আমার রুমের জানালা দু'টিকে
মাঝে মাঝে আমার পৃথিবী মনে হয়।
মনে হয় বললে ভুল হবে
আসলেই আমার পৃথিবী।
একজন উত্তরে থাকে
আর একজন থাকে পশ্চিমে।
দুই জনের বৈশিষ্ট্য দুই রকমের
দুই রকমের স্বভাব, কোন মিল নেই।
উত্তর পাশের জন
সারা বছর বেশ ভালোই থাকে।
তবে কষ্ট দেয় শীত কালে
সে এক তীব্র কষ্ট।
শীত কালে তাকে খোলা মানে
হাড় কাঁপুনি শীতের বাতাসে
মরার মত অবস্থা।
কোন ক্রমেই তাকে খোলা সম্ভব নয়।
কিন্তু এ সময় পশ্চিমের জন বেশ শান্তি দেয়।
শীতের কয়েক মাস
পশ্চিমের জানালায় বেশ মজার
রোদ পাওয়া যায়।
রোদ টা বেশ উপভোগ করি।
কেমন যেন একটা ভালোবাসা কাজ করে,
সে এক অন্য রকম ভালোবাসা।
তবে দুঃখের বিষয় হলো এই যে,
পশ্চিম পাশের জন আবার
গরমের সময় খুব কষ্ট দেয়।
এ কষ্ট শীতের থেকেও বেশি,
মাঝে মাঝে তো রুমে থাকাটাই
মুশকিল হয়ে যায়।
উত্তর পাশের জন এই সময়
মুচকি মুচকি হাসে।
কোন কথা বলে না, চুপ থাকে।
তার কাছে একটু ঠান্ডা বাতাস চাইলেও,
সে কিছুতেই দেয় না।
আমিও তাকে কিছু বলি না,
একা একাই অভিমান করি।
আমার জানালা দু’টির কাছে
আমি অনেক ঋণী।
অবশ্য এ ঋণ শোধ করতেও চাই না।
কিছু ঋণ থাকে ভালোবাসার।
কিছু ঋণ কখনোই পরিশোধ করা যায় না।
আমার জানালা দিয়ে আমি
আকাশ দেখি, দেখি বৃষ্টি,
দেখি জ্যোৎস্না, দেখি মেঘ, চাঁদ, পাখি।
দূরে কিছু দালান দেখা যায়
তার পিছনেই আকাশের সীমানা।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে
ঐ দালান গুলোতে গিয়ে,
আকাশের সীমানা দেখে আসি।
সূর্যটাও দেখি ঐখানেই অস্ত যায়,
গেলে হয়তো তার দেখাও পাবো।
দরজা এবং জানালার পার্থক্য এটাই
দরজা দিয়ে যাওয়া এবং আসা যায়
জানালা দিয়ে যায় না।
জানালায় দাড়িয়ে ভালোবাসা যায়,
দূর থেকে ভালোবাসা যায়।
কখনো কাছে যাওয়া যায় না।
আমি দূর থেকেই ভালোবাসতে জানি
কাছে যেতে চাই না,
পাছে হারিয়ে ফেলেবো এই ভয়ে।
বারবার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার মত কষ্ট,
পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই।
আমি যা পেয়েছি তা নিয়েই
বেঁচে থাকতে চাই।
হারানো বা বেশি পাওয়ার
দু'টোর একটিও আর আশা করি না।
সুতরাং এ কথা অকপটে
বলা যেতেই পারে,
আমি আর জানালা সমান্তরাল।
এখন একটাই আশা
আমি আকাশের মত বিশাল নয়
জানালা হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।