আমি যেন শত বছর আগের উপন্যাস থেকে উঠে আসা সেই গ্রাম বাংলার বুকে শহুরে কোন বাবু। আসলে এদের ভাব দেখে আমার তাই মনে হচ্ছে। হাতে না মেরেও মুখে মারা যায় আবার তিক্ত কথা না বলেও মিষ্টি মিষ্টি কথার ভিতর দিয়ে বুকের হৃৎপিন্ডটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়া যায়।
কিন্তু এরা আমার সথে যে ব্যাবহার করছে তাকে স্বাভাবিক কিছু মনে করবো নাকি, রীতি মনে করবো, না অপমান করবার উচ্চ ধারা মনে করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
অতীতে উপন্যাস পড়ে দেখতাম যে, শহুরে কোন বাবু গ্রামের যে পথ ব্যাবহার করত সেই পথ দিয়া ঐসময় কোন নারী হাঁটার কথা চিন্তাও করতে পারত না। তবে এটাও ঠিক, তাদের বয়স কুড়ি বছরের বেশি ছিল না।
কোন বালিকা যদি শহুরে বাবুর সামনে পড়ে যেতো তাহলে সে সকল লজ্জ্বার উৎস দুই চোখ, দুই হাত দিয়ে ঢেকে পাশ কেটে দ্রুত গতীতে সেখান থেকে চলে যেত। আর গ্রাম্য কোন বধূ যদি শহুরে বাবুর সামনে পড়ে যেত তাহলে তো ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠতো। বাবুকে পাশ কাটাবার কথা মাথায় আসবার আগেই উল্টোদিকের পাশের কোন কন্টকাকীর্ণ পথ ব্যাবহার করতেও দ্বিধাবোধ করত না।
ইহা যে পুরোটাই মাত্রাতিরিক্ত লজ্জ্বার কারনে হচ্ছে তা উপন্যাসের দুই লাইন পড়লেই বোঝা যেতো।
উপন্যাসের কাহিনীতে ফুটে ওঠা ঐরকম লজ্জ্বাবোধ হয়তোবা বাস্তবে ছিল না, তার পরেও তো কথা থাকে তখনকার মেয়েদের মধ্যে যতটুকু লজ্জ্বাবোধ ছিল তা এই সময়ের মেয়েদের কাছে ইতিহাস ছাড়া কিছুই না। এই দেশের মেয়েদের লজ্জ্বাবোধ গুলো ধিরে ধিরে পশ্চিমাদের রীতি-নীতি গুলো গ্রাস করছে।।
পশ্চিমা মেয়েদের দিকে তাকালে মনে হয় এই দেশে বুঝি অনেক গরম পড়েছে আর, আমার দেশের মেয়েদের দিকে তাকালে মনে হয় এই দেশটা বুঝি অনেক গরিব।
আমার বুঝ হওয়া থেকে এই বাঙ্গালি মেয়েদের পরনের কাপড় যতটুকু ছোট হতে দেখলাম আমার মনে হয় আর কিছুকাল পরেই বর্তমান পশ্চিমাদের অবস্থানে উঠে আসবে।
এখন পর্যন্ত যতটা বয়স হলো আর ততটা বয়স পার করলেই হয়তোবা দেখতে পাবো যে, আমাদের মেয়েরা পুরোটাই বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা পশ্চিমাদের অতিক্রম করে হয়তো বলবে, ‘প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ঢেকে রাখবার জন্য তো সৃষ্টি করা হয় নাই। সবার দৃষ্টিকে মুগ্ধ করবার জন্যেই প্রকৃতির এত রূপ, এত যৌবন। তাহলে আমরা মেয়েরা কেন সেই রূপের রানী হয়ে এই দুই টুকরা কাপড়ের নিচে নিজেদের সৌন্দর্য্যকে আড়াল করে রাখবো। যদি সৌন্দর্য্য দেখে উপভোগ করবার জন্য তোমাদের জন্ম হয়ে থাকে তাহলে তোমরা সকলেই দুই চোখ মেলে পলকহিন দৃষ্টিতে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য অকৃপনের মত গ্রাস করতে থাক। পর্যবেক্ষনে দৃষ্টি শক্তি বেড়ে না’।
হয়তোবা তখন নরকের দ্বার আর দুই হাত সামনেই অবস্থান করবে। আমরা হয়তো তা নেশার ঘোরে দেখতে পাবো না।
তবে সেই দিনের কথাই ভাবি আর এই দিনের কথাই ভাবি না কেন, উভয় দিনের রীতি-নীতির সথে বিস্তর তফাৎ দেখতে পাচ্ছি।
অনেক গ্রামেই আমি দেখেছি, লজ্জ্বা করা যেন পাপের মত কিছু হয়ে গেছে। লজ্জ্বা যে নারীর ভূষন এই কথা তাদের মধ্যে মিথ্যা হয়ে গেছে। অবশ্য তাদের দেখে এই ধারনাই আমার মধ্যে বাস করছিল।
কিন্তু এদের মধ্যে হয়তোবা বাড়াবাড়ি রকমের হলেও লজ্জ্বাবোধ আছে। তা খেলা করে রক্তের প্রতিটি কণায় কণায়।
আবার অনেক সময় মনে হয় অতিথিদের সামনে এরা লজ্জ্বাবোধ ফ্যাশানের মত ব্যাবহার করে থাকে। দেখে মনে হয় একটাও কুড়ি বছর পার করে নাই।
শত বছর আগের কুড়ি বৎসর বয়সের মেয়েদের সাথে এই সময়ের এই কুড়ি বৎসর মেয়েদের অনেক মিল নাকি বিস্তর তফাৎ আছে তা বুঝে উঠতে পারছি না।
মাঝে মাঝে মনে হয় এটাই সত্যি হবে যে, আমার দৃষ্টির সামনে হতে এক হাত দূরে সরে গিয়েই হয়তোবা এরা লজ্জ্বার মাথা খেয়ে ফেলবে। কিন্তু এদের সম্পর্কে বোঝারও কোন উপায় নাই। হয়তোবা কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করলেই নতুন কোন রীতির মধ্যে দিয়ে এরা কঠিন কোন রহস্য নিয়া উপস্থিত হবে। যার সম্পর্কে হয়তোবা আমার কোন ধারনাই থাকবে না। তারচেয়ে শতবছর পূর্বের উপন্যাসের কাহিনীই আমার দৃষ্টির সামনে বিচরন করতে থাকুক।
নরকের দ্বার থেকে হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছি এটাই আমার মধ্যে স্বস্তির ভাব এনে দিয়েছে।
--------- ----------
কিছু কথা : দুই বছর আগে আমি রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলার ‘খাগা’ নামের একটা ছোট্ট গ্রামে এক মাস ছিলাম। ঐ গ্রামে থাকা কালিন আমার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তখনই এই বিষয়টা লিখে ফেলেছিলাম। কিন্তু কোথাও প্রকাশ করা হয় নি। তাই আজ এখানে, এই আড্ডায় প্রকাশ করলাম। ঐ গ্রামটার উপর ভিত্তি করেই আমি লিখেছি। কোথাও ভুল থাকলে আপনারা অবশ্যই ধরে দিবেন।