(ফরফ ফররখজাদ ইরানী কবি এবং ফিল্ম ডিরেক্টর । বিংশ শতকের প্রভাবশালী এবং মহিলা কবি ফররখজাদ আধুনিক কবি একই সাথে বিতর্কিত হয়েছেন তার ভিন্নধর্মী লেখালেখির জন্য ।
জন্ম – ১৯৩৫ সালের ৫ই জানুয়ারী ইরানের তেহরানে ।
মাত্র ৩২ বছর বয়সে এই সম্ভাবনাময়ী কবি ১৯৬৭ সালে ডারবানদে ইরানের তেহরানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন ।
পারভেজ শাপুরির সাথে মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিয়ে এবং দু বছর পরেই বিচ্ছেদ ।
মুভি - The House Is Black , I Will Greet The Sun Again
বই – Another birth . The Captive, The Wall , The Rebellion , "Let Us Believe In The Beginning Of The Cold Season"
ফরফ ফররখজাদের সাহিত্যের সাথে সংশ্লিষ্টতা এবং বিশেষ করে নারী সমাজের জন্য যে অপরিহার্য পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন তার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন । এখনো তার কবিতার পর্যালোচনা হয় , বিশ্লেষনমূলক আলোচনা হয় , তার বই পূনর্মুদ্রন হয় এবং তার উপর ডকুমেন্টারী হয় । মানুষজন তাঁকে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সাথে স্মরণ করে ।
ফরফ তার স্বল্পায়ু জীবনে দেশের কবিতা জগতে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছিলেন । এবং আধুনিক পারসিয়ান সাহিত্যে ফরফ অগ্রদূত হয়ে আছেন । মাত্র সতের বছর বয়সে তার প্রথম কবিতা সম্ভার প্রকাশিত হয় । এবং যখন ২৩ বছর বয়স তখন দু”য়ের অধিক বই প্রকাশিত হয় ।
ফররখজাদ ১৯৩৫ সালে তেহরানে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার মা-বাবার সাত সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় ।
মা গৃহবধূ। এবং বাবা ছিলেন আর্মি অফিসার । মাত্র ১৬ বছর বয়সে ফরফের বিয়ে হয় কিন্তু ১৮ বছর বয়সেই সেই বিয়ে ভেঙ্গে যায় । পারভেজের ঔরসে তার এক সন্তান জন্ম নেয় । পারভেজ ছিলেন তার প্রতিবেশী এবং মা এর আত্মীয় । পারভেজ ঐ সময়ের পত্রিকা Towfighi তে কাজ করতেন এবং ঐ সময়ের জন্য খুব বিখ্যাত হিউমারিস্ট ছিলেন । পারভেজের সাথে তার চিঠির লেনদেন বিয়ের আগে থেকেই ছিলো এবং তাদের ডিভোর্সের পর কিছুদিন পর্যন্ত সে অব্যাহত ছিলো । সেগুলো সেই সময়ের পত্রিকা My heart’s first love palpitations ‘ টাইটেলে প্রকাশিত হয়েছিলো । ।
তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের ১ বছর পরে ৪৪ টি কবিতা নিয়ে ফরফ ফররখজাদের প্রথম কবিতার বই The Captive ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় । ইরানের রক্ষণশীল পিতৃতান্ত্রিক সমাজ তার কবিতা এবং কবিতার বিষয়বস্তু নেতিবাচক দৃষ্টিতে গ্রহণ করে এবং তাদের দৃষ্টিতে তিনি প্রত্যক্ষভাবে নারীবাদী হিসেবে আখ্যায়িত হন । তার প্রথম প্রকাশনার কিছুদিন পরেই নার্ভাস ব্রেকডাউনে আক্রান্ত হন । সাইকিয়াট্রিক ক্লিনিকে কিছুদিন চিকিৎসা করার পর সুস্থ্য হন ।
১৯৫৬ সালে ২৫ টি ছোট গীতিকবিতার সংগ্রহ ২য় ভলিউম ডাইভার ( The Wall ) প্রকাশ করেন এবং এটি তার প্রাক্তন স্বামী পারভেজ শাপুরীকে উৎসর্গ করেন ।
