সেদিন কলেজ থেকে ফিরছি একা
এক অন্তহীন প্রেম , এমন টা প্রথম দেখা।
দুজনেই মধ্য বয়সী,
আলাদা হলেও বুঝলাম বেশ সাহসী।
প্রথম প্রথম বুঝিনি তাদের ভাষা ,
পরক্ষণেই জানতে পারি তাদের সব স্বপ্নই বৃথা ।
কথায় কথায় তারা পৌঁছে পুরাতনে ,
জিজ্ঞাসায় লোকটিকে পড়ল মনে আমায় এতদিনে ।
জানো সেদিন অনেক কেঁদেছি একাই ঘরে,
যেদিন ভেঙেছিল সব ওই দমকা ঝড়ে ।
দোষ তোমার নয়, তোমার বাবার নয়,
এখনও ভাবি দোষী আমি আর ওই সময় ।
তাদের ওই বছর কুড়ি আগের আলাপে,
আমি যে তা শুনি কান পেতে লুকিয়ে ।
ভালো থেকো ওগো আর মনে করোনা আমারে,
উঠে দাঁড়ালো এইবলে , লোকটি নামবেন মদনপুরে ।
তাকিয়ে জানলা দিয়ে চোখের কোনে জল রেখে ,
যতক্ষণ পারে ভেবে দেখে নেবে তারে ।
তেমনই সেই ধারা যেমন শ্রাবনে ঝড়ে,
আমি তাকিয়ে তার দিকে নীরবে , খুব জানতে ইচ্ছা করে !
কেমন যেন সাহস করে বলি দিদি...
জল কেন আপনার চোখে ,কি হয়েছে বলতেন যদি !
বলতে তিনি রাজি নন আসলে।
বললাম দিদি …
আমি কবি নই নই লেখক মানে সকলেই,
তবুও ইচ্ছা করে খাতা বন্দি করতে সত্য কাহিনী গুলকে ।।
আমি রিমা বয়স তখন আঠারো মাত্র-
নিলয়ের বাইশ , ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র ।
একদিন সকালের বাসে মায়ের সাথে,
দেখা হয় প্রথম ওর সাথে, একগুচ্ছ খবরের কাগজ হাতে ।
বুঝি প্রথম দেখাতেই পড়েছেন প্রেমে ,
লাজুক হেসে হ্যাঁ ভাই ...
সেদিনিই জায়গা করে নিল মনের আসনে ।
বিল্টু দার বাড়িতে সেদিন উচ্চ মাধ্যমিকের নোট আনতে,
আবার দেখা হয় ওই পেপার বালার সাথে ।
সন্ধায় ছাত্র পরানো আর সকালে নিলয় পেপার বেঁচে ,
শুনি বিল্টুদার মুখেই ও খুব ভালো ছেলে ।
একদিন আমিই সাহস করে চিঠি লিখি তারে,
'ভালবাসি তোমারে' পছন্দ হয় কি মোরে ?
নিধুর কণ্ঠে – আমি খুব গরীব – মিলবে না গো তোমার সাথে,
চিঠি পেয়ে বলে একথা বিল্টুদারই বাড়িতে ।
সবেতেই রাজি হয়ে , আমি হাত রাখি তার হাতে ,
এক ছোট্ট স্বপ্ন গড়ে বছর পাঁচেক তার সাথে ।
তখন বয়স তেইশ বাবা দেখছে ছেলে,
দিন ঠিক করে আমায় বিয়ে দেবে বলে ।
না বলাতেই খুঁটিয়ে জেনে নেয় সব ,
বলেন তিনি সম্ভভ নয় ; বন্ধ করো এসব ।
হঠাৎ একদিন ডেকে বিল্টুদার বাড়িতে ,
এসেছিল নিলয় সব সম্পর্ক ভেঙ্গে দিতে ।
নোনা জলের নদীতে স্বপ্ন ভাঙা তরী তে ,
সবকিছু ছিঁড়ে নববধূ সেজে গিয়েছিলাম অন্যের ঘরেতে ।
আজ কুড়ি বছর পরে হঠাৎ দেখা বিধান নগরে,
জানলাম চাকরি করে ও ওই শহরে।
কিন্তু জানো ভাই আজও লুকাতে চেয়েছে নিজেকে,
আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে থাকে ।
পেছন থেকে ডাকতেই বলে সেই মৃদু স্বরে,
আরে রিমা কেমন আছো? দেখলাম তোমায় অনেক দিন পরে।
প্রথমেই শুধাই তারে কেন এমন করলে ??
উত্তর টা নিখোঁজ বলতে ছাইছে না ও আসলে ।
হঠাৎ হেসে উঠলাম তার হাত টি ধরে ,
ওই তো পাক ধরেছে চুল কমেছে ঝোড়ে ।
অনেক কথার পরে নিলয় মুখ খুলল শেষে,
বেশ কয়েক ফোঁটা জল ঝড়িয়ে চুপচাপ বসে ।
রিমা সেদিন ছেড়ে গেছি তোমারে নিজস্বার্থে,
চাকরির লোভ দেখিয়ে ছাড়িয়েছে তোমার বাবা যে ।
আজ আমি অনেক ছোটো তোমার নজরে,
খুশি শুধু নামিয়ে কুড়ি বছরের বুকেচাপা পাথরটারে ।।
জানো ভাই বলে গেলো ও শেষে ___
'নির্মল মন তোমার,সুমধুর হাসিতে এখনো সোনার ঝর্ণা ঝরে ,
ক্ষমা করোনা কখনই ওগো এই বেইমান শয়তানটারে।।'