পৃথিবী ছোট হয়ে এসেছে । যোগাযোগ এখন হাতের মুঠোয় । ইচ্ছে করলেই আপনি /আমি পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে যোগাযোগের ধারা অব্যাহত রাখতে পারি । কিন্তু এর জন্য দরকার ভাষা ।তাই পৃথিবীর সব ভাষার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা । শারীরিক সক্ষমতা আর ভাষার ব্যবহারে আমরা সামাজিক এবং একই সাথে আন্তর্জাতিক ।
আজকাল একটা ভাষায় শুধু সীমাবদ্ধ রাখতে পারিনা নিজেকে আমরা কারণ আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয় ।পড়াশোনা , ব্যবসা , চাকুরী ,সিনেমা -নাটক বানানো , রিসার্চ কাজ এরকম -সব কিছুর জন্যই তো ভাষা প্রয়োজন ।আজকে যখন হিন্দী চ্যানেলগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখি একধরণের পুলক অনুভব করি ।।তাই আমি মনে করি না ভিন্ন ভাষার ব্যবহারে নিজের ভাষার ক্ষতি হতে পারে ।এত ব্যাপক জনগোষ্ঠি যে ভাষায় কথা বলে সে ভাষা হারিয়ে যাওয়া এত সহজ ব্যপার নয় ।হিন্দী চ্যানেলের আধিপত্যে আমাদের ভাষার ক্ষতি হচ্ছে মানি কিন্তু আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যত ভাল হিন্দী বলতে পারে ওরা এত সুন্দর বাংলা বলতে পারবে না । ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অনেকগুলো ভাষা জানতেন তার মানে এই নয় যে তিনি বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করেছেন ।বরং বাংলা ভাষা আরো সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর গুণী হাতের ছোঁয়ায় ।
ভাষার প্রতি আত্মত্যাগ মানে হল নিজের ভাষাকে শ্রদ্ধা করা একই সাথে পৃথিবীর সব ভাষার প্রতিও শ্রদ্ধা জানানো । তবে বাংলা ভাষা একটা মিশ্র ভাষা । কত ভাষার মিশ্রনে এই ভাষা নদীর মত এঁকে বেঁকে যাচ্ছে । মধ্যযুগের সাহিত্য , আঠার শতকের সাহিত্য আর বর্তমান ধারার সাহিত্যের মধ্যে তাই ব্যাপক একটা পার্থক্য ।ভাষার ব্যপারটিই এরকম । আবার মুখের ভাষাও পরিবর্তন হচ্ছে । এটা হবেই , কারণ আমরা এক দেশের সংস্কৃতির মধ্যে শুধু নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে পারি না ।সংস্কৃতির কাজই হচ্ছে ভিন্ন দেশের সংস্কৃতির সাথে নিজেদের সংস্কৃতির লেনদেন ।এটা হবেই ,কারণ গ্লোবাল ভিলেজ এফেক্ট । আজকের ফেস বুক সংস্কৃতি এটাও এই গ্লোবাল ভিলেজের অবদান । এতে খারাপ কিছু কি হয়েছে ? আমার তো মনে হয় বাংলা ভাষার ব্যবহার এত বেড়েছে এবং দুই বাংলার মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা বেড়েছে , সাহিত্য চর্চা বেড়েছে । যে ছেলেটি কবিতার দিকে ঘুরেও তাকাতো না সেও এখন অনেক ভাল ভাল কবির সুন্দর লেখা পড়ে মুগ্ধ হচ্ছে নিজেও কিছু লেখার চেষ্টা করছে । এরকম বহু উদাহারণ আছে ।
আজকে যারা প্রবাসী সারাদিন একটু বাংলায় কথা বলার জন্য প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছে তারা ব্লগ ইন্টারনেটে ফেসবুকে বাংলায় কথা বলছে , যাদের সাহিত্য চর্চার অভ্যেস আছে তাঁরা সাহিত্য চর্চা করছেন , প্রবাসে থেকেও দেশের গন্ধ পাচ্ছেন দেশকে অনুভব করছেন প্রতিদিন – এই প্রাপ্তিও অস্বীকার করতে পারি না । তাই গেল গেল বলে হাহাকার করার কিছু নেই । যে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন আমাদের শহীদ ভাইয়েরা তাদের ভুলবোনা – আমাদের ভাষার অমার্যাদাও আমরা করবো না কেননা ভাষা তো প্রাণ ,বাংলা ভাষা আমার কাছে অক্সিজেনের মত,প্রাণদায়িনী । এই ভাষার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ , যে ভাষায় আমি মা ডাকি , সন্তানের কাছ থেকে শুনি মা এর মত মধুর ডাক , গান শুনি , কবিতা লিখি , পড়ি , গল্প উপন্যাস পড়ে স্বর্গীয় আনন্দ অনুভব করি , জীবনের পরতে পরতে উপলদ্ধি করি ভাষা ছাড়া আমি কত অসহায় ।