লেখক --"মাইনুদ্দিন জাহেদ "

কবিতা আক্রান্ত  হতে হতে কেউ  শব্দভূক জল্লাদ হয়ে গেলে লিখে ফেলতে পারেন জলজ দ্রাঘিমা।

"অপেক্ষা ও উপেক্ষা দুটো নির্মম!  

ভেবে কেউ অনায়াসে  লিখে ফেলেন :

" রঞ্জনাও একা!  সে আছে কীর্তনখোলার পাড়ে।

আর আহাজারি:

কেনো ঠোঁটের কাছে নিয়ে এলে রাত্রি! কিংবা যখন বলেন:

হে আমার দু:সহ প্রেমিক- এই উঠোনে তোমার অবারিত দ্বার-
পদপৃষ্ঠে ভারী করো,
উন্নাসিক হও- আমি চাই পুনরায় সাকিন হতে
তোমার নগ্ন বক্ষে একটা ক্রিসেনথিমাম ফুল হয়ে
হৃদয়ে প্রবেশ করে জানাই আমি এখানেই ছিলাম, এখানেই থাকি
অথচ তুমি আমাকে ছুঁড়ে দাও খসে যাওয়া বিকেলের মতোন...


তখন নাজমুন নাহার পাঠকের দৃষ্টি কাড়েন বোধের গভীরতায় শব্দের কারুকাজে। মিথ যখন প্রসঙ্গ হয় তখনই নাজমুন নাহার   সাম্প্রতিক  হয়ে ওঠেন কবিতায় , মনে হয় তিনি নিবিষ্ট হয়ে আছেন আধুনিক  কবিতায়। আল মাহমুদের মত প্রচলিত 'মিথ্যাবাদী রাখাল' থিম ভাঙ্গার  দূ:সাহস দেখান নি সত্য , কিন্তু  অপ্রচলিত মিথ ব্যবহার করে  তিনিও কম ঝুঁকি নেন নি । তবে  কবিতার  অনুসঙ্গে আরও অনার্য কিংবা লোকজ পুরাণ নিলে কবিতার মার্গ ভাব যায় না বরং এলিয়টিয় নিজস্বতা নির্মান হয়। প্রচলিত লোককথা, রূপকথা,সংস্কার,পুরাণ কিংবা টোটেম বা মিথের মুল ব্যঞ্জনাকে অতিক্রম করে পাষ্পরিক ব্যঞ্জনাবিন্যাসে পৃথক হওয়া নিয়ে টি এস এলিয়টের কথায় আসি:
"No poet, no artist of any art, has his complete meaning alone. His significance, his appreciation is appreciation  of his relation to the dead poets and artist. You can not value him alone; you must set him, for contrast and comparison among the dead... The existing moments from an ideal order among themselves, which is modified by the introduction of the new (the really new) work of art among them. The existing  order  is complete  before the new work arrives; for order to persist after the superven-tion of novelty,  the whole existing  order must be,if ever so slightly, altered; and so the relations, proportion, values  of each work of art toward the whole are re-adjusted; and this is the conformity between old and new."( 'Tradition  and Individual Talent'/ ' Selected Prose' : T. S. Eliot;1958;p:58)

ঐতিহ্যকে শিকড়ে অনুভব করেও নব সৃষ্টির নানা বৈচিত্র্য উন্মোচন সম্ভব। তখন নাজমুন নাহার,  কবিতা পাঠকের রুচিময় আহার হয়ে উঠতে পারেন। কবিতো কবিদ বা জ্ঞানী, তিনিতো ভাষাতে, জনরুচিতে , ভাবনাতে  এগিয়ে থাকবেন অগ্রসরমান মনোচৈতন্য বলে।

প্রথম কাব্যগ্রন্থ : মরু শহরে এক মেঘনারী(২০১৪) পড়া হয়নি, যৌথকাব্য : আড়াইশব্দ(২০১৬,তরুণ কবি হেলাল জহির এর সাথে) পড়েছি।
আশা জাগরুক পংক্তি ছিলো সোয়া শব্দে, তৃৃষাও জাগিয়েছিলো মননে। তৃতীয় কাব্য জলজ দ্রাঘিমায় নাজমুন নাহার নাজ আধুনিক পাঠকের চিন্তার সূত্রকে পংক্তিতে পংক্তিতে যূথবদ্ধ করেছেন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাঞ্জনায়। সতৃষ্ণনয়ন যেন কবিতার ভাঁজে ভাঁজে, শব্দের কারুপল্লবে।শুভ কামনা কবি ও কবিতার জন্য।

জলজ দ্রাঘিমা: কাব্য, লেখক নাজমুন নাহার।প্রকাশ: একুশে বইমেলা-২০১৬। প্রচ্ছদ: রেজওয়ানা হাসান,ক্যালিগ্রাফি : কাজী সাইফুল হহক। প্রকাশক: আলী প্রয়াস,  তৃতীয় চোখ। পরিবেশক: বেহুলাবাংলা, গদ্যপদ্য, নন্দন, বাতিঘর। মূল্য: ১৪০  টাকা।
..............................
মাঈন উদ্দিন জাহেদ
..............................
২০.০৩.২০১৬