বনলতা, বুনোফুলের মত তোমার সৌন্দর্য সমুদ্রে,
অামি ছিলাম দিকবিদিক হারা এক পথভ্রষ্ট নাবিক।
তোমার নির্বাক মায়ামাখা চাহুনিতে সম্মোহিত হয়ে,
তোমার মোহে আচ্ছন্ন থাকা আমার প্রতিটা মূহুর্ত।
তোমার কেশরাজির ভাঁজে ভালোবাসার মিষ্টি গন্ধে,
হারানো পথটা আর খোঁজার চেষ্টা করিনি কখনো।
উসকো-খুসকো চেহারা আর মলিন অাভরণ জড়ানো,
তোমার রাজ্যে ভালোবাসার প্রজা হয়ে একমাত্র আমি।
প্রভাতী সোনা রৌদ্দুর যখন তোমার মুখটা ছুয়ে দিতো,
তখন মায়ামাখা কপোলেরা যেন রক্তবর্ণ ধারন করত।
আমি বিমুগ্ধ চিত্তে শীতল সৌন্দর্য্য উপভোগ করতাম,
আর স্বপ্নভেলায় তোমায় সাথে পারি দিতাম নক্ষত্রমন্ডল
তোমার ধবধবে চরণ আলতারংয়ে অভূতপূর্ব লাগতো,
কিন্ত, আমি যে, সব হারানো পথভ্রষ্ট এক নিঃশ্ব নাবিক।
অতঃপর মুমুর্ষ হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে তাজা লাল রক্তে
তোমার চরণযুগলে রাঙ্গিয়েছিলাম আপন হাতে।
তোমার ভালোবাসা কাননে একমাত্র মধুলেহী আমি,
সে কাননের কুসুমে পরাগায়নে পূর্ণতা এনেছি শতবার।
তোমার বাকা ঠোঁটের এক চিলতে হাসিতে,
আমি সম্মোহিত হতাম বারংবার।
জানো? কখনো সম্ভিত ফিরে পাওয়া হয়নি আর,
তোমার মিষ্টি খুনসুটি ভুলিয়ে দিত আমার সমস্ত ধ্বংস।তোমার চলার ছন্দ আর পায়ের নিক্বন ধ্বনিতে,
ভুলে যেতাম হাজার মানুষের বাচাও! বাচাও! আর্তনাদ
হয়তো তোমার রাজ্যে খানিক স্বার্থপর হয়ে উঠেছিলাম,
এরপর সময়ের প্রাচীর ভেঙ্গে নেমে আসে মলিন সন্ধ্যা।
আগন্তুক এক রাজকুমার টগবগিয়ে তোমার প্রাসাদে,
ভৃত্যরা আমাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বের করে দিলো।
তুমি আগন্তুকের হাত ধরে মিলিয়ে দিগন্তের ঐ পাড়ে,
আর আমি? হয়তো সম্ভিত ফিরে পাওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ।
মুখের উপর তপ্ত রোদ্দুরের প্রখরতায় চোখ খুললাম,
বুকের বা পাশের ক্ষতটায় বেশ ব্যাথা অনুভব করলাম।
চেয়ে দেখি জনশুন্য চারিদিক, সামনে বিপুল জলরাশি
আর গহীন অরন্য থেকে ভেসে আসা কোকিলের ডাক।
বনলতা! বুঝলাম, তোমার রাজ্যে বসন্ত আজ।