আমার একটা পাহাড়ের মতো মন ছিল।
তার এভারেস্টের মতো উঁচু মাথা ছিল,
ছিল শীতঘুম জুড়ে ‘আন্দিজ’ সম বিস্তার।

আমার দুটো নদীর মতো চোখ ছিল।
নীলের মতো দীর্ঘ তাদের কোল ছিল,
ছিল কঙ্গোর মতো গভীর তলে, কালচে আলোর সংসার।

এককালে মিছে প্রলাপ বকা দুটো ঠোঁট ছিল।
স্নেহচুম্বনে নিবারিত তার তৃষ্ণা ছিল,
ছিল রক্ত সেচে ফ্যাকাসে জমির চাষ।

একযুগে এই মানসদ্বারে দুই প্রহরী ছিল।
ভালোবেসে বোনা দুয়ার ফলকে, ‘বন্ধু’ তাঁদের নাম ছিল।
ছিল নিরপেক্ষ প্রকোষ্ঠ জুড়ে, পৃষ্ঠপোষক সুবাস।

আমারও কিছু অস্ফুটিত অভিমান ছিল।
ব্রহ্মগুপ্তের ব্যাখ্যা মতে ‘শূন্য’ তাদের মান ছিল,
ছিল ‘বুটিস ভয়েড’ কেন্দ্রে তাদের বাসা!

আমার কিছু লিখতে না পারা শব্দ ছিল।
টাংস্টেনে গড়া ছুঁচের মতো সূক্ষ্ম তাদের ধার ছিল।
ছিল শুভ্র চাদরে কাব্য হওয়ার আশা!

আমারও বোধহয়, একটা চা চুম্বনী সকাল ছিল।
সিড়ির তলার ভাঁড়ার ঘরে, বস্তা ভর্তি চাল ছিল।
ছিল বাগিচা ভরে চেয়ে থাকা সুখী মুখ!

কে জানে, সেটা কোন সাল ছিল।
কাল-সাপেরই ছোবল খেয়ে, সভ্যতা মাতাল ছিল।
ছিল কফিনের কাঠে লিপ্ত মুক্তি সুখ!

আমার একটা কবিতার মত খাতা ছিল।
সমাপ্তিহীন গল্পে ভরা, দিস্তা খানেক পাতা ছিল।
ছিলনা শুধু ব্যাকরণ ফাঁদে বেঁধে ফেলা কোনো বেড়ি!

আমারও একটা হারিয়ে যাওয়া ‘আমি’ ছিল।
মরফিন রসে ডুবে যাওয়া ওই কলমটা বড়ো দামী ছিল।
আর ছিল, পকেট ভর্তি খুচরো অদরকারী!

আজকে আমার পাথরের মতো বুক আছে।
তাতে নাম না জানা, ভিনদেশী এক অসুখ আছে।
আছে আলিঙ্গনের চাহিদা ভরা শ্বাস।

আজও আমার একটা নাগাল আছে।
স্বাধীন হলেও সেই কারাদ্বারে, মস্ত এক আড়াল আছে।
নেই শুধু আর পাঁজর খাঁচায়, ভিনদেশিনীর বাস!

আমার একটা পাহাড়ের মতো মন ছিল।
আমার একটা, আমার মতন ‘আমি’ ছিল!