১ ।
কান পেতে শোন হে-
নিঝুম মেঘদূত,
কতটা কাল যাবত,
রাতের কুয়াশা ঘেরা
আগামী দিনের ভোর সকাল,
'ক্রিং ক্রিং' কলিং বেলের শব্দ নিয়ে,
আসে না তো এখন স্বদেশ আমার,
চায়ের গরম কাপে,
চুমুক এর পরতে পরতে,
এ যুগের দৃঢ় সত্যের তাতানো সংবাদ ।

২।
কান পেতে শোন হে-
এ সময়ের ইথারের প্রহর,
কতটা কাল কত যুগ যাবত,
প্রাসাদ বারান্দায় বাগানের ঐ কোণে,
পাড়ার অষ্টাদশী স্বল্পভাষী,
লাজুক নয়নে চাহনি আঁকা পলকে,
অনবদ্য সেই মেয়েটির আসা যাওয়া,
যায় না তো দেখা আর,
ইশারা ইঙ্গিতে ময়ূর কণ্ঠি ডাকে,
প্রেম হৃদয় নিবেদনে
অস্থির আসা যাওয়ার সাক্ষাৎ ।

৩ ।
কান পেতে শোন হে-
মিনার হতে ভেসে আসা
প্রথম ভোরের আযানের ধ্বনি,
কতটা কাল যুগ যাবত,
ইস্পাত ইট পাথরে গড়া,
বিক্ষুব্ধ শহরের রাজপথ,
ভবন ফটক উম্মুক্ত দুয়ারে,
দীন দরিদ্র অন্ধ ভিখারিদের,
যায় না তো দেখা আর,
হাত পেতে থালা হাতে,
বুভুক্ষু ঝুলি কাঁধে পদভার ।

৪।
কান পেতে শোন হে-
বহতা সময়ের চোখে দেখা হারানো
এ দিনে নব সাজে সজ্জিত উদ্যান,
কতটা কাল বসন্ত যাবত
তিলোত্তমা এ শহরে হেটে হেটে,
ফুটপাত ধরে পথচারী বেশে
দহন পোড়া ভর রোদ দুপুরে,
ঝরাপাতা মড় মড় সুর আবেশে,
যায় না তো শোনা,
কৃঞ্চচুড়ায় শাখা ডালে ডালে,
বসন্ত কোকিলের মধুরকন্ঠি গান ।

৫।
কান পেতে শোন হে-
এ যুগের দ্বিপ্রহর,
কতটা কাল যুগ যাবত
পাড়ার অলি গলি কিংবা
বাড়ির ফটক দ্বারে,
গেরুয়া খাকি পোশাক পরা
ক্লান্ত দেহে খুঁজে মরা,
মোটা কাপড় বোঝা ভরা চিঠি কাঁধে,
'টেলিগ্রাফ চিঠি চিঠি' কণ্ঠে,
কড়া নাড়ার কঠিন শব্দে
যায় না তো শোনা আর,
ডাক পিয়নের তৃষ্ণা ভরা
হৃদয়গ্রাহী মন মাতানো ডাক ।

৬ ।
কান পেতে শোন হে-
গুমোট কালো মেঘেদের বজ্রবিদ্যুৎ,
কতটা কাল যুগ সময় যাবত
ঝিরি ঝিরি হাওয়ায় বাদলও ধারায়,
যায় না তো দেখা এ যুগে এখন,
গ্রামের মেহনতি কৃষাণ বধূর
ধুলোমাখা সাজানো আঙ্গিনায়,
প্রতিটা ফোড়ের কোমল পরতায়
সুখ দুঃখ জমানো ব্যথায় বোনা,
রঙ্গিন সুতোয়ে কাব্য কবিতায় আঁকা,
নকশী কাঁথায় করুন চিত্র কথা ।

