আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল,
তুই তখনও ছিলি আমার স্বপ্নে ।
আমি পাঁজর খুলে বলেছিলাম তোকে,
আমার বুকে যা আছে তুই সব নে ।।

আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল,
তুই তখনও ছিলি মায়ের ভ্রূণে ।
আমি অস্ত্রজ্ঞানে আড়াল করে তোকে
তীর বানিয়ে রেখেছিলাম তূণে ।।

আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল,
তুই তখনও ছিলি জন্ম-আশায় ।
তোকেই যখন বড় করে দেখেছিলাম বলে
সঁপিনি মন নারীর ভালোবাসায় ।।

আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল,
তুই পরের ঘরে বন্দি ছিলি, মা গো ।
আমি ঘর সাজানোর স্বপ্ন নিয়ে আসা
সুবর্ণাকেও বলেছিলাম, -- না গো ।

আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল,
অস্ত্র তুলে নিয়েছিলাম হাতে ।
যুদ্ধ করতে গিয়েছিলাম দূরপাহাড়ী বনে
যদিও সায় ছিল না হত্যাতে ।

আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল,
টগবগে লাল রক্ত ছিল বক্ষে ।
তখন তোকে নরক থেকে মুক্ত করা ছাড়া
আর কী শ্রেয় হতো আমার পক্ষে ?

আমার যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল,
বিজয়-গর্ব ছিল না তোর স্বরে ।
আমি তোকে বিজয় দিয়ে বিজয়বতী করে
দিয়েছিলাম ষোলই ডিসেম্বরে ।

এখন যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হলো তোর,
আমি তখন তোকে রেখে পঞ্চাশে দেই দৌড় ।
রজতে নয়, সুবর্ণতে এ-দৌড় হবে শেষ,
তখনও তুই থাকবি আমার শিয়রে বাংলাদেশ ।


(কাব্যগ্রন্থঃ শিয়রে বাংলাদেশ, প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি বইমেলা ১৯৯৮)