ভিখারী
“কোথা গেলি সব কেষ্ট, রহিম সত্বর আয় তোরা,
প্রভাতে সারিব গঙ্গার-স্নান ,দোকানে ফিরিব ত্বরা।
পয়লা বোশেখে খরিদ করিতে ক্রেতারা আসিবে যারা,
‘ক্রেতাই লক্ষ্মী’, গুনীজনে কয়, দোকানের শুভ তারা।
সময় থাকিতে ফিরিতে হইবে স্নান সমাপন করি,
দশ ভিখারীকে দেবো দান-ভার, ভিক্ষা-পাত্র ভরি।
ভিখারীরা সব হাত পেতে লবে, ভিক্ষার হাজার টাকা,
পাঁচ কিলো চাল দেব তার সাথে, পাপ কে রাখিতে ঢাকা”।
সারা বছরের ধূলা ভরা চাল যা থাকে মেঝেতে পড়ি,
রহিম ,তাহা ঝাড়িয়া-বাছিয়া রেখেছে থলেতে ভরি,
সেথা হতে আজ পাঁচ কিলো চাল,রহিম যাইবে নিয়ে,
ভিখারী লহিবে সেই চাল, টাকা পুণ্যের বিনিময়ে ।
স্নান শেষ করি উঠিল মনিব, চাইয়া দেখিল বাটে,
অনাথ, ভিখারী আজ কেহ নাই, ভিক্ষা লহিতে ঘাটে।
চিন্তিত আজি দাতা মহাশয়, কাহাকে করিবে দান ;
কোন সে ভিখারী, ভিক্ষা লইয়া, করিবে যে মহীয়ান?
মনিবের গ্নানি মুছিবার লাগি ভিখারী হইবে ত্রাতা,
ভিখারী লইবে পাপ গুরুভার,মনিব হইবে দাতা ।
হটাৎ দেখিল, ঘাটের এক কোনে, বসিয়া অন্ধ জন,
ছুটিল মনিব , ভাবিয়া ভিখারী দানিতে তাঁহাকে ধন।
উচ্চ কণ্ঠে কহিল মনিব, ‘ওহে , ভিক্ষা পাত্র কই ?’
কহিলা অন্ধ , ‘ভুল ভাবিয়াছ ; আমি ভিখারিনী নই।
সন্তান মোর গিয়েছে কর্মে আমি বসে আছি একা,
দিনর শেষে তহারা ফিরিবে আবার হইবে দেখা।
তাদের শ্রমেই অন্ন আমার ; ভিক্ষার নাহি প্রয়োজন,
তোমার দান ভিখারীর ধন, যাহা করিয়াছো আয়োজন’।
মনিব আসিল ফিরি,
দানের লাগিয়া চিন্তার জাল ফেলিল তাহাকে ঘিরি।
রহিম আসিয়া শুধালো মনিবে, “কোন ভয় নাই মনে,
ভগবান নিজে প্রেমের ভিখারী, সবাই সে কথা জানে ।
প্রেম ভরি আজ ভিক্ষার ডালা, ফেলুন গঙ্গার জলে,
পূরণ হইবে মনের ইচ্ছা, এ কথা পুরাণে বলে” ।
বলিল মনিব সব কথা শুনি, বলিল নিম্ন স্বরে,
“ভিখারীর লাগি আমি যে ভিখারী বুঝিয়াছি অন্তরে।
সুযোগ দিয়েছে সকল ভিখারী , ভিক্ষা করিতে দান,
ভিখারী নিজে বড় এক দাতা, দাতাদের মাঝে মহীয়ান”।
লেখক-নিশিকান্ত দাশ
তাং-৩০-০৮-২০১৭