১৯৫৬ সালে ফরফ ইউরোপে যান এবং সেখানে দীর্ঘ নয় মাস অবস্থান করেন । ইরানে ফেরার পর বিতর্কিত লেখক এবং চিত্র পরিচালক ইব্রাহীম গোলেস্তানের সাথে তার দেখা হয় এবং তার মাধ্যমে গুলেস্তান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার সুযোগ পান । ফারাফ সেক্রেটারী হিসেবে যদিও নিয়োগ পান তথাপী ধীরে ধীরে সিনেমা জগতের খুটিনাটি শিখে নেন এরপর নাটক লিখেন , অনুবাদ করেন এবং একসময় পেরি সাবেরী পরিচালিত একটি নাটক মঞ্চস্থ করেন ।
১৯৫৮ সালে ফরফের তৃতীয় কবিতার সংগ্রহন এশিয়ান (Rebellion) প্রকাশিত হয় । কবিতায় তিনি এখন অনেক বেশী পরিণত এবং স্বচ্ছন্দ । দেশাত্মবোধ , আন্তর্জাতিকতা এবং সংলগ্নতা জীবনের সাথে এবং সুফীজমের প্রভাব তার কবিতাকে সমৃদ্ধ করেছে ।
অনেক সমালোচক বিশ্বাস করেন যে ইব্রাহিম গোলেস্তানের সাথে পরিচয়ের পর ফরফের কবিতার ধরণ পরিবর্তন হয় এবং দেখা যায় আগের চাইতে কবিতায় তিনি অনেক বেশী স্বচ্ছন্দ । স্ফুর্তিময় সারল্য কবিতাকে অধিক আন্তরিক করেছে । আবার কোনো কোনো সমালোচকের মতে ফিল্ম স্টুডিওতে কাজ শুরু করায় তার কবিতার মেরুকরণ শুরু হয় ।
১৯৬৩ সালে ফরফ The House is Black নামে একটি ছোট ডকুমেন্টারী তৈরী করেন কুষ্ঠরোগী এবং তাদের দুর্দশার উপরে । পূর্ব আজারবাইজানের প্রাদেশিক রাজধানী তাবরিজে অবস্থিত কুষ্ঠরোগীদের কলোনী । মানবতা বিবর্জিত চরম দুর্দশায় আক্রান্ত মানুষের বিপর্যস্থ অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্বমানবতাকে জাগ্রত করাও তার উদ্দেশ্য ছিলো । এই ছবিটি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে প্রশংসা কুড়োয় এবং জার্মানীর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে বেস্ট এওয়ার্ড পায় ।
কিন্তু ফররখজাদের জন্য এই ফিল্মটি এওয়ার্ডের চাইতেও বেশী কিছু ছিলো । এ ছবিতে হোসেন মিসৌরী নামে যে ছেলেটিকে দেখা গিয়েছে সে ছিলো লেপারস কলোনীর । তাকে ফররখজাদ দত্তক নেন । এবং নিজের সন্তানের মতো লালন পালন করেন । হোসেন , ফররখজাদের মৃত্যুর পরে ইংল্যান্ডে যান এবং পরে জার্মানীতে ইমিগ্র্যান্ট হন । ফারাফ তার জীবনের স্বল্প সময়ে হোসেনের জীবনে গভীর ছাপ রেখে দিতে সক্ষম হন । তাঁকে কবিতার প্রতি আগ্রহী করে তোলেন ।হোসেন বর্তমানে কবি এবং অনুবাদক ।
১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো ফরফের কবিতার এবং তার কর্মজীবনের উপর একটি ডকুমেন্টারী তৈরী করে । ছবিটি পরিচালনা করেন ইটালিয়ান পরিচালক Bernerdo Bertolocci . তিনি ইরানে এসে কবির একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন এবং সেটি সেই শর্ট ডকুমেন্টারীতে অন্তর্ভুক্ত করেন । যখন ফরফের কবিতা ছাপা হয় তখন ফেরিডন বলেছিলেন – তার আপত্তিকর বাক্যে অনেকেই আহত হতে পারেন কিন্তু পিতৃতান্ত্রিক সমাজে তার সেই উচ্চকিত এবং সাহসী স্বর , তৎকালীন নারী সমাজও সহজে গ্রহণ করেনি । এমনকি কোনো বুদ্ধিজীবিও তার পাশে এসে দাঁড়াননি । সবার অসহযোগিতা স্বত্ত্বেও ফরফকে দমিয়ে রাখা যায়নি । সমাজের , রাষ্ট্রযন্ত্রের রক্তচক্ষু এবং শ্যোন দৃষ্টি তিনি সাহসের সাথে উপেক্ষা করেছেন । ফরফ বলেন – আমাকে নারী কবি বলে সম্বোদন না করাই শ্রেয় । আমি কবি এবং একজন পুরুষ কবি যেভাবে ভালোবাসার কথা বলেন সেভাবে আমিও বলি ।
