সেদিন সন্ধ্যা কালে,
দেখি নদী কূলে,
বট বৃক্ষের ছায়াতলে -
বসে আছে এক হতভাগা দুচোখ অদূরে মেলে।
ঠাঁই নাই তার কোল নাই, নাই লাজ শরম
তার শরমে শরমিত হই আমরা যত আদম।
ঘর নাই তার বসত নাই, নাই কোন জাত-পাত
নিশি প্রহরে তার কুঠিরে ভদ্রদের যাতায়াত।
তাই দেখে,
ফ্যালফ্যাল করে তাকায় রয় সে, মুখে নাহি বুলি ফোটে
কি বা হবে বুলি ফোটায়ে? ভাত কি আর তাতে জোটে?
পেটের খিদা সবারই লাগে তাইতো এত আয়োজন
সারাদিনের কষ্ট শেষে সান্ধ্যপূজোয় থাকে কি আর মন?
একমুঠো সুখের লাগিয়া, আলিঙ্গনটা বড্ড প্রয়োজন।
কোমল হাতের পেলব দেহ,
লুটোপুটি করে লেহ,
আপাদমস্তক কত স্নেহ,
কায়া যেন নয়, মধুতে মাখা মহামোহ।
আতর-কর্পুরের গন্ধে তার মৌ মৌ সুভাষ অঙ্গ জুড়ে,
যা চাই তার সবই আছে, হতভাগা (!) তবুও কেন অন্তর পোড়ে?
মন আছে তার, ভাবনা আছে, বলার আছে মনের জ্বালা,
প্রেম আছে, আবেশ আছে, আছে সুখ-দুঃখের মিলনমেলা।
কিন্তু এই ভুবনে,
কে বুঝিবে হায়! অভাগার ভাবনা, শুনবে তার গোপন কথা,
সেধে সেধে কি আর যায় বোঝানো নিজ কুটিরের মর্মব্যাথা।
নির্মোক রুপে, নির্লোভী সে, আত্ম করে বলিদান
মানব সংসারে বিরাজ করে, জগত জুড়ে মূর্তিমান।
নারী সে, প্রিয়া সে, ঘন নীল মেঘে জ্যোতিষ্মান।
ঝর্ণা ধারায় উন্মাতাল,
বসন্ত হাওয়ায় প্রেমাতাল,
চাঁদনী রাতে টালমাটাল,
তারা ভরা পূর্ণিমাতে উথালমাতাল চিরকাল।
আপন রূপের সম্মোহনে নিজেকে হারায় বারংবার
দ্যুলোকে-ভ্যূলোকে, স্বর্গে-মর্ত্যে, অনন্তে দুর্নিবার।
নারীর আছে নয়ন, আছে যৌবন, আছে সম্মোহন,
এইতো জানে সর্বজন, নারীর যে আছে মন-জানে কতজন?
তাই তো আজ,
নারীর নারীত্বকে লেপন করে কত নামে সাজাই তাকে,
জায়া- জননী, কন্যা-ভগ্নী বাহুলগ্নে যতনে থাকে।
নারীর যে আছে আশা, ছোট ছোট ভালোবাসা,
কভু নাহি ভাবি, জানি সে তো প্রেমদায়িনী, ভোগপিপাসা
নারী মন সর্বনাশা, হারায় দিশা, তবু চাই দিবা-নিশা।
কুমারী- সে নারী,
কুলক্ষয়কারী, অভিসারী,
কলঙ্কিনী, স্বপনচারী- সে নারী
কৃচ্ছ্বসাধনকারী, কান্ডারী তবুও সে-ই নারী।
জগতের যত দোষ আছে -শতশত- আদি হতে অন্ত,
স্বর্গ থেকে বিতাড়িত, মর্ত্যে নিগৃহীত, নারীর তন্ত্রমন্ত্র।
নারীকে যতই দোষী কর, দোষ দেওয়া কি এতই সোজা?
স্রষ্টা সৃজিছে অপূর্ব ব্যঞ্জনে, সুভাসিত অঙ্গনে, জাফরানী-ফিরোজা।
এই কারণেই,
কত ত্যাগ, কত কষ্ট, সুখ-দুখ বিসর্জনের পর,
ভূপৃষ্ঠে জন্ম মানব তোমার, জননী সামলায় ঝড়।
রূদ্রময়ী নারী, নারীর তেজে জাজ্বল্যমান ত্রিভুবন,
তব তেজকে অসম্মান করে, ভীরু-কাপুরুষ সে কোন জন?
নারীসত্ত্বা, জায়া- জননী, কন্যা-ভগ্নী, পূজ্যনীয় সর্বজন।