ভাবিনি দেখবো কোনোদিন।
রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত ক্যামেলিয়া কবিতায়,
বহু-চেষ্টায় একবার একখানা কল্পনায় ফুটেছিলো বটে।
এই বিশ্বতল্লাটে তাকে বাস্তবে দেখিনি কখনও।
আমার প্রথম ক্যামেলিয়া দেখা হলো মেলবোর্নে।
দেখলাম তুহিন ও শিল্পীর গৃহপ্রাঙ্গণে
আমার সমান উঁচু গাছে, সবুজ পাতার আড়ালে
ফুটে আছে এক জোড়া সাদা ক্যামেলিয়া।
আমার চুলের মতো ধবধবে সাদা স্বর্গফুল।
শুধু সাদা নয়, দেখলাম ক্যামেলিয়া লালও হয়।
কিছুটা হলুদও যে হয়, তাও দেখা হলো পরে,
আমার হারানো প্রিয়া, মৈত্রেয়ী যখন আমাকে
মেলবোর্ন থেকে কিছু দূরে, প্যান্টন হিলে
পরদিন তুলে নিয়ে গেলো ওর নির্জন ছবিঘরে।
পঁয়ত্রিশ বছর পরে, বাগান থেকে তুলে
একটি সাদা ক্যামেলিয়া আমি পরিয়ে দিলাম
ওর আজও দীর্ঘ, আজও ঘন-কালো চুলে।
ঢাকায় ওকে দিয়েছিলাম লাল কৃষ্ণচূড়া,
মেলবোর্নে মিললো ওর চুলের যোগ্য ফুল।
পাহাড়লুকানো কালোচুল সাদাফুলে মিশে,
ওর বয়সটাকে মুহূর্তেই ফিরিয়ে দিলো বিশে।
ওর সঙ্গীতজ্ঞ অস্ট্রেলীয় স্বামী রবী গ্রেইগ
ক্যামেরায় বন্দি করলেন ঐ মুহূর্তের ছবি।
বললেন, ‘শি লুকস গ্রেট উইথ ক্যামেলিয়া’।
আমি বললাম, ‘একদিন সে ছিলো আমার।
সে ছিলো আমার ‘চৈত্রের ভালোবাসা’,
ছিলো আমার বিভুঁই বিষ্ণুপ্রিয়া।
গ্রেইগ বললো, ‘সিমস ইউ স্টিল লাভ হার।’
আমি বললাম, ‘কী জানি! হতেও পারে।
প্রেম কি কখনও জীবনের পিছু ছাড়ে?
প্রেমিকার পতিগৃহে পুরনো প্রেমিক আমি,
আমি এসেছি দণ্ড দু’য়ের তরে।
‘সাহিত্যবাসর ফুরালেই ফিরে যাবো দেশে।
তবে হ্যাঁ, দিনশেষে নিশ্চিত পড়বে মনে
মেলবোর্নে দেখা জীবনের প্রথম ক্যামেলিয়া,
মৈত্রেয়ী, প্যান্টন হিল, প্রিয় অস্ট্রেলিয়া।’