১৯৬৪ সালে ফরফের চতুর্থ কবিতার সম্ভার Tavallodi Digar (Another Birth) প্রকাশিত হয় । এই ভলিওমে ৩৫ টি কবিতা রয়েছে । ১৯৬৫ সালে তার পঞ্চম কবিতার সংগ্রহ "Let Us Believe In The Beginning Of The Cold Season" প্রকাশিত হয় । কিন্তু যদিও প্রিন্টে গিয়েছিলো তথাপী এই কবিতার বইটি তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় ।
ফারাফের কবিতা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে । ইংলিশ ,ফ্রান্স, জার্মান. রাশিয়ান , ইটালী , উজবেক এবং টার্কিশ ভাষায় অনুবাদ অনেক জীবন্ত ছিলো । ইসলামী বিপ্লবের পর তার বেশ কিছু কবিতার বই ব্যান করা হয়েছিলো । কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেটে তার বই এর চাহিদা সবসময় ছিলো । তার সময়কাল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তার লেখার ভক্ত রয়েছে । তার কবিতার আঙ্গিক এবং বিষয়বস্তু পাঠকের নিকট পুজিত হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই । ফরফ ফররখজাদের কবিতার শব্দ চয়ন অনেক বেশী শক্তিশালী , আন্তরিক , মায়ায় আচ্ছন্ন , প্রাসঙ্গিক , সময়ের চাইতে এগিয়ে এক সাহসী নারী এবং নির্ভিক কন্ঠস্বর তাকে সমসাময়িক কবিদের মধ্যে থেকে আলাদা করেছে । এবং এখন পর্যন্ত ইরানী ইসলামিক রিপাবলিক শাসনের কঠিন বেড়াজালে মধ্যেও ফারাফের সাহসী কন্ঠস্বর তার কবিতাকে ভিন্ন ডাইমেনশনে দাঁড় করিয়েছে ।
ইরানে নারীর অবস্থান , ১৯৫০ এ প্রথাগত বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদের পরের নিজের মানসিক এবং সামাজিক অবস্থান একজন নারী,একজন মা এবং সর্বোপরী একজন স্ত্রী হিসেবে নিজের অবস্থান "The Captive", "The Wedding Band", "Call to Arms", and "To My Sister" এ ঘুরেফিরে এসেছে ।
I want you, yet I know that never
can I embrace you to my heart's content.
you are that clear and bright sky.
I, in this corner of the cage, am a captive bird.
( তোমাকে চাই ,অথচ জানিই না
তোমাকে কি আমার হৃদয়ে জড়িয়ে ধরতে পারি ?
তুমি নিখুঁত আর উজ্জ্বল আকাশ
আমি কারাগারের কোণে বন্দী পাখি )
(The Captive)
The girl smiled and said: What
is the secret of this gold ring,
the secret of this ring that so tightly
embraces my finger,
the secret of this band
that sparkles and shines so?
the man was startled and said:
it's the ring of good fortune, the ring of life.
মেয়েটি হাসলো এবং বললো
এই সোনার রিং এ গোপন কি আছে
এর গোপনীয়তা হলো
সে খুব নিবির ভাবে আমার হাত জড়িয়ে ধরেছে
এবং জ্বলজ্বলে চকচকে ওর শরীর
লোকটি চকিতে বলে
এ রিং হলো ভাগ্যের এবং জীবন পরিবর্তনের –
(The Wedding Band)
I sinned a sin full of pleasure,
In an embrace which was warm and fiery.
I sinned surrounded by arms
that were hot and avenging and iron.
In that dark and silent seclusion
I looked into his secret-full eyes.
my heart impatiently shook in my breast
In response to the request of his needful eyes.
