কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের শিশুকিশোর সাহিত্যের অন্যতম মহীরুহ । জীবনের নানা দ্বন্দ¡, সংঘাত ও পোড়নে তাঁর শৈশব কেটেছে ।তথাপী শিশুতোষ ছড়া- কবিতা রচনায় নজরুল ছিলেন বৈচিত্র্য প্রয়াসী । ছন্দের পরীক্ষা- নিরীক্ষা, নতুন বিষয় নির্বাচন, এমনকি শৈলী নির্মাণেও নজরুল নিজস্বতার পরিচয় দিয়েছেন। নজরুলের শিশুকিশোর মাটিগন্ধি, সেই ক্ষেত থেকে উঠে আসা, সেই জলা থেকে উঠে আসা । তাঁর শিশুতোষ ছড়া কবিতায় শুধু শিশুদের কৌতূহল নয়, বরং তাদের বঞ্চনা, লাঞ্চনা ও উৎপীড়নের কথাও উঠে এসেছে। তাঁর বিখ্যাত শিশুতোষ ছড়ার বই ‘ঝিঙেফুল’।
আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি
সূর্য্যমিামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে
‘হয়নি সকাল ঘুমো এখন’ মা-বলবেন রেগে (খোকার সাধ, কাজী নজরুল ইসলাম)
কিংবা
মাগো! আমায় বলতে পারিস
কোথায় ছিলাম আমি
কোন-না জানা দেশ থেকে তোর কোলে এলাম নামি?
আমি যখন আসিনি, মা তুই কি আঁখি মেলে
চাঁদকে বুঝি বলতিস
-ঐ ঘরছাড়া মোর ছেলে?
শুকতারাকে বলতিস কি আয়রে নেমে আয়
তোর রূপ যে মায়ের কোলে বেশী শোভা পায় (কোথায় ছিলাম আমি/কাজী নজরুল ইসলাম)
নজরুলের বেশির ভাগ ছড়া কবিতাই সংলাপ প্রধান । সংলাপ প্রধান ছড়াকবিতার মাধ্যমে শিশুরা নিজেরাই এতে একাÍ হতে পারে, খুকী ও কাঠবেড়ালী কবিতায় খুকী কাঠবেড়ালীর সাথে যেভাবে কথা বলে শিশুদের এই মানসিক প্রবণতা ধরতে হলে নিজেকে শিশু হিসেবে আবিষ্কার করার একটা ব্যপার থেকেই যায় ।
কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি পেয়ারা তুমি খাও?
গুড় মুড়ি খাও? দুধভাত খাও?
বাতাবি লেবু? লাউ? বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর ছানা? তাও?
ডাইনি তুমি হোৎকা পেটুক?
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
(খুকি ও কাঠবিরালি, কাজী নজরুল ইসলাম)
কিংবা
ও ভাই কোলাব্যাঙ
ও ভাই কোলাব্যাঙ
সর্দি তোমার হয় না বুঝি
ও ভাই কোলা ব্যাঙ
সারাটি দিন জল ঘেঁটে যাও
ছড়িয়ে দুটি ঠ্যাঙ।(ও ভাই কোলাব্যাঙ, কাজী নজরুল ইসলাম)
নজরুলের ছড়ায় রয়েছে বহুমাত্রিক বৈচিত্র্য । বৈচিত্র্য বিশেষ করে ছন্দ ও শৈলীতে।
ঠ্যাং চ্যাগাইয়া প্যাঁচা যায়
যাইতে যাইতে খ্যাঁচখ্যাচায়
প্যাঁচায় গিয়া উঠল গাছ
কাওয়ারা সব লইল পাছ
প্যাঁচার ভাইস্ত কোলাব্যাঙ
কইল চাচা দাও মোর ঠ্যাং
প্যাঁচায় কয় বাপ, বাড়িতে যাও
পাছ লইছে সব হাপের ছাও
ইঁদুর জবাই কইর্যা খায়
বোঁচা নাকে ফ্যাচফ্যাচায়। (প্যাঁচা,কাজী নজরুল ইসলাম)