৭ ।
কান পেতে শোন হে-
এ যুগের দিকহারা
নীতির রাজা বিভ্রম রাজার রাজনীতি,
কতটা দিন কাল যাবত,
অফিস পাড়ার রাজপথ মোহনায়,
ছুটির রৌদ্র ঝরা পড়ন্ত বিকেলে,
পবিত্র সাদা পোশাক পবিত্রতায়,
'কলরেডি' মাইক্রোফোন হাতে,
ঐতিহাসিক পল্টন মাঠে
মঞ্চে উপবিষ্ট নেতার মাঝে দাড়িয়ে,
যায় না তো শোনা এখন আর,
মোটা কালো চশমা পরা
প্রতিবাদী বজ্র কন্ঠধারি নেতাদের,
করতালি মুখরিত মিছিল শ্লোগানে,
প্রকম্পিত কালজয়ী জ্বালাময় ভাষণের
অগ্নীঝরা সেই কাব্য বুনিয়াদ ।

৮ ।
কান পেতে শোন হে-
এ যুগের নর-নারী
প্রজন্মের তারুণ্য দীপ্ত যুবক সকল,
কতটা কাল যুগ যাবত,
পিতার রেখে যাওয়া ফিলিপ্স’ ব্যান্ডের
এক ব্যাটারি রেডিও টা,
এদিক সেদিক নব নাড়িয়ে ঘুরিয়ে,
অতি যতনে কেউ একজন,
যায় না তো দেখা এই দিনে,
জড়ো হয়ে উৎসুক জনতা,
কলকাতা আকাশ বাণী কিংবা,
বি.বি.সি,ভয়েস অব আমেরিকার,
শুনতে বিশেষ বুলেটিনের খবর  ।

৯ ।
কান পেতে শোন হে-
অস্থির দিক ভ্রান্ত
আমাদের বুভুক্ষু ছাত্রসমাজ,
কতটা কাল যুগ যাবত
আর তো যায় না শোনা,
প্রাচীর ঘেরা হাসান সাহেবের
শ্বেত পাথরে গড়া,বাড়ী হতে,
এনালগ টেলিফোনে " ক্রিং ক্রিং' ছন্দে
বিকট কণ্ঠে- “ হ্যালো হ্যালো-
কে বলছেন ?’ অসুরও উচ্চধ্বনি,
কর্ণকুটিরে আছড়ে পড়ে করে না তো,
প্রতিদিন ভোর বিকেল রাত্রি জালাতন ।

১০।
কানপেতে শোন হে-
শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ সকল,
কতটা কাল যুগ যাবত
গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে,
মৈষাল গাড়িয়াল ভাইয়ের,
"হর-র-র-র ! হা-ট, হা-ট"
নদী জল ভরা থৈ থৈ,
গুণটানা নায়ে,যায় না তো শোনা
'মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে
আমি আর বাইতে পারলাম না'।
এমন সব সুরারোপিত হৃদয় ছোঁয়া
মধুর তরও প্রাণ জুড়ানো
মাটির সুধা মাখা মাটি মানুষের গান ।

১১ ।
কান পেতে শোন হে-
প্রস্তর যুগে শিল্পীর সৃষ্টি ও কৃষ্টি,
কতটা কাল যুগ যাবত
‘খুট খুট' শব্দে শিলাগাত্রে গড়া
প্রাচীন অক্ষর ও  স্থাপত্য সকল,
হারিক্যানের মিটি মিটি আলোয়ে
যায় না তো দেখা এ সময়ে এখন,
দুর প্রান্তে ঐ গ্রামে একা পড়ে থাকা,
কোমল হাতে যতনে 'প্রিয় তম' বলে লেখা,
হৃদয়ে জমানো দুঃখ কষ্ট প্রেম বেদনা ভরা,
কত শত আবেগময় কামনার কথা,
নীল খাম জুড়ে আটা চিঠির পাতা,
হাট বাজারের পোষ্ট অফিসে পাঠিয়ে
পঞ্জিকায় দিন গুনে গুনে,
ডাক পিয়নের আশায়,পথপানে বসে
প্রতীক্ষায় চেয়ে থাকা ।