নিয়ামদোরিগারাভ (Nyamdorjgarav )
যদিও মঙ্গোলিয়ান কবি কিন্তু লেখেন ইংরেজিতে। পিতার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। পনেরো বছরে মাতৃহীন এই কবি বলেন,“ আমি তো অনাথ। মৃত্যুকে গ্রহণ করেছি আমার শেষ রোমান্স হিসেবে। এখন গান গাই বেঁচে থাকব বলে। ” তাঁর কবিতার জানলা  দিয়ে যদিও আমরা মঙ্গোলিয়াকে দেখতে পাই,কিন্তু তিনি মঙ্গোলিয়াকে হাজির করতে চান মঙ্গলিয়ার সীমানা পার করে বিশ্বের  দরবারে।
আঠারো বছরে  শুরু করেন কবিতা রচনা - তাঁর বেঁচে থাকার গান। প্রথম রচনা শেষ করতে সময় নেন পুরো একটি বছর। ভাবা যায় না একবছর ধরে একটা কবিতা লিখেছেন!!! তাঁর নিজের ভাষায় একটি স্বর্গীয় নরকবাসের কাল।
পিতৃমাতৃহীন বেদনা ভারাক্রান্ত কৈশোর থেকে যৌবনে, মানুষের ভালোবাসায় আস্থাবান, এক ভালবাসাহীন অনন্ত পথের যাত্রী এই কবি। কবিতাই তাঁর একমাত্র আশ্রয়। নিজের হৃদয়কে সম্পূর্ণ উজাড় করে দেন কবিতায় যাতে পাঠকের কাছে অনাবৃত হয় তাঁর হৃদয়ের সব অলিগলি। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর কবিতা হয়ে উঠেছে সুর রিয়ালিস্টিক। এবং অতি অবশ্যই বহুলাংশে দূর্বোধ্য। তবে এক নতুন জাতের তো বটেই।
সম্পূর্ণ ভাবে মঙ্গোলিয়ান অথচ ইংরেজি ভাষায় এমন কবিতা দূর্লভ। ভৌগলিক ভাবে মঙ্গোলিয়া একটি স্থলভাগ পরিবৃত দেশ তাই কবি স্বপ্ন দেখেন এক সমূদ্রের মাঝে নোঙর ফেলে একটু জিরিয়ে নেবার। আকাশ, নক্ষত্র, সূর্য, চন্দ্র ইত্যাদি নিয়ে নানা রঙে আঁকা বিচিত্র এক গ্যালারি তাঁর কবিতা সংকলন।
নিজেকে মঙ্গোল জাতিচ্যূত এক কবি বলেই মনে করেন এই যুবক কবি। সময়ই বলে দেবে তিনি এই নতুন সত্ত্বায় কতটা সফল একজন কবি।

(বাংলা রূপান্তর নির্ঝর মুখোপাধ্যায়)

     । । । ১। ।

আমি দেখেছি
আমার প্রজন্ম
সময় গিলছে।
যত গিলছে
তত নেশায়
বুঁদ হচ্ছে
শিল্প চাইছে
নর্দমার পাঁক চাইছে।
তাদের মন
আসলে কান্না ,
আমি লিখছি
আমাকে তাদের কথা
বলতে দাও।


      ।।২।।

নামহীন  কয়েক পঙক্তি

আমার কবিতাটা শেষ করব কি করে ?
শেষ পঙক্তিটা যে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

                       *  *  *

বিবাহ মোটেই জীবনের এক নতুন অধ্যায় নয়
আসলে একটা বিছানায়
কি করে ঠিক করে শোয়া যায়
তার জন্য লড়াই মাত্র

