-এর ব্যবহারের একটা নিয়মে আছে তা বুঝব না। তাই আসুন আগে ‘তৎসম শব্দ’কে চিনে নিই! তা হলেই ‘ষ-ত্ব বিধান’ কি জিনিস তা বুঝে যাব।
তৎসম শব্দ: তৎসম একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ = তার সমান। অর্থাৎ সংস্কৃত-এর সমান (মানে - খাঁটি সংস্কৃত শব্দ)।
এবার এই সংস্কৃত শব্দগুলো চেনার উপায় খুঁজি(বেশির ভাগ শব্দই ‘ণ’ ‘ষ’ ‘গ’ এবং ‘ঋ’ দিয়ে চেনা যায়):
ণ-যুক্ত শব্দ: তৃণ, চরণ, ব্যাকরণ, গগণ, অগ্রহায়ণ...(বেশির ভাগ ক্ষেত্রে)।
ষ-যুক্ত শব্দ: ভাষা, বৈষ্ণব, নক্ষত্র, মনুষ্য, ষণ্ড...(বেশির ভাগ ক্ষেত্রে)।
গ এবং ঋ-যুক্ত শব্দ: গৃহ, গৃহিণী, কৃষি, ঋষি, নৃত্য...(বেশির ভাগ ক্ষেত্রে)।
এখন তা হলে ‘তৎসম শব্দে’ ‘ষ’ এর ব্যবহারটা কেমন তা দেখি:
স্বরধ্বনির প্রভাবে: ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ এবং এদের সংক্ষিপ্ত রূপ (ি, ী, ু, ূ, ৃ, ে, ৈ, ো, ৌ) এবং ‘র’-এর পরে যদি ‘স’- উচ্চারণ থাকে তা হলে লেখার সময় তা ‘ষ’ হবে। দেখুন:
ই/ি থাকলে = ভবিষ্যত, নিষুতি, ইষণ, ইষু, বিষয়, সরিষা, অভিষেক, প্রতিষেধক, প্রতিষ্ঠান, আবিষ্কার, নিষ্ফল, নিষ্কর, বিষাণ, কৌষিক ইত্যাদি।
ঈ/ী থাকলে = গ্রীষ্ম, জিগীষা, ভীষণ, ঈষ, ঈষৎ ইত্যাদি।
উ- উষ্ণ, উষা, তুষার, দুষ্কর, পুরুষ, তুষ, চক্ষুষ্মান, সুষমা, অনুষঙ্গ, কলুষ, পৌরুষ, মানুষ ইত্যাদি
ঊ/ু থাকলে = ভূষণ, দূষণ, ঊষর, ভূষা, গণ্ডুষ ইত্যাদি
ঋ/ৃ থাকলে = ঋষি, কৃষক, তৃষ্ণা, উৎকৃষ্ট, বৃষ্টি, দৃষ্টি, কৃষ্টি, সৃষ্টি, কৃষ্ণ, তৃষা ইত্যাদি
এ/ে থাকলে = এষণ, এষা, দ্বেষ, বিশেষ, মেষ, শেষ ইত্যাদি
ঐ/ৈ থাকলে = ঐষিক, বৈষ্ণব ইত্যাদি
ও/ো থাকলে = ওষধি, ওষুধ, পোষণ, ঘোষণা, প্রদোষ, শোষা, তোষণ, কোষাধ্যক্ষ, রোষ, শোষণ, কোষ, ইত্যাদি
ঔ/ৌ থাকলে = ঔষধ, পৌষ, কৌষেয় ইত্যাদি
র/রেফ থাকলে = বর্ষা, বর্ষণ, চিকীর্ষা, মুমূর্ষু ইত্যাদি
ট এবং ঠ-এর সাথে যুক্ত হলেও ‘ষ’ হয়:
(ষ+ট)=ষ্ট যেমন: কষ্ট, নষ্ট, স্পষ্ট, তুষ্ট, দুষ্ট, নির্দিষ্ট, উপবিষ্ট, ইষ্ট, অনিষ্ট, আকৃষ্ট, বিশিষ্ট, বিনষ্ট, বৃষ্টি, রাষ্ট্র, প্রবিষ্ট ইত্যাদি
(ষ+ঠ)=ষ্ঠ যেমন: অনুষ্ঠান, ওষ্ঠ, কনিষ্ঠ, কোষ্ঠী, জ্যেষ্ঠ, যুধিষ্ঠির, পৃষ্ঠ, বলিষ্ঠ, ভূমিষ্ঠ, শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি
ব্যতিক্রম: কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে এমনিতেই ‘ষ’ হয়(আমি ব্যাকরণবিদ নই, কারণ জানি না)। দেখুন:
পাষাণ, ষোড়শ, প্রত্যুষ, কষায়, কাষায়, ষণ্ড, ষট্, ভাষণ, আষাঢ়, ভাষ্য, ভাষা, আভাষ, অভিলাষ ইত্যাদি।
আজ এই পর্যন্তই থাক। এবার নিজে নিজে চর্চা করুন ও পরখ করতে থাকুন। আশা করি মাত্র কয়েক দিনেই ‘ষ’ জনিত ভুলগুলোর ৯০ ভাগ সমাধান হয়ে যাবে। পরবর্তীতে অন্য বিষয় নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ ভাল থাকুন। শুভেচ্ছা নিন।