আজ আষাঢ়-মেঘের কালো কাফনের আড়ালে মু-খানি ঢাকি
আহা কে তুমি জননি কার নাম ধরে বারে বারে যাও ডাকি?
মাগো কর হানি দ্বারে দ্বারে
তুমি কোন হারামণি খুঁজিতে আসিলে ঘুম-সাগরের পারে?
‘কই রে সত্য, সত্যেন কই’ কাতর কান্না শুধু
গগন-মরুর প্রাঙ্গণে হানে সাহারার হাহা ধুধু!
সত্য অমর, কেঁদো না জননি, আসিবে আবার রবি,
গিয়াছে বাণীর কমল-বনে মা, কমল তুলিতে কবি!
ও কে ক্রন্দসী হায় মুরছিয়া পড়ে অশ্রু-সিন্ধুতীরে
গেল সহসা নিশীথে বাণীর হাতের বেয়ালার তার ছিঁড়ে।
আহা, কোন ভিখারিনি এরে
কাহারে হারায়ে নিখিলের দ্বারে ফরিয়াদ করে ফেরে?
সতীর কাঁদনে চোখ খুলে চায় ঊর্ধ্বে অরুন্ধতী,
নিবিড় বেদনা ম্লান করে আনে রবির কনক-জ্যোতি।
সত্য অমর, কাঁদিয়ো না সতী, আসিবে আবার রবি,
গিয়াছে বাণীর কমল-কাননে কমল তুলিতে কবি!
আজ সারথি হারায়ে বিষাদে অন্ধ ছন্দ-সরস্বতী,
ওগো পুরোহিত-হারা ভারতী-দেউলে বন্ধ পূজা-আরতি
ওরে মৃত্যু-নিষাদ ক্রূর
বিষাদ-শায়ক বিঁধিয়া করেছে বাংলার বুক চুর!
নিভে গেল মঙ্গল-দীপশিখা, বঙ্গবাণীর আলো,
দুলে দশদিকে শুধু দিশেহারা অশ্রু অতল কালো!
‘সত্য’ অমর! কাঁদিয়া না কবি, আসিবে আবার রবি,
গিয়াছে বাণীর কমল-কাননে কমল তুলিতে কবি।
শ্বেত বৈজয়ন্তী উড়ে চলে যায় মৃত্যুরও আগে আগে,
ওরে সে চির-অমর, মৃত্যু আপনি তারই পায়ে প্রাণ মাগে।
তাই ওই বাজে জয়-ভেরি
স্বর্গ-দুয়ারে, ওঠে জয়ধ্বনি, ‘জয় সুত অমৃতেরই!’
কাঁদিসনে মাগো, ওই তোর ছেলে মাতা সারদার কোলে
শিশু হয়ে পুনঃ দুধ-হাসি হেসে তোরে ডেকে ডেকে দোলে!
‘সত্য’ অমর, কাঁদিয়ো না কেহ, আসিবে আবার রবি,
মা বীণাপাণির সোহাগ আনিতে স্বর্গে গিয়াছে কবি।
(ফণি-মনসা কাব্যগ্রন্থ)