একটা একটা করে ক্যালেন্ডারের তারিখের পাতাগুলো পাল্টে যাচ্ছে।
এক মুহূর্তেই বর্তমান হয়ে যায় অতীত, আবার স্মৃতির পাঁজর ভেঙ্গে অতীতেরা হয়ে ওঠে জলন্ত বর্তমান।
এমনই এক অতীতের মোড়কে জরানো চির বর্তমান কে আজকের এই খোলা চিঠি।
কেমন আছিস জিজ্ঞাসা করবো না, কারন তোর প্রতিটা মুহূর্তের update আমি রাখি।
না তোর পেছনে কোন গোয়েন্দা রাখনি, এমনকি কখনো কাউকে জিজ্ঞাসাও করিনি তোর কথা।
তবু তোর সমস্ত খবর এসে ভিড় করে আমার মনের জানালায়।
তোর মন এখন প্রিয়জনের বিচ্ছেদে ব্যাকুল, মনের দু-কূল ছাপিয়ে অনুভূতি গুলো এসে জমা হচ্ছে তোর Facebook এ আর whatsapp এর status এ।
তোর মনখারাপের প্রতিচ্ছবিতে মুখরিত তোর নতুন profile।
হ্যাঁ, তোর খবর আমি রাখি।
আমার বিচ্ছিরি মুখটা হয়ত সুন্দর সুন্দর নতুন বন্ধুদের ভিরে হারিয়ে গেছে।
ঝরে পরা ফুলের মতো কিংবা কোন দুঃস্বপ্নর মতো মুছে গেছে আমাদের একসাথে কাটানো কয়েকটা মুহূর্ত আর গুটি কয়েক প্রতিশ্রুতি।
না আমি কথা রাখতে পারনি, আজ তোর মন জুড়ে অন্য জন।
তবে তুই কথা রেখেছিস।
চলতে- ফিরতে, কাজে -অকাজে, খেতে -ঘুমতে এমনকি কবিতা লিখতেও আজও আমার সবকিছু জুড়ে তোর রাজত্ব।
সবকিছুর শেষে যেটুকু সময় বাকি থাকে অনাছে কানাচে থাকা তোর নামটাই চাবুকের মত মনে করিয়ে দেয় তোর স্মৃতি।
হোটেল থেকে মুদি দোকান অথবা স্বয়ং মূর্তিমান্ ভগবান -এতটুকু ভোলবার জো নেই।
ডাক্তার অবশ্য বলেছে তোকে নিয়ে আমার এসব ভুলভাল কল্পনা। হয়ত তুই বলে বাস্তবে কেউ নেই।
আমার এই রোগের নাম সিজোফ্রেনিয়া।
না, এর কোন চিকিৎসা নেই, সহজ কথায় বলতে গেলে আমার নিজের তৈরী স্বপ্নের জালে আটকা আমি।
আমার স্বপ্নরা আসতে আসতে গিলে ফেলবে আমাকে, আমি আর স্বপ্ন।
রাতে আসা স্বপ্নে তুই আমাকে মেরে ফেললেও খোলা চোখের স্বপ্নতে সেরকমটা নয়।
দূরে থাকা তোকে এখন আর আমি miss করি না।
না, ফোনও করি না আগের মত।
কোন এক সময় করেছিলাম ফোন।
ফোনের পর ফোন,
একটিবার কথা শোনার লোভে নম্বর ডায়ল করা ক্লান্ত আঙ্গুল, পরিশেষে মুছতো চোখের জল।
হেরে যাওয়ার কষ্ট থেকে বাঁচতে কম বেশি ছিয়িশি বার তোর নম্বর মুছে ফেলেছি। তবু পরিনি হারিয়ে ফেলতে।
আমার মনের জানালায় এখনো তোর স্মৃতিদের ভীর।
তোকে দেখে রাতের তারারা যখন এসে চুপিচুপি বলে যায় তোর কথা।
তোর ব্যস্ততার কথা, নতুন পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা করার কথা- সাধারণ দেখা, বিশেষ দেখা আরো কতো কিছু।
আমি জ্বলেছি কিন্তু কাউকে বুঝতে দিইনি সে জ্বালার যন্ত্রনা।
আমার শরীর আর আমি ভাগ করে নিয়েছি প্রিয়জনের কাছে থেকেও ধরা না দেওয়ার অনুভূতি গুলো।
অন্য কেউ না বুঝুক আমার শরীর বুঝেছে আমার কষ্টটা।
সময়ের তালে তাল রেখে শরীর হয়ে চলেছে নিথর।
তোর অব্যস্তময় ব্যস্ততা, তোর দুর্গা পুজোয় বন্ধু বাড়ি যাওয়া, নতুন নতুন বন্ধু খোঁজার তাগিদ, তাদেরকে ফোন করা, ভিডিও চ্যাট, দেখা করা, এক সাথে থাকা আরও অন্যকিছু , অনেক কিছু! আমাকে দুমরে মুছরে শেষ করেছে প্রতি মুহূর্তে।
সবার চোখের আড়ালে নিজের মনটাকে নিজের হাতে কেটে, নুন মাখিয়ে, গরম আগুনে ঝলসিয়ে ভালো থাকার অভিনয় করেছি দিনের পর দিন।
আমি সব জানি, খালি চোখে , বন্ধ চোখে আমি দেখতে পাই তোর প্রতিটা মুহূর্তকে। রাতজাগা তারারা সারারাত ধরে তোর কথা বলে আমাকে, আমি রাত জেগে তোর কথা শুনি।
সেদিন একটি তারা জানিয়েছিল তুই দূর্গা পুজোয় এসেছিস, না আমার বাড়ি না তোর বন্ধুর বাড়ি, নতুন বন্ধু। শুনে আমার ভেতরটা কিরকম একটা হিংসায় জ্বলে উঠলো। আমি তারাটাকে খুব করে বকে দিয়ে বললাম "ও আমাকে কথা দিয়েছে, একদিন ও ঠিক আমার কাছেও আসবে"।
ডাক্তারী পরিভাষায় আমার কাছে আর হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা বছর, তারপর পুরোপুরি বাস্তবময় স্বপ্নের দেশ।
বাস্তবতা বড় জটিল, স্বপ্ন বড় মিষ্টি। মৃত মানুষকে জীবিত করা যায় কিন্তু জ্যন্ত মানুষকে মেরে ফেলা যায় না। ব্যস্তময় পৃথিবীর আমি একমাত্র অব্যস্ত জীব যার অফুরন্ত সময় তোকে নিয়ে ভাববার, কবিতা লেখার।
তবে মাঝে মাঝে ভিষন লোভ হয়, মনে হয় ছুটে চলে যাই তোর কাছে, পা দুটো জরিয়ে ধরে বলি " আমি আর পারছি না, আমি কান্ত, আমি পরিশ্রান্ত, আমি আর রাত জেগে তারাদের সাথে গল্প করতে চাই না, আমি ঘুমাতে চাই, আমি শান্তি চাই......!"