পাপ করেছি সুখের সাথে
উষ্ণ আমার বুকের পাশ
পাপ করেছি হাতিয়ারে
পরম চরম পুলকে-
অন্ধকারে নীরব ঘরে
গোপন চোখে তাহার চোখে
বুকের ভেতর সুখের ঝিলিক
তাহার আকুল ব্যাকুল চালে –
The Sin
একবার ফররখজাদ তার বাবাকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন ‘ কবিতা আমার কাছে স্রষ্টার মতন । আমি সুখী হই যখন আমার আত্মা সন্তুষ্ট হয় এবং কবিতা আমার আত্মাকে সন্তুষ্ট করে । মানুষ পার্থিব যা কিছুর জন্য নিজেদের বিন্দু বিন্দু করে নিঃশেষ করে এবং সে কাঙ্ক্ষিত সব কিছু যদি আমার থাকে এবং সেসবের জন্য আমি কবিতা থেকে যদি নিজেকে বঞ্চিত করি – তার মানে হলো আমি নিজেকে খুন করবো “ । “Another Birth, ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয় সেখানে কবির জীবন এবং মৃত্যুর যে সম্পর্ক যেটি তেহরানের সাহিত্য জগতে আধুনিকতা এবং স্ক্যান্ডালের কারণ বলে বিবেচিত বলে ধারনা করা হয় সেখানে এসেছে কবির এই দ্বন্দ্ব এবং মর্মপীড়া । এর প্রথম লাইন হলো “ “My whole being is a dark chant” আমার পুরো সত্তাই একটি তীব্র ভজনগীত “ নিশ্চিত করে পারসিয়ান সাহিত্যের ধর্মমত – যেমন ধরা হয় “জীবনই কবিতা এবং কবিতাই জীবন ‘।
মধ্যশতকের দিকে নারীর জন্য এটি ছিলো একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ বিশেষ করে ইরানের জন্য । যখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যের সাহিত্য জগতে পুরুষতান্ত্রিকতা আরোপিত হয়েছে এমনকি ভালোবাসার কাহিনীগুলোর ক্ষেত্রে পুরুষ নারীর উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে । এখানে নারী চরিত্র যেখানে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় সেখানে পুরুষ চরিত্র অনেক বেশী সক্রিয় এবং সাবলীল । এমনকি শতবছর ধরে প্রচলিত প্রেমকাহিনী লাইলি এবং মজনুর কাহিনীতেও পুরুষতান্ত্রিকতা আরোপ করা হয়েছে ।
যেমন লাইলি মজনুর কাহিনীতে দেখা যায় মজনু এখানে প্রেমে পাগল দেওয়ানা । মাজনুন মানে হচ্ছে পাগল । এবং মজনু যতটাই প্রেমের জন্য আকুল নিবেদিত এবং মজনু লাইলীর তুলনায় প্রেমে অনেক বেশী সক্রিয় । আবার মজনু কবি , মজনু প্রেমিক , মজনু পাগল কিন্তু সেখানে লাইলীর সেরকম কোনো গুন আরোপিত হয়নি শুধুমাত্র একনিষ্ঠ প্রেমিকা হওয়া ছাড়া এবং লাইলীর শোকে মজনু মারা যায় অথবা বলা যায় মরণকে বরণ করেছে । বারশ সালের দিকে লিখা এই কাহিনীর লেখক নিজামির কাহিনী জনপ্রিয় হয়েছিলো । ভাগ্য বিড়ম্বিত মজনুর এই কিংবদন্তী কাহিনী আজও শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় সমগ্র পৃথিবীর প্রেম কাহিনীগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করছে । এর প্রধান চরিত্র মজনু এক দুঃসহ চন্দ্রগ্রস্ত প্রেমিক এবং সব পাঠক সমাজের কাছে মজনুর এই কিংবদন্তী প্রেমিক সত্ত্বার জন্য আকুল হলেও লাইলীর জন্য সহানুভুতিপ্রবণ সে তুলনায় কমই হয়েছে এবং সমস্ত সহানূভুতি জমা হয়েছে প্রেমিক মজনুর জন্য ।অনেক পন্ডিত মনে করেন ফররখজাদের Another Birth শক্তিশালী এবং সাবলীল একটি প্রকাশনা যেখানে একটি বিষয় আছে বোঝার যেমন কিভাবে কবিতা একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে যা মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে তোলে এবং একই সাথে বেদনার্তও করে তোলে ।
“in this chant / I grafted you to the tree, / to the water, to the fire,” ইব্রাহিম গোলেস্তানকে উদ্দেশ্য করে বলা এই লাইনগুলো । এই বইটি তাঁকে উৎসর্গ করা হয়েছিলো । মাইকেল হিলম্যান (অনুবাদক ) এর একটি অসাধারণ বই A Lonely Woman এ ফররখজাদের জীবন এবং কবিতা নিয়ে একটি ডিটেইলস আলোচনা রয়েছে ।
গোলেস্তান ছিলেন ইরানের বিখ্যাত চিত্রনির্মাতা এবং বুদ্ধিজীবি । বিবাহিত এবং সন্তানের জনক হলেও ফররখজাদ এবং তার মধ্যে যে প্রেম সেটি সেই সময় তেহরানের আলোচিত বিষয়ের একটি ছিলো । ১৯৬০ সালের সেই আলোচিত প্রেম সমাজে খুব আলোচিত বিষয় হলেও ফররখজাদের কিইবা করার ছিল । হিলম্যান মনে করেন গোলেস্তান ফররখজাদকে ছেড়ে যেতে পারতেন কিন্তু দ্বান্দ্বিক এবং অস্থির মনের কাছে অসহায় ছিলেন তিনি । ফলে দেখা যেতো প্রতি রাতেই ফররখজাদকে ছেড়ে আসতেন সকাল হলেই ফররখজাদের কাছে ফিরতেন সেই তিনি । “Another Birth” কবিতায় প্রেমের এই ভাংচুর , অস্থিরতা ,উন্মত্ততা , উদ্বেগ , প্রেমের আবেশ এবং আকুলতা ঘুরে ঘুরে এসেছে ।
I know a sad little fairy
who lives in an ocean
and ever so softly
plays her heart into a magic flute
a sad little fairy
who dies with one kiss each night
and is reborn with one kiss each dawn.