                     *  *  *

আমার জীবন তো মৃত্যুর লেখা একটা নাটক মাত্র বটে

                     ***

মানুষের তো একটাই অসুখ
সে মূর্খ

                          * **

আহ, আমি তো ঈশ্বরের একটি ভ্রম

             ***

সব কিছু নেশাগ্রস্তের মতো গ্রহণ করো
জীবনকে অনন্ত বোঝা মনে হবে না


                          ।।৩।।

এক মর্মস্পর্শী  ভোরবেলা
কাঁপা কাঁপা হাতে
আমাকে কোলে নিয়ে
হাঁটছিল সেই নারী।
যেভাবে রাত্রি বন্দনার
কোনো কবিতার মধ্য দিয়ে
হেঁটে  যায় চাঁদের আলো।
চাঁদের কথাগুলোও বোঝা যাচ্ছিল,
আমার কপালে চুমো দিয়ে
বলল সে নারী,
"যে কান দিয়ে শব্দ না শুনে দেখতে পাও
সেই কানটা দেখাও।
দেখো, এই পথটা আমার নয়
যে পথ দিয়ে তুমি যাও
সেই পথ দিয়ে নিজের পিছু পিছু যাও।
এসো সেই রাস্তাটা দেখিয়ে দিচ্ছি তোমায়।
ঐ গাঢ় বেগুনি রঙের চন্দ্রালোকিত পথ
সেখান দিয়ে হেঁটে  যাও
একেবারে শেষ প্রান্তে গেলে
খুঁজে পাবে নিজের নিজেকে ।"
দুদিকে  গড়িয়ে পড়া দুটো পাথরের মতো
আমরা চিরকালের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম।
এখন আমি একা আর
রাত্রি বন্দনার কবিতায় লেগে থাকা
গাঢ় বেগুনি রঙের চন্দ্রালোক ।
খুঁজে পেয়ে গেছি সময়ের ঠিকানা ।
আমি সেই মহাসময়ের কেন্দ্রবিন্দু
সময় আমাকে ছেড়ে
সামনে পিছনে কোথাও যেতে পারছে না।
মহাাকাল আমার কাছে সদা বর্তমান ।
আমি ভালোবাসি বর্তমান ,
সেই সমস্ত বিশ্ব বিস্তৃত সময়
সে আমার,সে শুধু আমার
আর  কাউকে দেওয়া যায় না ভাগ।
অর্থাৎ আমি একা আর সেই মহা সময়
চন্দ্রালোক আমার সহায়
আমি ধেয়ে যাই জীবনের দিকে
এ এক তুলনাতীত---
আমার অমলিন মনের মাঝে
ছায়া পড়ে এক বাস্তবের,
আমাকে গিলে খাওয়া এক দৈত্যের মতো বাস্তব,
নিজের শোকে নিজের চোখের জল ফেলা
মৃত্যুর মতো বাস্তব ।
এ এক শাশ্বত ভালোবাসার কথা
এই আমি লিখে গেলাম।

প্রিয় পাঠক, বিদায়
আমাকে এবার সেই গাঢ় বেগুনি
চন্দ্রালোকের হাত ধরে হেঁটে যেতে হবে
ওটাই আমার পথ।

     ।।৪।।

মেয়েটির জীবনে  চলছে উথালপাথাল
এই সময়ে সে জীবনে প্রবিষ্ট হও তুমি
তিষ্ঠ ক্ষণকাল ,
কারণ মেয়েটি বলছে,
“ হায় কপাল , একি কাণ্ড করেছি আমি,
কি আছে রোপন , বুনন তোমার আমার মধ্যে ?”

ওর চোখের  দিকে তাকাও।
শুভ্র ভোরের বেলায়
মেয়েটির থেকে বিচ্ছুরিত
বেগুনি রঙের আলো।
সেই আলো, তুমি
মেয়েটিকে দেখে হাসো
মেয়েটিতো বলছে,
“হায় পোড়া কপাল আমার,
এ আমি কেমন হাসি হাসলাম। ”

মেয়েটির গালে চুমু খাও
মেয়েটির ভ্রু কুঞ্চণে ইশারা অবিরত
কারণ মেয়েটি বলছে,
“ হা আমার পোড়া কপাল
তোমার গন্ধে মিশল আমার ঘ্রাণ
এক পুরুষের গন্ধে  আর এক নারীর ঘ্রাণ। ”

ধীরে ধীরে উন্মোচিত করো
অবগুণ্ঠন তার
কারণ মেয়েটি বলছে,
“হায় আমার পোড়া কপাল
আমার ওড়নাটাও আমার ভাবনার মতো কাঁপছে। ”

কিছুক্ষণ ওকে একা ছেড়ে দাও
কারণ মেয়েটি বলছে,
“ হায় পোড়া কপাল
আবার আমাদের দেখা হবে
আবার আমাদের ছেড়ে যেতে হবে।
হাহাকার জাগে। "

সব শেষে গৃহত্যাগের মতো
ছেড়ে চলে যাও তাকে
কারণ সে বলছে,
" হা আমার পোড়া কপাল,
এই যাপন, হাসি, চুম্বন,
অনবগুণ্ঠন, গন্ধ, চলে যাওয়া প্রিয়তম
তোমাকে আমার চাইই।"