একটা চিৎকার, তীব্রতম চিৎকার বাচাও আমাকে,
অসহ্য যন্ত্রণা উহঃ আহঃ ইস, ই....ইস।
আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও।
দু'হাতে শক্ত করে ধরা বুকের কাছের আস্তিন আমার।
ছটফটানি বেডে শুয়ে
উঠবার শক্তি রহিত।
সমস্ত শরীর জবজবে ভিজে গেছে ফোটা ফোটা ঘামে।
রুমে এসি চলছে, উপরে সিলিং ফ্যান,
পাশে সুপার স্পীডে ঘুরছে ইলেকট্রিক ঘুর্ণী।
তবুও ঘামছে শরীর। কমছে না গরম।

ঘরভর্তি লোকজন, নারীদের উৎকণ্ঠিত কণ্ঠ।

মাথায় জল দাও, কর স্নায়ু মন্থন।
ওরে কে আছিস, গ্লাসে জল নিয়ে আয়, ডাক্তার ডাকো, এম্বুলেন্স আনো, একটু তুলে বসাও।
একি হলো!

কত সব কথা ঘরময়।

কিন্তু আমার পিরান দুমুঠে শক্ত করে ধরা ছাড়ছে না কিছুতেই।
পিরান তো নয় যেন আমার পরানটাই দু'হাতে খামছে ধরে চিৎকার-
চিৎকার-
সেই সনাতনী চিৎকার।
আদি-সৃষ্টি কাল হ'তে উৎসারিত সেই ক্ষৌণী কাকুতি-
"যাবার ইচ্ছে নেই", "জড়ায়ে ধরো মোরে"
অন্ধকারে জ্বালাও দীপ শিখা, ওগো তুমি কোথায়,
এ বন্ধন কিছুতেই ছিড়বো না,
মুদিবে না এ আঁখি মোর- ইন্দ্রজাল টানে।

ওগো, এখনো হয়নি যে শেষ পূজার অর্চনা বিশেষ।
তার লাগি কিছুকাল রাখিও জাগিয়া।
আমারে আশ্রয় করিয়া কাকুতি অনিমেষ টানিয়া ধরিল প্রাণ স্তনন স্বরে।

হৃদয়ে জাগে নি কেন সমউচ্চারে
অসহায় সে আশা বাঁচিবার প্রত্যাশা।
আমি বুঝি নাই কিছু- দাঁড়ায়ে দিগন্তের রথ দুয়ারে। আমি খুঁজিতেছি ডাক্তার বদ্যিরে
তুমি খুঁজিতেছো আমারে।
কী ব্যথা! কী কষ্ট!
নীল সমুদ্রের শেষ ভালবাসা করিতে প্রকাশ খুঁজছো প্রিয়েরে।
নির্বোধ আমি কত, হাজার রাত্রি শত
প্রাণে প্রাণ পাতি কান শুনিয়েছো প্রেম নাদ।
তবু সে কথা বিস্মৃত কেন
জ্বালেনি আলো কোন, বিদায় প্রদোষে।
ঐ আসে মহাযান,
চেতনারে মুঠে পুরে শকুনের ঠোটে টানিছে বিমানে।
তুমি বুঝিয়াছ, বুঝেছিলে যাত্রার রথ সমাগত
পার নাই বোঝাতে প্রিয়ারে
হৃদয়ের টান ছিড়িতে কি জ্বালা
এ দীনতা মোছে নাই কোন অশ্রুতে।
পারি নাই দিতে সামান্য সেই স্পর্শটুকু
রাখি নাই কপালে স্পর্শ।

সেই মেঘনাদে পাথর চিপে কষ্টের নোনা জল গড়িয়েছে কাঁথার মরুভূমিতে।
নিশ্বাসের দীর্ঘতা ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে গ্লাভসের প্রকোষ্ঠে।
অরণ্যের রোদনে মেলেনি প্রতিধ্বনি চার দেয়ালের অন্ধকারে।
তবুও বোধ ছিল বাঁচার,
শিশু-অসহায় উপত্যকায় মুর্ছা গেছে বারবার। অম্বর ছিড়ে শিশির পড়ার প্রসারতায় ক্ষীণতর শ্বসনে,
যেন সরবরে নিমজ্জিত প্রাণ বারে বারে টেনে ধরে আকুতিকে।
দয়িত পাষাণ মুর্তি ফিরেও না চায়
হতাস-বাতাস ছায়া ওড়ে চেত বায়
তিমির পাথেয় করে অন্ধকার সিঁড়ি চলে নিরুদ্দেশ যাত্রার অচলায়তনে।
রাত্রির পথ নাই-
স্বপ্নের তারার মাঝে সহসাই,
অবসরের যাচিল বিদায়।
আলোর বেদন ধারা ইতি অবসরে
ছাই-কালো প্রান্তরে মিলায় চিৎকারে।

রাত জেগে বসে থাকি মুদ্রিত নয়নে পদ্মাসনে একটা পরশের লাগি
তৃতীয় নয়নে কপালভাতিতে শিল্পকলা যোগে আঁকি তোমার ছবি
হৃদয় বিদীর্ণ করা শেষ কথা 'আমাকে বাঁচাও' অসহায় আর্তনাদ
সেই চিৎকার - সেই আর্তনাদ।