সেই দুখী পরীটাকে চিনি
সমুদ্র পাড়ে থাকতো
প্রতিদিন তার হৃদয়
একটি ম্যাজিক বাঁশির শব্দে নাচত
একটা ছোট দুখী পরী
একটা চুমুসহ প্রতি রাতে মরে যেতো
এবং প্রতি ভোরে একটা চুমুতে জাগতো -
গোলেস্তানের সাথে এই প্রেম ফররখজাদের কবিতায় যে বিষাদ এবং দুঃখবোধের আবহ তৈরী করে তার সাথে প্লাথের কবিতার বিষাদের একধরনের ঐক্য দেখা যায় । ফররখজাদের হতাশ হবার অনেক কারণ ছিলো । যখন তার বয়স মাত্র ১৮ তখনি তার সাথে ডিভোর্স হয়ে যায় তার প্রথম স্বামী পারভেজ শাপুরীর সাথে । অথচ পারভেজ শাপুরীকে তিনি বিয়ের দুবছর আগে থেকেই বিয়ে করতেই চেয়েছিলেন । কিন্তু আইন এবং তার স্বামীর পরিবারের আপত্তির কারণে বিয়েটা সে সময় হয় নি । আবার তাদের যে সন্তান হয়েছিলো তাকেও তিনি নিজের কাছে রাখতে পারেননি । এইসব ঘটনা তাঁকে পুড়িয়েছে এবং পরে তিনি লেপারস কলোনি থেকে একটি শিশু দত্তক নেন । লেপারস কলোনী , তাদের যন্ত্রনা এবং দুঃখবোধ নিয়ে তিনি সিনেমা তৈরি করেন । তার নাম ছিলো The House is Black ‘ যেটি প্রশংসিত হয়েছিলো এবং গোলেস্তান এটি পরিচালনা করেছিলেন ।
গোলেস্তানের বিষয়টি একপাশে করলে Another Birth খুবই প্রাত্যহিক বিজয়গাঁথা । যেখানে প্রতিদিনের জীবনই প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা বিষয় সেখানে এই বিষয়গুলো খুব বেশী সাধারণ নয় ।
Life is perhaps
a long street through which a woman
holding a basket passes every day.
Life is perhaps
a rope with which a man
hangs himself from a branch.
Life is perhaps a child returning home from school.
