জন্ম লগ্ন থেকে শিশুদের বুলি থাকে শব্দ করে কান্না। শব্দের তারতম্যে মমতাময়ী 'মা' বুঝে নেয় সব প্রয়োজনের বন্যা। সময়ের ব্যবধানে শব্দ ভাণ্ডার হার মানে চাহিদার কূট-কৌশলে। নতুন শব্দ যোজনে ব্যর্থতা কুড়ায়, রসনার দেহ ভরে উঠে লালাতুর জলে।
ইশারায় কিংবা ভঙ্গিতে বুঝায় হৃদয়ের অব্যক্ত বুলি রাশি,
অপ্রকাশিত থেকে যায়
না বলা কথাটি, "মা! তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি"।

কর্ণকুহরে বাতাসের প্রভাব ক্ষিণ থেকে অধিক ক্ষিণতর।
তবুও ছটফট করে মনটা, খোকার সামান্য আওয়াজ শুনতে কর্ণ শিরায় চাপ প্রয়োগ করে প্রবলতর।
মা'কে মনের বুলি বুঝাতে কলি মিলানোর ব্যর্থ প্রয়াসে কেটে যায় দিন। খোকার শব্দ না শুনে বিসন্নতায় কাটে, কিভাবে শোধ হবে এই ঋণ?
খোকা-তো কথা বলে না; দু-এক শব্দ শুনে মিলাতে পারলেই বুঝি পূর্ণ বাক্যে রুপ নিত।
কি দোষ হত! বিধাতা যদি হঠাৎ শ্রবণশক্তি দিয়ে দিত?

ছোট্ট ছেলেটা মায়ের গন্ধ শুকে কান্না থামায়। দু-এক শব্দের বুলি শুনতে মা, ছোটুর মুখে সর্বদা কান ঢেকায়।
অত্যধিক বিহ্বলতায় নির্বাক হয় ঠোঁট!
যখন প্রশ্ন শুনে, "মা! তুমি দেখতে কেমন বলো না একটু, যে করেই হোক"⁉️
অধৈর্য অশান্তির ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে ছোট্ট খোকার চোখ। সর্বদা হাতরে সান্ত্বনা পায়, খুঁজে পেয়ে মমতাময়ী মায়ের প্রিয় মুখ।

বাবা-তো মহা জ্ঞানী। তুচ্ছ করতে ছাড় নেই কভু অর্ধাঙ্গিনীর। এই তো কেঁদে শেষ হচ্ছে, এই হয়ে যাচ্ছে দুনিয়ার মহা বীর! কখনও প্রচণ্ড মারধর করছে খেয়ালী স্ত্রী-কে, কখনও দরদাম করে যাচ্ছে ছেলে দু'টোকে বেঁচে দিতে।
সম্বিত ফিরে পেলে দুই উড়ু থেকে দুই ছেলেকে নামানো বড্ড দায়। সোনার টুকরো দু'টোকে কপালে চুম্বনে, কে তার থেকে মুক্তি পাবে, হায়!

অতৃপ্ত ভালো লাগায় ভরে ওঠে আত্মাটা, যখন শুনতে পায় পাগলামি ছেড়ে ভালো হয়েছে একমাত্র ছেলেটা।
যদি কিছু একটা করে সংসারের হাল ধরতে পারে, তাহলে এক-পায়ে ভর দিয়ে রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তি দিতো ছেড়ে।
আবুলের মা গত হয়েছে অনেকদিন হয়, ভিক্ষাবৃত্তি-ই কাল হয়েছিল তার। এতো বড় সংসারের ঘানি টানতে, জীবনের কিইবা মায়া থাকবে, দৌঁড়াতে হবে মহা সড়কের এ-ই পাড় হতে ও-ই পাড়।

বউ-মা অনেক কর্ম করে। তার কর্ম থেকে অকর্ম টাই বেশি। কি করতে পারি? ঠিকমতো কাজ করে না তার কর্ণকুহরের পেশি। পঞ্চাশটি টাকা হলেই দৌঁড়ে যাই সদাই-য়ে। 'এক কেজি চাল দিবে না' বলে সওদাগর দেয় খেদিয়ে। রুটি কলা নিয়ে ফিরে আসি সে'ই রেল লাইনের শেষে। নাতি দু'টির কান্না থামাতে, ফের ছুটে চলি ফকির বেশে।
দুর্বল দেখে দয়া করে কেউ খাওয়াতে চায় ডাল-ভাত।
না খেয়ে পলিথিনে নিয়ে আসি ঘরে, কিভাবে কাটাই বাকি অর্ধ-রাত? ⁉️


❝সহমর্মিতার সংবেদন❞