আশালতা মোর - প্রিয়লতা ওগো, বাবু ’জীবন দাশে’র নাম শুনেছো কি তুমি? ছিলেন কি পরিচিত তিনি, কি’বা চিনতেন তোমায়? তবে কি না বনলতার পাশেই ঠাঁই দিতেন তোমায়। সেই বনলতা সেন - তাকে তুমি চে’ন? হ্যাঁ তো, চেনারই কথা; নামেই মনে হয় সমগোত্রীয় যেন, সমবর্ণের হলেও অবাক হওয়ার নেই কিছু! সেই বনলতা সেন; যার চোখের প্রশান্ত ‘পাখির নীড়ে’ জীবন দাশ খুঁজেছেন - শান্তির আবাস!

আশার লতা তুমি - ছড়িয়ে তোমার লতাপাতা; নির্ভরতার হুড়কো ফুটাও বাতাসের গায়। আশা জাগানিয়া মন্ত্রে ভোলাও মরুচারী পান্থহৃদয়! চোখে কি তোমার প্রশান্তির ছায়াও ধরে? ‘দারুচিনি দ্বীপে’র হদিস জানিনে, দেখিনি তার ছবিও। সেথা হতে তবে এসেছিলে কি হে - যুগান্তরের সখা? ক্ষণ-দরশনে তা-ই মনে হ’ল যেন; যাযাবরী আত্মার!

তখনো মনের গঠন ঠিক পূর্ণ হয়ে উঠেনি; বাক্য-ছন্দের বালকি আবেগে শ্মশ্রু-গুম্ফের উন্মেষণ, ভাবনার শিকড়ে কেবল শিহরণ জাগাতে শুরু। পশমী কোমল লতার ছোঁয়ায় বুঝি পূর্ণতা এ'ল! নব পল্লবের অমন জোয়ারে - কী ভেবে এলে, কেন ই বা গেলে জাগিয়ে আশার আলো? শীর্ণ-দুপুরের জীর্ণ-স্বপনে, কী সে’ বাণী দিয়ে গেলে কানে?

সেই তুমি - আশার মুকুল ফোটানো সখা; রেশমীলতার চামর দুলিয়ে কী মোহচ্ছটা ছড়ালে গো চোখে? মড়া দুপুরের অকাল ঘুমে, দিবাস্বপ্নের খণ্ডনাট্যে ক্ষণিকের অতিথি হলে! এ কি চঞ্চল, সে কি সঞ্চারী দ্যুতি, কেমনে ভুলি তোমার মহেন্দ্র স্মরণ? হাল-ভাঙা নাবিকের মরুবুকে; মালয় সাগর মন্থন শেষে মৌসুমি হাওয়ার খানিক ঝলক! কী সেই যাদুর কাঠি দিলে ছুঁ’য়ে - আর যাযাবর হৃদয়খানা তছনছ হ’ল? সিংহল সমুদ্র্রের নোনাজল স্বপ্নালু চোখে ঝরল কিছুটা সময়!

মুক্ত নোনাজল - সিক্ত উপাধান জুড়ে! প্রশান্তির ছায়া বিস্তারে তুমি ’মোনালিসা’ হলে, প্রহেলিকা হাসি - অন্তর দীর্ণ করে কী নির্মমে তোমার গজেন্দ্র গমন! তিরিশটি বছর পরেও হয় না কি মনে; কেবলই ছুঁয়ে যাওয়া তোমার আঁচল-পরশ - মাধুরিমা সুখ, নিঃশেষ হয়নি এখনো যেন!

সেই যে নাবিক হারিয়েছে দিশা - সিংহল সমুদ্র থেকে মালয়ের পথে; ‘বনলতা’ই দিয়েছিল পথের নিশানা তারে। প্রিয়লতা গো, আশার লতা জড়িয়ে যাযাবরী মনে, মায়ার বর্তিকা হাতে এসেছিলে দেবী হয়ে। যেতে যেতে পথে মোহনমন্ত্রে দিলে ঠিকানা তারে; বেহাল নাবিক তাই আজও খুঁজছে তোমায়।

খরতাপে দগ্ধ চৈতী দুপুরের মুমূর্ষু বেলায় নাবিক তোমার দেখেনি যেন; ’বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগৎ’ কি’বা দিগন্তজুড়া ’সমুদ্র সফেন’! কথিত কি মিথ্যা যা’ - শ্রবণে বাজে; ‘বাবু’ - ’জীবন’ তুলে নিয়েছিলেন আপনারই হাতে?

আমি তো হেরেছি ’লতা; শ্যামলে সজীব চির হরিতের ক্ষেত। কেন তবে মায়াবতী - শ্যামলীমা মুছে যায়, হরিৎ বদলে ঘনায় পাণ্ডুর রঙ? এসো সখা আরবার, শেষ দেখা দিয়ে যাও - তোমার চিত্র চোখেই বিদায় মানি!

________________________
⭐ কবিতাটি "বাইনারি সুখের পিদিম" (পৃষ্ঠা-৩১) কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত।