গ্রাম গঞ্জের সকাল যেন পাখির অরণ্য। কিচিরমিচির করতে থাকে নানান প্রজাতির পাখি। খেয়াল করলে বুঝা যায়, শব্দটা আসলে কিচিরমিচির নয়। হরেক রকম পাখির হরেক রকম ডাক। সমষ্টিগত প্রতিধ্বনি 'শোরগোল' হলেও যেটা শুনতেই মনে চায়। এর চাইতে শ্রুতিমধুর শোরগোল আর কিইবা মনে হয়!?

মাঝেমধ্যে মনে হয় পাশ দিয়ে হেঁটে চলা মানুষকে সম্বোধন করে কিছু বলছে। হঠাৎ শব্দ বেড়ে যাওয়ায় মনে হতেই পারে পথিককে উৎফুল্ল সম্ভাষণে সিক্ত করতে চাইছে। যখন সম্ভাষণ মাত্রাতিরিক্ত হয়, তখন তাকালেই বুঝা যায় তারা সকালের নাস্তা নিয়ে কলহে লিপ্ত হয়েছে।

মনোযোগ কেড়ে নেয়ায় খানিক তাদের সাথে সময় কাটানোর অভিপ্রায় হয়। থমকে দাঁড়িয়ে পথিক এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে বহু পাতা বিশিষ্ট গাছের শাখায়। ডালপালার ফাঁকফোকর দিয়ে দৃষ্টিস্নাত করতে চায় প্রত্যেক জাতের অপরুপ সুন্দর পাখিগুলোকে। খোদার কি আপামর দান! একবিংশ শতাব্দীর যান্ত্রিক এই ভূলোকে।

কোন জাতের পাখি ছেড়ে কোন জাতের পাখি দেখবে এটা ভেবেই ভেবাচ্যাকা খাওয়ার উপক্রম। হঠাৎ আটকে যায় দৃষ্টি, নিদারুন কোলাহলে এ দৃশ্যটিই বুঝি সর্বোত্তম। প্রেমিক শালিক ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়ে বসলো প্রিয়তমার বসে থাকা ডালে। ধীরে ধীরে এক-পা দু-পা করে এগিয়ে দূরত্ব কমিয়ে নেয়ার প্রয়াস। ঠোঁটটা সামান্য বাড়িয়ে প্রিয়তমার নিকট চাইছে অনুমতির আভাস।

খানিক ভেবে নিয়ে এক পা এগিয়ে ঠোঁট বাড়িয়ে অনুমতি দিল প্রেমিক পুরুষকে। সে-তো খুশিতে বাগবাগ। অজান্তেই পথিকের ঠোঁটেও জায়গা করে নিল নির্মল মুচকি হাসি। যেন নিরব শব্দে অধিকার খাটিয়ে বলছে, তুমি তো শুধুই আমার; তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি।


বৌলতলী, লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