আমি তখন ১৪+, নবম শ্রেণীতে পড়ি। ১৫ই অাগষ্ট স্কুলে নাটক হবে "বিনয় বাদল দীনেশ"। মঞ্চস্থ হতে মাত্র পাঁচ দিন বাকি। সেই দিনই ফাইন্যাল মহড়া। সব ঠিক থাকলেও চা ওয়ালার ভূমিকায় সবচেয়ে কনিষ্ঠ শিল্পী অনুপস্থিত। খবর পাওয়া গেল তার খুবই জ্বর। নাটকের দিনও উপস্থিত হবে তার কোন ঠিক নেই। তাই আমাকেই শেষ মহড়ায় সবকিছু শিখিয়ে দেওয়া হল। সেইমত আমিও সেজেগুজে প্রস্তুত। আজ থেকে প্রায় ৩১+ বছর আগে এমনই এক ১৫ই আগষ্টে প্রথম অভিনয় করলাম নাটকে। সেইদিন আজও মনের মধ্যে জাগিয়ে তোলে " উজ্জ্বল দিনের উষ্ণতা।"
  কবিতাটি এই আসরে প্রকাশ করেছিলাম ১৪.০৮.২০১৫তে। আজ আমার ছয়+ বছরের রুদ্র প্রসাদকে দেখে আরোও একবার মনে জাগল সেই উষ্ণতা। ওর উৎসাহ আর উদ্দীপনা দেখে মেতে উঠলাম ওরই সাথে। ওরাই আমাদের তথা দেশের ভবিষ্যৎ। ওরাই আমাদের প্রেরণা, আমাদের আগামীর কলম। সকলকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভ্র উষ্ণ শুভেচ্ছা।  কবিতাটি আরোও একবার আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম -

উজ্জ্বল দিনের উষ্ণতা

- সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় (পীযূষ কবি)

সেদিনটাও ছিল এমনই এক ১৫ই আগস্ট
সারাটাদিন মুখর রৌদ্রকরজ্জ্বল আবহে
কেটে গেছে বেলা, সন্ধ্যায় ঝকঝকে
আলোয় ভেসে গেছে অন্ধকার ।
আমি তখন নবম শ্রেণীতে পড়ি,
‘‘সেদিন পরনে ছেঁড়া ধূতি আর কাঁধে গামছা
হাতে চায়ের ভাঁড় আর একটি কেটলি
কন্ঠে ‘চায়ে...চায়ে.....গরম চায়ে....।’     
রেল স্টেশনে অনেক লোকের ভীড়
হঠাত্ কালো কম্বলে ঢাকা শরীর থেকে
বেরিয়ে এল কাঁপা কাঁপা একটি হাত
...এক কাপ চা খাওয়াবে ভাই আমাকে...!’     
দেরী না করে তত্ক্ষনাত গরম চায়ের ভাঁড়
হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমি পিছন ফিরতেই
একদল ব্রিটিশ পুলিশ ঘিরে ফেলল লোকটিকে
ধরা পড়ল দীনেশ, বিনয় ধরা দেয়নি নিজেই শহিদ
বাদল হাসপাতালে শুয়ে নিজের মাথার খুলি উল্টে
মৃত্যু বরণ করেছে দেশমাতার স্বাধীনতার জন্য।’’ 
নাটক শেষে যখন বাড়ী ফিরছি তখনও
কেটলিতে কিছুটা গরম চা অবশিষ্ঠ,
হঠাৎ এক দিদি পিঠে হাত রেখে বললেন -
তোমার অভিনয় নিখুঁত হয়েছে ভাই
এভাবেই প্রতিটি মানুষের জীবনে উষ্ণতা ঢেলে দিও।
সেদিন বুঝিনি, আজ ২৫বছর পর বুঝি সে কথার মর্মার্থ!
প্রয়োজন উষ্ণতা, যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছিলাম
গরম রক্তের ফোয়ারার মধ্যে অবিরত স্নাত হয়ে।
আমি খুঁজে ফিরি আজও সেই উষ্ণতা --
দেশ মাতার অস্তিত্ব রক্ষায় আদর্শের উষ্ণতা !