সন্ধ্যার আলো যখন ম্লান হয়ে আসে—দুঃসময়ের স্রোতে,
আমি হেঁটে যাই একা, নির্জন পথে।
নিরুদ্দেশে খুঁজে ফিরি অচেনা কোনো ঠিকানা,
পায়ের নীচে মৃত পাতা, আকাশে বিষণ্নতার বাসনা।
হাওয়ায় মিশে যায় দিকহারা পথের স্ফুরণ,
মেঘের ভাঁজে লুকিয়ে থাকে অজানা কালের ক্রন্দন,
বিপন্ন হৃদয়ে বাজে ভাঙা এক সুর,
আমি এক পথিক, অতিক্রম করে চলেছি দুর্দিনের ক্রুর।
তুমি কি দেখেছো, সেই রাত্রির রূপালি চাঁদ?
যার আলোয় হারিয়ে গেছে আমার ছায়া, হৃদয়ের গুপ্ত নিনাদ!
মাঝে মাঝে মনে হয়, এ পথ কি শেষ হবে কোনো যাত্রা রথে,
নাকি আমি থামবো না—চলবো ধীরে চিরদিন নির্বাক পথে?
পথের শেষে দাঁড়ানো এক প্রাচীন বৃক্ষ, পিছনে রক্তিম রবি,
শেকড়ে জড়ানো কত না স্মৃতি, শরীর তার পরগাছার বেদনা,
আমি দাঁড়াই না, শুধু শুনে যাই তার পত্র ঝরার যন্ত্রণা;
পেরিয়ে যাই অবিরাম—নিথর গাছ যেন আমারই প্রতিচ্ছবি।
আমার সামনে ছড়িয়ে আছে নির্জন প্রভাতে মিশে—
রৌদ্র ছায়ার খেলা আর নামহীন ধুলোর স্তব্ধতা।
আমি শুনি সময়ের কণ্ঠ, যেথায় লীন হয়ে আছে
অতীতের প্রহর, আগামীকাল আর আজকের মগ্নতা।
কোথাও কোনো ডাক নেই, নেই কোনো প্রতীক্ষা,
তবু পথ চলে নিজস্ব গন্তব্যের দিকে—জীবনের কাঁধে সংগ্রাম,
আমি কি খুঁজে পাবো কোনো ক্ষণিক বিশ্রাম,
নাকি এ পথই হবে আমার ধ্রুব অসীম পরিক্রমা?
জীবনের ভাঙা স্বপ্ন আর বিক্ষিপ্ত আশা
এই পথের প্রান্তে পড়ে আছে ভুলে যাওয়া স্মৃতির মতো,
তবু আমি খুঁজে যাই কোনো এক নির্জন বৃষ্টির ভাষা,
যেখানে পাথরের বুকেও খুঁজে পাবো জীবনের চিহ্ন যতো।
একা চলেছি অজানা পথে, কখনো দেখো আমাকে যদি
তবে জেনো, আমার গন্তব্য নেই—আমি খুঁজে ফিরি নিরবধি;
অন্তহীন আকাশের নিচে, কোনো এক অপূর্ণ পূর্ণতা,
যার সীমানা নাই, পথ আছে আর পথিকের সব ব্যর্থতা।
এ পথে কোনো মুগ্ধতা নেই, নেই কোনো উৎসব,
শুধু একাকিত্ব, স্তব্ধতার মহৎসব,
তবু আমি এগিয়ে যাই রুদ্ধশ্বাস প্রাণে
দিকনির্দেশনাহীন পথের পানে, অচেনা স্বপ্নের বানে।
তোমরা যারা আছো এই পৃথিবীর আলোয—হৃদয়ে পূর্ণ মায়া,
তোমাদের জন্য জীবন ভরে আছে ফুলে, ভালবাসায় অশেষ।
আমার যাত্রা তো অন্য, আমি বয়ে নিয়ে যাই সময়ের ছায়া,
একা কালের পথিক, যে জানে না কোথায় তার গন্তব্য শেষ!