"বদলায় না"
- আর্যতীর্থ
সুগঠিত সুন্দর এই কবিতাটির শেষ চরণ - "বদলায় নি, বদলায় না আমার দেশের প্রাত্যহিকি"কে মূল প্রতিপাদ্য করেই আমার এই আলোচনা:
প্রচণ্ড দাবদাহের ভয়াল থাবায় জনজীবন এখন সন্ত্রস্ত। লু হাওয়ার অগ্নি-বর্ষণে অতিষ্ঠ তাবৎ প্রাণীকুল। হাস-ফাঁস গরমে রাতভর ঘুম নেই দু'চোখে। সুতরাং, কবিতা পাতার আশ্রয়। আসর কবি আর্যতীর্থের এমন সুন্দর কবিতা পড়ার পর দু'কথা না লিখে কি থাকা যায়? অথচ এই মুহূর্তে হাতের কাছে পিসি'র সুবিধাটিও নেই। অতএব, মোবাইল ভরসা, মোবাইল টিপেই লিখতে হচ্ছে।
প্রযুক্তি আমাদের অনেক সুবিধা দিয়েছে; ফলে গরমের তালপাতা আজ যাদুঘরের শোভা বাড়াচ্ছে। এমন কি বৈদ্যুতিক পাখাও এখন সেকেলে হতে চলেছে। প্রচণ্ড গরমে শান্তি-স্বস্তির প্রয়োজনে (তারও বেশি বহুজাতিক বানিজ্যিক বিপণনের স্বার্থে) তাপানুকূল যন্ত্র এখন প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করছে। ধনী গরীব নির্বিশেষে সবাই প্রযুক্তির ভক্ত স্তাবক।
তপ্ত দুপুরের এই ভাত-সেদ্ধ গরমে যখন মিনিটকেও প্রহরের মত লাগে এমন দিনে স্বভাবতই কেউ পারতপক্ষে বাইরের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইবে না। সবাই নিশ্চয়ই আরাম চাইবে! কবি খুব সুন্দর কাব্যিক ঢঙে কথাটি এভাবে জুড়েছেন - "কে চায় বাপু বিদ্ধ হতে গরমভূতের নখ আঁচড়ে"। সত্যি, এই গরম ভূতের নখ আঁচড়কে সবারই বড় ভয়!
সত্যি, অন্তর্জালিক সুবিধার কল্যাণে এখন চাঁদি-ফাঁটা গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে করতে হ'ত এমন অনেক কাজই 'অনলাইনে' করা যাচ্ছে। চাল সব্জি কেনা থেকে ট্রেন বিমানের টিকিট কাটা অনেক কাজই ভাগ্যবানরা ঘরে বসে করতে পারছি বটে।
একদল ভাগ্যবান যখন ঘরের আরামে বসে অনেক কাজই সেরে নিচ্ছে অথবা নেহায়েত বাইরে গেলেও "চশমা ছাতায় মুখ লুকিয়ে" আত্মরক্ষার প্রয়াস করছে। নির্মম বাস্তবতা; অপরদল দুর্ভাগা খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ তখন সিসা-গলা তপ্ত রোদ মাথায় করে দু'মুঠো অন্ন সংস্থানের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ঘামের নদীতে স্নান করে প্রায় গর্তে ঢুকে যাওয়া আধখানা শরীর নিয়ে দিব্বি তাদের জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, আধুনিক প্রযুক্তির অত্যুৎকৃষ্ট সুবিধাগুলো ভাগ্যবানদের অনেক আরাম দিলেও খেটে খাওয়া ওই দুর্ভাগা মানুষের কোনই উপকারে আসছে না।
আমরা যখন লু-হাওয়ার ভয়ে বাইরে যাওয়ার চিন্তাটুকুও মুলতবি রাখি, একদল দুর্ভাগা ট্র্যাফিক পুলিস তখন "গরম হাওয়ার ধমক খেয়েও" এই কাঠফাঁটা রোদকে উপেক্ষা করে "অনড় অচল" ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে গলদঘর্ম হয়। প্রযুক্তি তাদেরকেও কোন সুবিধা দিচ্ছে না। সুতরাং, প্রযুক্তির আশীর্বাদ সবাইকে সমান সুযোগ দিতে পারছে না। অধুনা জীবনকে প্রযুক্তি যতই বদলে দিক না কেন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অনেক কিছুই বদলাতে পারেনি। সেদিক থেকে কবিতার নামকরণ ও বক্তব্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট।
সুলিখিত ও বক্তব্যধর্মী মানবতাবাদী কবিতাটি পড়ে পাঠককুল নিশ্চয়ই তৃপ্তি পাবেন। এমন সুন্দর কবিতার রচয়িতা কবিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।