দাদু- দেখছো দাদু ভাই, ঐ যে দুরে, ঐ যে দেখা যায়-
নাতি- হ্যাঁ দাদু, দেখছি, ঠিক আবছা কাল গাঁয়
দাদু- না দাদু ভাই, ঠিক তার পাশের গুচ্ছ বাড়ী
সেথায়- পুঁতা আছে আমার জন্ম নাড়ী!
নাতি- দাদু, একি বলো তুমি?
এ গাঁয়েতে বাড়ী আর এ গাঁয়েতেই জমি;
তোমার নাড়ী কেমনে ভাসি, গেল সেথায় দুরে!
দাদু- সেই কথাই বলছি দাদু বলছি করুণ সুরে-
নাতি- বলো দাদু বলো, জলদি তাড়াতাড়ি-
দাদু- গুচ্ছ-বাড়ির পাশেই ছিল আমার বাবার বাড়ি
তার পাশেতেই বইত যমুনা, বইত নিরবধি।
নাতি- তার পর- কই গেল সেই নদী ?
দাদু- বলছি দাদু বলছি, শুন মন দিয়ে-
দাদা-দাদি, চাচা-বাবা, ভাই-বোনদের নিয়ে
সুখেই ছিল দিন গুলি মোর মহা উল্লাসে
পঞ্চাশ বছর আগে, বন্যাতে ঐ গ্রামটি ভাসে।
নাতি- কি মজা, কি সুখের কথা-
নৌকা দিয়ে ভাসতাম আর মনে চাইত যেথা।
দাদু- না দাদু না, খুশি হবার নয়, বলার আছে বাকি-
বান-ভাসি হয়ে কাটে ঘরের চালায় থাকি;
একবেলা চিড়া-মুড়ি আরেক বেলা উপোষ
রাতের বেলায় পোকা-মাকড়, আরও সর্প ফোঁস।
নাতি- কি ভয়ংকর কথা! ডরে আমার কাঁপছে বুকখানি
দাদু- কাটল কোন মতে, নেমে গেল পানি-
বাঁচলাম বুঝি হাফ ছেড়ে, আর কি আছে দুঃখ?
কিভাবে সামনে চলা এই যখন লক্ষ;
একদিন এক রাতে, ভাঙ্গন হল শুরু-
পাড় ভাঙ্গনের শব্দ শুনে আইল দাদা-বুড়ো।
নাতি- কি খবর ? কি বললো এসে?
দাদু- তাড়াতাড়ি ভাগো, নদীর পাড় চিড় ধরেছে, এখনি যাবে ভেসে!
নাতি- তার পর- তখন হলো কি?
দাদু- সবাই তখন ব্যস্ত বাচাতে টাকা-কড়ি-
তোমার মতই ছোট্ট ছিলাম, ছিলাম খুব ত্রাসে;
বুড়ো-দাদা কোলে নিয়ে ছুটলো পরবাসে।
নাতি- আর কোথায় গেল বাবা তোমার, কোথায় তোমার মা-
দাদু- (অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে) কেড়ে নিলো সর্বনাশী পাড়-ভাঙ্গা যমুনা।
(চলবে)
এই মাত্র রচিত, ভুলগুলি ধরিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিন।