মামা আমার মামিমা কোথায় ?
পাবেনা খুঁজে সোনা যে আছে সেথায় ।
জানো পথের নিশানা এগিয়ে যাওয়া,
বুকের ওপর হেটে তার হল না কিছুই পাওয়া ।
কি গো মামা যেটা তুমি পেলে না ?
একটা সঙ্গি যে করল শুধুই ছলনা ।
জানিস সোনা বলেছিল আমায় -
শত কষ্টেও থাকবে পাশে ,ছাড়ব না তোমায় ।
হঠাৎ একদিন অফিস থেকে ফিরে,
দেখি তুলসী পাতা চোখে নিয়ে যায় তাঁরে ।
মোর হাজার চিৎকার করা বারনেও থামলো না ,
একাই চলে গেলো , ‘করল শুধুই ছলনা’।

যাবার কালে তোমায় কিছুই বলেনি ?
‘না সোনা’ এমনটা করবে কখনো ভাবিনি ।
তাহলে কেমনে বুঝলে মামা, মামি তোমায় ভালবাসে ?
শুনবি সোনা , আয় তবে শোন আমার পাশে বসে ।
বছর কয়েক আগে আমি ছিলাম বেকার ,
কোথাও তাকে দেখেছি চোখের দেখার ।
পড়াশোনা শেষ নয় , কাজও ছিলনা,
তবে তাকে দেখে মন হয়েছিল আনমনা ।
পড়াশোনার কাজে একদিন বাস স্ট্যান্ডে,
চোখে চোখ পড়ল,  দিনটি ছিল সানডে ।
অফিস যাত্রীদের ছুটি , অনেকেরই কাজ বন্ধ ,
বাস টি সেদিন ফাঁকা, ভাবলাম কথা বললে হয় না মন্দ ।
কিন্তু সাহসের অভাবে , ছোট্ট চিরকুটে ,
লিখলাম পাখি কি নাম তোমার বটে ?
সেও লিখল ‘কি দরকার?’ তারি উল্টো পিঠে ,
ছুড়তেই পারা খেলো কয়েকটা বুটে ।
এক স্ট্যান্ডে নেমে গেলো তোমার মামি ,
সেদিন বহুকষ্টে চিরকুট টা তুলেছিলাম আমি ।

মামা , তারপর আবার দেখা হল কবে ?
ভেবে বললাম , এই সপ্তা খানেক হবে ।
জানিস সোনা ভাবত তোর মামিও ,
‘কবে দেখা হবে’ যেমন টা ভাবতাম আমিও ।
সেদিন কলেজের নবীন বরণে সাহস করে এগিয়ে গিয়ে ,
ফিরে এলাম একটা চিরকুট নিয়ে ।।
চিরকুট টা খুলিনি তখন, একটু ভয় ভয় করে ,
কিন্তু খুশিতে প্রান খুলে নাচলাম বাড়িতে ফিরে ।

এত খুশি মামা বলো বলো , কি  লিখেছিল তাতে ?
ভালবাসে আমায় বুঝলাম চিরকুট টা খুলে রাতে ।
জানিস তো ছিল উত্তরের আশায় ,
এভাবেই চলেছে চিরকুট ছোড়াছুড়ি , প্রেম প্রেম ভাষায় ।
বছর খানিক মেলা মেশায় , দু মাস না দেখতে পাওয়ায় ,
তারপর দেখা হল তারই বাসায় ।।

একটু অবাক হয়ে , কি করে হল মামা সেটা ?
হ্যাঁ রে মা ফেরৎ দিতে গিয়েছিলাম চিরকুট কটা ।
জেনেছিলাম পরে - ওরা খুব ধনী ,
আমি থাকি তাবুর ঘরে । বল কি করে মানি !
এটাই ছিল কারন ছাড়াছাড়ির জানতে পেরে,  
বেড়িয়ে আসলো তোমার মামি তার বাবা-মাকে ছেড়ে ।
চললাম তাকে নিয়ে গ্রামের শিতলা মন্দিরে,  
রাঙিয়ে দিলাম সিথে, সিঁদুরে সিঁদুরে ।।

মেনে নিল না আমায় তার বাবা-মা ,
তোর দাদু বলল ঘরে নিয়ে আয় বউমা ।।
কিছুদিন কষ্ট পেলেও তোর মামি ,
পরে খুশি হয়েছি সবাই , তাতো আমিও জানি ।
অভাব অনটনের মাঝেও ছিল অনুরাগ ,
চিরকুটে কথা হত , তবুও কষ্ট ছিলনা এক দাগ ।
হঠাৎ একদিন বাড়িতে এল কাকু পিওন ,
চিঠিটা পেয়ে খুশির অশ্রুতে ভরেছিল নয়ন ।

বাবা, এত খুশি , কিছিল মামা সেটা ?
সেতো join letter, সরকারি ছিল চাকরিটা ।
ধীরে ধীরে গড়লাম এই প্রাসাদ ,
সবই হল রাগ, অভিমান, সুখ আর খুশির আল্লহাদ।

বুঝলাম , তবে মামি কেন বা কোথায় গেলো?
বেঁচে নেই সোনা , বহুদুর গেছে চলে।
সব ছিল মা-বাবা-ভাই-বোন সে আর আমি ,
কিন্তু ছিলনা একটা ছোট্ট সোনামণি ।
হঠাৎ একদিন , বলল ডেকে আমাকে ,
বিয়ে করো, আর খুশি করো সকল কে ।
সেকথা শুনে কষ্ট পেয়ে মনে , ডেকে তাকে বললাম ,
এটা নয় সম্ভব , এই আমি অফিস চললাম ।।
কত রাত জেগে বালিশ ভিজিয়েছে কেঁদে ,
কিছুই করতে পারিনি শেষে , হাজার ডাক্তার –কবিরাজ  দেখিয়ে ।।

একথা শুনে দেখি জল যে আমার ভাগ্নির চোখে ,
শত চেষ্টার পরেও যখন আনতে পারিনি তাকে,
তাইতো সে আনতে বলেছে তোকে ।।
আর লিখে গেছে ছোট্ট চিরকুটে ,
                      ‘ওগো ভালবাসি তোমাকে’।।