সুলিখিত ও সুখপাঠ্য দীর্ঘ কবিতাটি পড়লাম। সুদীর্ঘ কবিতায় কবি মানবজীবনের মর্মস্পর্শী ও বিচিত্র সব চাহিদা ও অপূর্ণতার কথা তুলে ধরেছেন। যেন আমরা কেবল 'নাই'-এর রাজ্যেই ডুবে আছি। কবিতাটি যেহেতু 'নাই' বিষয়ক, এখানে কেবল অপ্রাপ্তির বেদনাই ভেসে উঠেছে বারবার।
অথচ দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টিয়ে দেখলে দেখা যাবে, মানবজীবন বহু পূর্ণতা ও প্রাপ্তির নেয়ামকেও সমৃদ্ধ। যেকথা কবি আপন লিখতেই প্রকাশ করেছেন এইভাবে -
"কেউ নহে সপ্ত ধনে পঞ্চ সুখে পরিপূর্ন,
নাহি কহে, সরমে সহে, মরমে করে দর্প চূন"
এখানে ('দর্পচূর্ণ' হবে মনে হয়) কবি স্বীকার করছেন, মানবজীবনে 'সপ্তধন' থাকা সত্ত্বেও কেউই যেন 'পঞ্চসুখে' সুখী নয়। বস্তুত জীবনে অনেক পূর্ণতা ও প্রাপ্তি সত্ত্বেও পৃথিবীতে কেউই absolute সুখী নয়।
প্রবীণ কবি আবু হক মুসাফির ভাব ও ভাবনায় সমৃদ্ধ একজন প্রাচীন ধারার স্বভাবকবি। তিনি যা কিছু বলেন, যা কিছু লিখেন সবই যেন অবলীলায় কবিতা হয়ে ফুটে উঠে। তাই তিনি শত শত লাইনের দীর্ঘ কবিতা লিখতে পারার মত বিরল গুণের অধিকারী। অথচ আমাদের পেটে বোমা মারলেও দশ বিশ লাইনের কবিতা বের হতে চায় না। ভাবতে বসলে ভাব আসে না অথচ কবি যেন অফুরন্ত ভাবের সাগরেই সাঁতার কাটছেন। তাঁর সাবলীল বর্ণনাময় কবিতায় রয়েছে বিপুল ভাবের সাদামাটা প্রকাশ যা কবির সাদা মনেরই পরিচায়ক।
রূপক উপমা ও চিত্রকল্পের ব্যবহার ছাড়াও সাদামাটা ভাষায় যে কী সুন্দর কবিতা লিখা যায় তা কবির কবিতা পড়লেই বোঝা যায়। প্রাচীনপন্থী মানুষ হিসেবে কবির ভাষা ও বানানে প্রাচীনত্বের গন্ধ পাওয়া যায়। হাল আমলে ভাষা ও বানানের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একমাত্র নিবিড় পাঠ ও পুন পুন চর্চায়ই কেবল তা আয়ত্তে আনা সম্ভব। কবি সেই বিষয়টিতে নজর দিলে ভাল করবেন আশা করি।
পরিশেষে, কবির সুন্দর কবিতার জবাবে ক'চরণ প্রিয় কবিকেই উৎসর্গ করছি -
'নাই'এর রাজ্যে আমরা সবাই
গড়ছি তো ভাই জ্বালাময়ী বিশ্ব
ত্যাগহীন বিলাস আর ভোগের নেশায়,
'সুখের অসুখে' কাতর; হয়ে যাচ্ছি নিঃস্ব।
সমৃদ্ধতর কাব্য রচনার জন্য কবিকে আন্তরিক অভিনন্দন। কবির সুস্বাস্থ্যের দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।