প্রভু, আর কত দিন
তোমার প্রথম বেহেশ্ত পৃথিবী রহিবে গ্লানি-মলিন?
ধরার অঙ্ক পাপ-কলঙ্ক-পঙ্ক-লিপ্ত করি,
বরাহ মহিষ অসুর দানব ফিরিতেছে সঞ্চরি?
অত্যাচারীর মার খেয়ে মরে তব দুর্বল জীব,
যত খুন খায় তত বেড়ে যায় লোভী ও ভোগীর জিভ!
তোমার সত্য-পথভ্রষ্ট হয়েছে মানুষ ভয়ে,
আত্মা আত্মহত্যা করেছে অপমানে পরাজয়ে!
মনুষ্যত্ব মুমূর্ষ আজ, ক্লৈব্য কাপুরুষতা
পঙ্গু পাষাণ করেছে জীবন! – মালিন্য, দৈন্যতা,
হীন প্রবৃত্তি, চামচিকা-সম জীবনের পোড়া ঘরে
বাঁধিয়াছে বাসা! আশার আলোক জ্বলে নাকো অন্তরে।
প্রভু, আলো দাও, আলো!
ঘুচুক ভয়ের ভ্রান্তি, জড়তা, ঘন নিরাশার কালো।
প্রভু আর কত দিন
ধূর্তের কাছে বিশ্বাস সরলতা রবে দীন হীন?
স্বার্থান্বেষী চতুরের কাছে ‘সবর’ ধৈর্য আর,
ওগো কাঙালের পরম বন্ধু, কত দিন খাবে মার?
যত মার খায় তত তারা জপে নিত্য তোমার নাম,
আশ্রয় শুধু যাচে প্রভু তব! চায় না জপের দাস।
আশ্রয় দাও পূর্ণ পরম আশ্রয়দাতা স্বামী,
আশ্রয়হীনে রক্ষিতে তব শক্তি আসুক নামি।
শুনিয়াছি, তুমি নহ জালিমের, উৎপীড়কের নহ,
নির্যাতিত ও অসহায় যথা, তার দ্বারে জাগি রহ;
ডাকিনি বলিয়া অভিমানে বুঝি লও নাই প্রতিশোধ,
আপনার হাতে করেছি আপন ঘরের দুয়ার রোধ।
আর ভয় নাই, প্রভু, দ্বার খুলিয়াছি,
আঁধারে মরেছি তিলে তিলে, যদি আঁধারে আসিয়া বাঁচি।
তুমি কৃপা করো, ক্ষমা-সুন্দর, অপরাধ ক্ষমা করো,
আশ্রয় দাও দুর্বলে, উৎপীড়কেরে সংহারো।
অন্ধ বধির পথভ্রান্তে দেখাও তোমার পথ,
আমাদের ঘিরে থাকুক নিত্য তোমার অভয়-রথ!
পশ্চিমে তব শাস্তি নেমেছে, পূর্বে নামিল কই?
হে চির-অভেদ! আমরা কি তবে তোমার সৃষ্ট নই?
যে শাস্তি দাও পশ্চিমে, পুবে সে ভয় দাওনি প্রভু;
বিশ্বাস আর তব নাম লয়ে বেঁচে আছি মোরা তবু।
সব কেড়ে নিক অত্যাচারীরা, প্রভু গো দাও অভয়,
বিশ্বাস আর ধৈর্য ও তব নাম – যেন সাথি রয়।
এই বিশ্বাসে, তোমার নামের মহিমায় – ফিরে পাব
শান্তি, সাম্য। তব দাস মোর তব কাছে ফিরে যাব।
প্রেম, আনন্দ, মাধুরী ও রস পাব এই দুনিয়াতে,
তোমার বিরহে কাঁদিব আমরা জাগিয়া নিশীথ রাতে।
বলো প্রেমময়, বলো হে পরম সুন্দর, বলো প্রভু,
অন্ধ জীবের এই প্রার্থনা মিথ্যা হবে না কভু!
তুমি বল দাও, তুমি আশা দাও, পরম শক্তিমান!
বহু সুখ সহিয়াছি, এইবারে দাও চিরকল্যাণ।
সার্বজনীন ভ্রাতৃত্বের মিটাও মিটাও সাধ,
তোমারই এ বাণী – দেখিব তোমার কৃপার পূর্ণ চাঁদ।
প্রসন্ন হও, প্রসন্ন হও নিত্য মোদের পর,
পূর্ণ হউক তোমার প্রসাদে আমাদের কুঁড়েঘর।
আমরা কাঙাল, আমরা গরিব, ভিক্ষুক, মিসকিন
ভোগীদের দিন অস্ত হউক, আসুক মোদের দিন।
তুমিই শক্তি, ভক্তি ও প্রেম, জ্ঞান আনন্দ দাও,
কবুল করো এ প্রার্থনা, প্রভু, কৃপা করো, ফিরে চাও!
এক সে তোমারই ধ্যান তপস্যা আরাধনা হোক স্বামী,
নিরভাব হোক মানুষ, গাহুক তব নাম দিবাযামী।
ঊর্ধ্ব হইতে কে বলে ‘আমেন’, ‘তথাস্তু’ বলো, বলো,
চোখের পানিতে বুকে ভেসে যায়, দেহ কাঁপে টলমল!
সত্য হউক সত্য হউক ঊর্ধ্বের এই বাণী,
দরিদ্রে দান করিতে করুণা, আসিছেন মহাদানী!
(শেষ সওগাত কাব্যগ্রন্থ)