Life is perhaps lighting up a cigarette
in the narcotic repose
between two love-makings
জীবন মনে হয় এক দীর্ঘ রাস্তা
ঝুড়ি সমেত এক নারী যে রাস্তা পার হয়
হয়তোবা একটি রশি
যার কোনো একটি শাখায়
মানুষ নিজেকে ঝুলিয়ে দেয়
জীবন এক শিশু যে প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে
অথবা একটা জ্বলন্ত সিগারেট
যার তীব্র নেশায় দু মানব-মানবী
ভালোবাসায় আচ্ছন্ন হয় ।
-এটি প্রতিটি বর্তমানের মূহুর্তকে ফোকাস করে এবং একটা দিক নির্দেশনা দিতে পারে সাহিত্যের অসীম জগতে লীন হতে হতে বিমূর্ত ধারণা দেয়াও অসম্ভব কিছু নয় । ফররখজাদ খুব আশ্চর্য হয়ে ভাবতে পারেন তার কবিতা কি এতোই মহৎ যে সময়ের স্রোতধারায় টিকে যেতে পারে ? সাহিত্য জগতে তার এক্সিস্টেন্স এবং নন এক্সিস্টেন্স কতটুকু প্রভাব ফেলবে ? অথচ বর্তমানে ফরফ ফররখজাদের জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে যা একসময়ে ভাবাও অসম্ভব ছিলো । তার জীবদ্দশাতেই তার পাঠক ছিলো প্রচুর । এবং পন্ডিতগণ মনে করেন বিংশ শতকের ফরফ ফররখজাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবি ।
ইরানের মানুষজন যেমন শিরিন নেশাত যিনি ফরফ এর বই visual peace হিসেবে সামনে রাখেন বলে ২০১১ তে নিউইয়র্ক টাইমসে উল্লেখ করেন । সেই সময়ের রাষ্ট্রযন্ত্র ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ফরফ ফররখজাদকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলো সেখানে বর্তমানে তার ভিন্ন ধর্মী সাহসী লেখার জন্য ইরানের রকস্টার হিসেবে পরিগণিত ।ফারজানে মিলানি ‘ ওয়াশিংটন পোস্টে উল্লেখ করেন ‘ ফরফ ফররখজাদ নিজেই একটি ব্রান্ড যা তার নামকে কেন্দ্র করে বেড়ে ঊঠেছে । ।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে ফররখ নিজের এই জনপ্রিয়তা এবং তার লেখার সমাদর পাঠক সমাজের কাছে এবং একজন বিশ শতকের গুরুত্বপূর্ণ কবি বলে বিবেচিত হয়েছেন সে দেখার সৌভাগ্য তার হয় নি । ১৯৬৭ সালে এনাদার বার্থ এর প্রকাশ এর তিন বছর পরেই ফরফ মারা যান । যদিও তার মৃত্যুর কারণ আজ ও রহস্যাবৃত রয়েছে । কেউ কেউ মনে করেন একটি স্কুল বাস এর শিশুদের বাঁচাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান আবার কেউ কেউ এই দুর্ঘটনাকে আত্মহত্যা বলেছেন । আবার দেখা যায় তার একটি কবিতার লাইন এইরকম “Let Us Believe in the Beginning of the Cold Season” এতে মনে হয় কবি হতাশায় আক্রান্ত এবং সেই বিষাদময় জীবনের অন্তিম তিনি চেয়েছিলেন ।
ফরফ একবার বলেন “ কবিতা আমার কাছে একটা জানালার মতো । যখনই ইচ্ছে হয় এই জানালা দিয়ে আমি ভেতরে প্রবেশ করতে পারি। আমি এখানে বসি , বাইরে দেখি , গান গাই , কাঁদি , চিৎকার করি , বৃক্ষের সাথে সংলগ্ন হই এবং আমি জানি জানালার আর এক পাশে যে পরিসর আছে সেখান থেকে কেউ কেউ আমাকে অনুভব করে এবং একশত বা দুশত বছর পরেও আমি তাদের ভেতর বেঁচে থাকতে পারি । এখন পৃথিবীতে থাকা না থাকার চাইতে বড় ব্যপার হলো যে এই আমার অস্তিত্ব না থাকলেও আমি রয়ে গেছি এবং বৃহত্তর অর্থে যেখানে আমি নিজেই অদৃশ্য হয়েও সকলের মনে প্রভাব বিস্তার করছি “
শাফো ও ফররখজাদের সুরে সুর মেলান
“You may forget but
Let me tell you
this: someone in
some future time
will think of us”
এবং টি এস এলিয়ট ও বলেছিলেন “Tradition and the Individual Talent” একই সাথে অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । ফরফ ফররখজাদ সাহিত্যের মন্দিরে তার স্থান কোথায় তা জানতে চাইবার ভান করেন নি। একনিষ্ঠ মনে সাহিত্য চর্চা করেছেন আরাধনার মতন ।
তার কবিতার বেশ কিছু জায়গায় সুফীজম এর সুর রয়েছে । এবং সেখানে কবি হাফিজের কথা স্মরণে আসে ।
“No fisherman shall ever find a pearl
in a small brook that empties into a pool,”
এই লেখায় চৌদ্দ শতকের সুফী কবিদের যেনো পাওয়া যায় । সত্যি হলো মুক্তো সমুদ্রে থাকে । তাদের পাওয়া যেতেও পারে আবার নাও পাওয়া যেতে পারে । কিন্তু কোনো মহৎ কবিতা লিখতে হলে ভাবের সাগরে নিমজ্জিত হওয়া জরুরী ।