আজি  রক্ত-নিশি-ভোরে  
   একী  এ শুনি ওরে,  
         মুক্তি-কোলাহল বন্দি-শৃঙ্খলে,
    ওই  কাহারা কারাবাসে  
         মুক্তি-হাসি হাসে,  
         টুটেছে ভয়-বাধা স্বাধীন হিয়া-তলে॥  
         ললাটে লাঞ্ছনা-রক্ত-চন্দন,  
         বক্ষে গুরু শিলা, হস্তে বন্ধন,  
         নয়নে ভাস্বর সত্য-জ্যোতি-শিখা,  
         স্বাধীন দেশ-বাণী কণ্ঠে ঘন বোলে,  
         সে ধ্বনি ওঠে রণি ত্রিংশ কোটি ওই  
                 মানব-কল্লোলে॥
    ওরা  দু-পায়ে দলে গেল মরণ-শঙ্কারে,
         সবারে ডেকে গেল শিকল-ঝংকারে,
         বাজিল নভ-তলে স্বাধীন ডঙ্কারে,
         বিজয়-সংগীত বন্দি গেয়ে চলে,
         বন্দিশালা মাঝে ঝঞ্ঝা পশেছে রে  
              উতল কলরোলে॥
   আজি  কারার সারা দেহে মুক্তি-ক্রন্দন,
         ধ্বনিছে হাহা স্বরে ছিঁড়িতে বন্ধন,
         নিখিল গেহ যথা বন্দি-কারা, সেথা
         কেন রে কারা-ত্রাসে মরিবে বীর-দলে।
         ‘জয় হে বন্ধন’ গাহিল তাই তারা  
                মুক্ত নভ-তলে॥
   আজি  ধ্বনিছে দিগ্‌বধূ শঙ্খ দিকে দিকে,
   আজি  গগনে কারা যেন চাহিয়া অনিমিখে,
            ধু ধু ধু হোম-শিখা জ্বলিল ভারতে রে,
            ললাটে জয়টিকা, প্রসূন-হার-গলে  
                চলে রে বীর চলে;
              সে নহে নহে কারা, যেখানে ভৈরব-  
            রুদ্র-শিখা জ্বলে॥
  জয় হে বন্ধন-মৃত্যু-ভয়-হর! মুক্তিকামী জয়।  
               স্বাধীন-চিত জয়। জয় হে  
                    জয় হে! জয় হে! জয় হে!

(বিষের বাঁশি কাব্যগ্রন্থ)