সমস্ত দিনের ক্লান্তি নিয়ে বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায়
কাক ভেজা হয়ে বাসায় ফিরলাম
দরজার পাশেই একটি চেনা জানা অঙ্কিত খাম
চিঠিটা তুলতেই বেশ মায়াময়ী ঘ্রাণ পেলাম
সবকিছু ছুড়ে ফেলে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম চিঠি পড়ার জন্য
চিঠির শিরোনামে লেখা খুব সুন্দর করে।  

"প্রিয় অনিকেত"

তুমি কি জানো বর্ষা ঋতু আমার খুব প্রিয়
কদম ফুল ফুটবে বেলিফুল ফুটবে,
চাঁপাফুলের সৌরভে মাতাল হবে চারিপাশের মানুষ,
মুষলধারা বৃষ্টি স্নানে শান্ত হবে হৃদয়-শরীর।
আর আমি শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখবো,
অপেক্ষার দৃষ্টি নিয়ে উপেক্ষিত করুণ প্রহরে ।  

জানো অনিকেত,
শরতের আগমনী কিছু দিন পরেই
তখন আধখোলা জানালার ভিতর দিয়ে একটু সুযোগ পেয়ে
বিকেলের সোনামাখা এক চিলতে রোদ যখন ঘরে ঢুকবে
বইয়ের তাকের উপরে ফ্রেমে তোমার কয়েক'টি ছবি  
আধো আলো আঁধারে কতইনা সুন্দর লাগবে তোমাকে,
আর আমি শব্দহীন নিঃসঙ্গ জানালায় দাঁড়িয়ে
শুধু তোমাকেই খুঁজবো আঁধার উপত্যকায়।

আচ্ছা অনিকেত,
তুমি কি আমাকে এক গুচ্ছ বেলিফুল কিনে দেবে ।  
বেলিফুলের সুগন্ধে মুখরিত হবে ঘর,
আমার মনের সমস্ত উঠোন।
তোমার ভালোবাসার স্পর্শে আমি হতে চাই চিরন্তন নারী,
পরিপূর্ণ নারীত্বের স্বাদে।

আচ্ছা অনিকেত,
তুমি একটা কথা আমাকে সত্যি করে বলতো
তোমার কাছে জীবনের মানে কি ?
শুধুই কি অর্থ উপার্জন করে সঞ্চয় করা ?
অসময়ে নিঢাল শরীরে বাসায় ফেরা ?
আমার জন্মদিনে, বিবাহ বার্ষিকীতে হীরার হার উপহার দেয়া
সুন্দরী বান্ধবীদের সাথে আঁধার ক্লাবে আনন্দ করা.

আচ্ছা অনিকেত,
বলতো তুমি কি কখনো সৈকতে বসে জ্যোৎস্না ঝরা রাতে
ঢেউয়ের বুকে চাঁদের নৃত্য দেখেছো?
বৃষ্টি হবার পরে ভেজা মাটির মিষ্টি সুগন্ধ পেয়েছো?
জমাট বাঁধা মেঘের বুকে হঠাৎ বিজুলীর চমকে
জড়িয়ে ধরার আনন্দ বোঝো তুমি?

অনিকেত, সত্যি বলতে জানো কি --
তোমার মন বলে কিছুই নেই,
উপরের সৌন্দর্য হলেই হয় না, মনটাও সুন্দর হতে হয়
হয়তো তুমি জানো না তোমার বাহিরের সুন্দরের আড়ালে
কতোটা অসুন্দরতা লুকিয়ে আছে।
তুমি ভালো থেকো অনিকেত অনেক অনেক ভালো।  
_____________________
রচনা কাল বৃষ্টি ভেজা সকাল ৯.৪০ মিনিট
১০'এ ডিসেম্বর সোমবার ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ
২৬ এ অগ্রহায়ণ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে প্রকাশ
© Copyright সংরক্ষিত ®