(কথা-কাহিনী)
হাজার রাত পার করার পর
শেহেরাজাত ধার চাইল গল্প
কারণ তাকে বাঁচতে হবে আমার জন্য
তাকে দিলাম আমার স্বপ্নের গল্পকথা -
আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের কথা
কে না জানে বলুন তো? সবার জানা -
ওই রকম একটা প্রদীপ যদি পেতাম
এই নিয়ে সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে
কখন পৌঁছে গেছি আরব্য রজনীর দেশে
চারিদিক থেকে ভেসে আসছিল সুগন্ধ
অবাক করা সব কান্ডকারখানায়
ভয় ভয় করছিল, ভালোও লাগছিল
বুঝতে পারলাম আমি এখন রাজমহলে
রাজদরবার, পক্ষীরাজ ঘোড়া, নাচমহল
সবকিছুই আছে, কিন্তু মানুষজন শূন্য,
রাতের অন্ধকার বলে কিছুই নেই
অসংখ্য ঝাড়বাতি জ্বালা সাজানো ঘর
সোনা মানিক হীরে জহরতের ছড়াছড়ি
অনেকটা সময় চলে গেলেও
কোন মানুষের দেখা মিলল না
এবার সত্যিই একটু ভয় ভয় করছে
গলা শুকিয়ে মুর্ছা যাওয়ার উপক্রম
এমন সময় চোখ পড়ল পশ্চিমের একটি ঘর
সকল ঘর খোলা থাকলেও সেটি বন্ধ
জানালা দিয়ে মোমবাতির আলো পড়েছে
এগিয়ে দেখি সামনেই জলের কুঁজো
জল পান সেরে দরজা খুলে ঢুকতে যাব
এমন সময় দৈব বাণী শোনা যায়
'আল্লাহ' নাম স্মরণ না করে প্রবেশ নিষেধ
অগত্যা তাই করতে হল আমাকে
ফাঁকা ঘরে মোমের আলোয় পূবের কোণে
দেখতে পেলাম একটি গোল আয়না
আশ্চর্য! বদ্ধ ঘরের সবকিছু ময়লা ঝুলকালি
কিন্তু ওই আয়নাটি একেবারে ঝকঝক করছে
আমি তার সামনে দাঁড়াতেই অবাক হলাম
নিজেকে নয়, দেখলাম নিজের চরিত্রের প্রতিছবি
শুনলাম দৈব বাণী - আমি আকা বলছি
প্রদীপের ক্ষমতা নিঃশেষ হয়েছে
এখন এই আয়নার মালিক আপনি
প্রতিদিন এক ঘন্টা সামনে দাঁড়ান
আর পাল্টে ফেলুন আপনার চরিত্র
ভাবুন, এতো ঐশ্বর্য্য কিভাবে কাজে লাগাবেন
এ কি শুধু আপনার, নাকি অপরেরও?
ভাবুন, আপনি কি একা বেঁচে থাকতে পারবেন
নাকি সমান অধিকারে ভরিয়ে দেবেন সমাজ
আপনার উত্তর এই আয়নার সামনে বলুন,
আমি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম
মাত্র এক মিনিট পরেই প্রচণ্ড শব্দ -
আয়নাটি ভেঙে আমার সারা শরীর রক্তাত
জ্ঞান ফিরতে দেখি হাসপাতালের বেডে
জানা গেল ঠাকুর ঘরের ঝাড়বাতি ভেঙে পড়ায়
আমার শরীরে সামান্য ক্ষতি হয়েছে মাত্র,
যে হাত দিয়ে শ্রমিকদের উপার্জন ছিনিয়েছি
সেই হাতটি নিয়েছে 'আলাদিনের আশ্চর্য আয়না'!
আর তারপর ...? তারপর আর কি !
শেহেরাজাত আবার গল্পের বীজ বুনতে থাকে...