প্রতিটি দিন আপনজনকে নুতন নুতন কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করুন"
এই কথা কয়টি কবি ফারহাত আহম্মেদ তাঁর "দাবায় রাখতে পারবা না" কাব্যগ্রন্থটি আমাকে উপহার দেয়ার সময় স্নেহ পরবশ অটোগ্রাফসহ লিখেছেন।
কবি ফারহাত আহম্মেদ অসাধারণ মনের একজন মানুষ। যেমন তার লেখা, ব্যক্তি কবি হিসাবেও ঠিক তেমনি । প্রতিদিনের অবস্থাকে তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষায় যে গভীর উপলব্ধি দিয়ে চারপাশের পরিস্থিতিকে প্রকাশ করেন তা সত্যিই অতুলনীয়।
কবিতা অন্তঃপ্রাণ বলতে যা বোঝায় কবি ফারহাত আহম্মেদ হলেন তেমনি একজন মানুষ। কবিতার জীবনে তার কোনো ছন্দপতন নেই। করোনার মহামারীতে সাংঘাতিকভাবে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি একদিনও কবিতা লেখা বন্ধ করেননি।
বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ মানুষই বড় লেখা বা কবিতা পড়তে চায় না। সেক্ষেত্রে আমার এই প্রিয় কবির লেখার ধরণটাই তাদের পছন্দ । ছোট ছোট ছন্দে ভরা ছোট ছোট কবিতায় যে ম্যাসেজ থাকে, বিশাল তার ব্যপ্তি। আমার ছোট ভাই, যে কোনোদিনও একটা উপন্যাস বা কবিতার বই পড়েনি, সেও সম্মানিত কবি ফারহাত আহমেদ-এর একজন দারুণ ভক্ত। ওঁনার কবিতার স্পষ্ট তীর ছোড়াটা নাকি ওর ভীষণ ভালো লাগে।
সম্মানিত প্রিয় কবি'র দ্বাদশ প্রকাশিত বই "দাবায়ে রাখতে পারবা না" সব জেনারেশনের কাছেই ভালো লাগার মতো একটা কবিতার বই।
বইটিতে কবি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর কথা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত প্রায় ১৩-১৪ টা জায়গার গণহত্যার ইতিহাস উল্লেখ করেছেন নিপুন পটুতার সঙ্গে। যা এখনো পর্যন্ত এমন ভাবে কবিতায় কেউ বাংলাদেশের ইতিহাসকে তুলে ধরেনি। তাই এটি একটি উল্লেখযোগ্য কবিতার বই।
ছোট্র ছোট্র কবিতায় মুজিব পরিবার থেকে শুরু করে আপামর সাধারণ মানুষের কথাসহ বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাসও তুলে ধরেছেন। কবিতা অথচ তা যেনো ধারাবাহিক গল্পের মতো সাজানো কথামালা।
কবিতায় যে বিশেষ জায়গাগুলির নাম উঠে এসেছে, তা হলো,খুলনার চুকনগর, জিঞ্জিরা, শুভাড্যা, কালিন্দি, লালখান বাজার, আলমডাঙ্গার লাল ব্রীজ, হবিগঞ্জের মাকালকান্দি, পাঁচগাঁও, বাগেরহাট, দামপাড়া , চট্রগ্রামের মিরেশ্বরাই, পশ্চিম হিঙ্গুলী, ঠাকুরগাঁও এর জাটিভাঙা এবং রাজারবাগ বধ্যভূমি।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর হিসাবে জঘন্য কাজ করেছে এমন কিছু কিছু ব্যক্তির নাম কবি সরাসরিই উল্লেখ করেছেন।
ত্রিশটি কবিতা। প্রতিটি কবিতাই যেনো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের এক একটা গল্প।
"বঙ্গবন্ধু" "জয় বাংলা" "পিতা" "সকল দেশের সেরা" "ফিল্টার" "দাবায়ে রাখতে পারবা না" কাব্যগ্রন্থের এমন প্রতিটা কবিতাতেই কবির দেশ প্রেমের ও দ্রোহের প্রকাশ সমানভাবে ফুটে উঠেছে।
আমার কথাতে কতটা স্বচ্ছতা রয়েছে তা পড়লেই আপনারা বুঝতে পারবেন।
দাবায়ে রাখতে পারবা না" প্রতিটি বাঙালির জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বই। যে একবার পড়বে আশাকরি তার বারবার পড়বার ইচ্ছে জাগবে।
আগামি প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এমন স্বচ্ছ ইতিহাস নির্ভর লেখা আমি আমার সম্মানিত প্রিয় কবির কাছ থেকে আরো বেশি বেশি চাই।