শিক্ষক কবি অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেনের "আদর্শ লিপি পড়ি" শীর্ষক কবিতাটি একটা বিশেষ কারণে আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। তাই এ নিয়ে দু'টি কথা বলার তাগিদ থেকেই এই নিবন্ধের অবতারণা। ভুল হলে পাঠকবর্গ ক্ষমা করবেন আশা করি।
কবিতায় সাদামাটা ভাষায় কবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের অবতারণা করেছেন। সুন্দর বিষয়ে কাব্য রচনা করে পাঠককূলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রচয়িতা কবিকে হার্দিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।
আমরা জানি এবং মানি - আদর্শ বিহীন সমাজ দ্রুত অক্ষয়ের শিকার হয়। তাই একজন আদর্শবান শিক্ষক কবি হিসেবে তিনি আদর্শ চর্চার জন্য 'আদর্শ লিপি' পড়ার তাগিদ দিয়েছেন।
আগে শিশুদের হাতেখড়ি হতো 'আদর্শ লিপি'তে।
তখন আদর্শ যেমন শেখা হতো প্রাত্যহিক জীবনে তা লালন করারও তাগিদ ছিল। লালন করা হতো। ফলে সারাজীবন একটা মানুষ যা ই করুক না কেন, শিশুকালের শেখা আদর্শের কথা ও নীতিগুলো জীবনে ও মননে ধারন করে রাখতো। কারো একটু আধটু ভুল বা স্খলন হলেও পরিপূর্ণ নীতি বহির্ভূত হয়ে মহা বিপর্যয় ঘটতো না। এখন যুবকরা তো বটেই শিশুরা পর্যন্ত আদর্শকে back dated culture বলে মনে করে।
আজকাল বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন - যে কারো চেয়ে শিশুরা চিত্তাকর্ষক প্রযুক্তির প্রতিই বেশি অনুরক্ত। ফলে মানসিক বিকাশ মানবীয় না হয়ে হয়ে যাচ্ছে প্রাযুক্তিক, খানিকটা রবোটিকও। এ যে কী ভয়াবহ সর্বনাশ হতে চলেছে সেদিকে যেন কারো ভ্রুক্ষেপ করারই সময় নেই। বস্তুত মানবিকতার মহাপ্রলয় সমাসন্ন প্রায়। বিষয়টি দ্রুত ভাবনার অবকাশ রাখে বৈকি!
অনুমতি হয়, আগামী দু'এক দশকের মধ্যেই সুশীল কাব্যচর্চা বন্ধ হয়ে যাবে, মানবীয় আবেদনময় সাহিত্য ও শিল্পচর্চা বন্ধ হয়ে যাবে। জীবনবাদী গান ও গল্প উপন্যাস নাটককে নতুন প্রজন্ম আদিম প্রহসনের বিষয় বলে মনে করবে (এখনই মনে করতে শুরু করেছে)।
দ্রুত অগ্রসরমান বিজ্ঞান ক্রমে মানবিকতার পর্দাটা ছিঁড়ে ফেলে সেখানে নচিকেতার "it's a game" গানের মত এইভাবেই বিজ্ঞানকে জুড়ে দিবে -
"বোকারা বলে প্রেম/আসলে তা পিটুইটারির খেলা"
বিষয়টি নিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরা কী ভাবছেন জানি না। আবার বাবা-মা'র একক প্রচেষ্টায়ও কিছু করার নেই। সমাজের ভাবনা ও প্রতিবিধানের ব্যবস্থা না এলে বাবা-মাও এখানে বড় অসহায়।
সুতরাং, সবার মধ্যে এ বিষয়ে যত দ্রুত ভাবনা আসবে ততই মঙ্গল। নয়তো আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে উঠবে। ভাবনাটি সবার মননে সাড়া জাগাক - এ ই কামনা।