'কোজাগরী' মানে শরতের ভরা পূর্ণিমার রাত। বছরের সবচেয়ে আলোকোজ্জ্বল রাত এটি। এর আক্ষরিক অর্থ “কে জেগে আছে?” আশ্বিনের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত লক্ষ্মীপূজাকে যথাক্রমে কোজাগরী পূর্ণিমা এবং কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা বলা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এই রাতে ধনসম্পদ, প্রাচুর্য, সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্মী বিষ্ণুলোক হতে পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং জানতে চান - “কে জেগে আছে?" তিনি আজ বর দিবেন। সুতরাং বিশ্বাসীদেরকে লক্ষ্মীর বর পেতে কোজাগরী রাতে জেগেই থাকতে হয়।
কবি মনোজ ভৌমিক (দুর্নিবার কবি) বরাবর পরিশীলিত কাব্য চর্চা করেন। শব্দ গরিমায়, ভাব বক্তব্যে তাঁর কবিতা সমাজ সচেতন ও সময়ের কথা বলে। শারদ পূর্ণিমার কোজাগরী রাতের প্রেক্ষাপটে কবিতা লিখতে বসে প্রিয় কবি এক কঠিন মানবিক প্রশ্নের অবতারণা করেছেন।
কবি দেখতে পান - "...জেগে থাকে ফুটপাতে অসহায় মানুষের দল"। সুতরাং কেবল কোজাগরী পূর্ণিমা রাতে ভাগ্যলক্ষ্মীর বর পেতে নয়, দুর্গত মানুষের দুর্ভোগের ভাগিদার হতেই যেন জেগে থাকা জরুরি। তাই কবি বলেন -
"তোমরা বললে,"কোজাগরী পূর্ণিমা" জাগতে হয়।
কাল বলবে,"শিবরাত্রি" ঘুমোনো নয়"
সারা বিশ্বে সংগঠিত মানবিক বিপর্যয়ের মুখে আজ মা লক্ষ্মীর বর পেতে নয় বরং মানবিক দুর্যোগে চোখের ঘুম হারাম হবার সময় এসেছে। এমন কি, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মুহূর্তের ভুলে কখন যে এই গ্রহটির অস্তিত্বই বিপন্ন হবে তার ঠিক নেই। কাজেই এখন আর ঘুমানো নয়, জেগে থাকার পালা। তাই কবি কবিতার নাম দিয়েছেন "এবার জেগেই থাকতে হবে" মানবিক চেতনা জাগানিয়া কবিতার শিরোনাম যুক্তিযুক্ত হয়েছে।
দরদি কবির চোখ ঘুরে অশান্ত উত্তপ্ত বিশ্বের আনাচে কানাচে, পথে প্রান্তরে। দেখতে পান; বিশ্ব যেন আজ আত্মদহনে জ্বলছে। সর্বত্রই চলছে মারামারি কাটাকাটি আর ক্ষমতা বিস্তারের দম্ভ। ইরাক কাশ্মীর পাকিস্তান সিরিয়া আফগানিস্তান স্পেন ফ্রান্স ইংল্যান্ডের মানুষজন কেউই শান্তিতে নেই। বাংলাদেশে বিতাড়িত রোহিঙ্গা কিংবা আরাকানের রোহিঙ্গারা কেউই আজ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। সর্বত্রই যেন আজ প্রাণের আহুতি চলছে। তাই নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের কষ্ট দুর্ভোগের সহমর্মী হতে কবি আর ঘুমাতে চান না। কবি সাব্যস্ত করেন -
"আর ঘুমোবো না বন্ধু, এবার জাগাটাই হবে সমীচীন"
কোজাগরী পূর্ণিমাকে উপজীব্য করে এমন দরদি লেখনী উপহার দেয়ার জন্য প্রিয় কবিকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।