আমার কোন ভালো লাগা নেই,
কারণ আমার ভালো লাগার কোন মূল্য নেই,
'মেয়েদের ইচ্ছা, ভালোলাগা বুঝি থাকতে নেই'
প্রশ্নটা একবার সাহসের সঙ্গে করেছিলাম।
উত্তরটা ছিল 'যা ইচ্ছা তাই করো, আমাকে কিছু বলতে এসো না –'
সজোরে 'হ্যাঁ' বলার আগেই
আমাকে বিদ্ধ করা হলো 'মেয়েছেলে' বলে–
' একা মেয়েছেলে শহরে যাবে! সাহস তো কম নয়? ছেলেমেয়েদের কে দেখবে? সংসারের কি হবে?
যতটুকু সুযোগ দিয়েছি, অনেক দিয়েছি,
ঘরে থেকেই,,,,,,,'
মনে কষ্ট হলেও নিজেকে সংযত করে নিলাম।
এইভাবে প্রতিটা চাওয়া ভালো লাগা
একটু একটু করে বুকের মধ্যে থাকা
নৈরাশ্যের গোরস্থানে পুঁতে দিতে থাকলাম।
কেটে গেল দেড় যুগ!
এভাবেই,
সমুদ্র পাহাড় জঙ্গল দেখার ইচ্ছাটা আর প্রকাশ করি না।
সব ইচ্ছের ফুল ফোটে না,
সব ইচ্ছের ডানায় রঙ ছুঁতে পারে না জেনে
আর কষ্ট পাই না;
প্রথম প্রথম অভিমান করেছি,
অশ্রু বইয়ে একা নিজেকে ঘরের কোণে আড়াল করেছি,
কখনো উপোস করেও ইচ্ছে পূরণের চেষ্টা করেছি!
কত অভিমান ইচ্ছে কতভাবে জানিয়েও
কোনদিন কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে বলেনি
'ঠিক আছে তাই হবে'
কিংবা 'একদিন সব হবে'
জানিনা সবার ক্ষেত্রে এমন হয় কিনা!
এখন আর তেমন ইচ্ছা আসেনা,
ইচ্ছেরা কেমন যেন এখন অনিচ্ছার আচ্ছাদনে ঢাকা গেছে,
এখন আর উপোস করি না,
নিঃশব্দে কান্না করে বালিশ ভেজাই না,
যেখানে তিন দিন উপোস করলেও
কেউ জানবে না বা জানতে চাইবে না
খেয়েছি কিনা,
রাত জেগে ভোরে ঘুমিয়ে ছটায় উঠলাম কিভাবে
সেটা কেউ জানতে চাইবে না,
শুধু ছটা পেরোলে ই তীরের মত প্রশ্ন ছুটে আসবে–
' এত ঘুম কিসের?'
প্রতিশোধ নিতে জল খাবার না খেয়ে
মুখের উপর বলে যাবে 'দুপুরে খাব না,
আমার জন্য রান্নার প্রয়োজন নেই।'
আর আগের মত কাঁদি না,
চিৎকার করে কাঁদলে তো
অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ মামুলি,
তবু কান্না থামানোর একটা হাত মাথায়
কিংবা অধর ছুঁয়ে যাবে না।
যে সংসারটাকে আগলে
বিসর্জন দিয়েছি সমস্ত চেনা গন্ডি,
সেই সংসার কারণে অকারণে যখন বলে
' আমার ঘরে থাকতে হলে
আমার কথায় চলতে হবে '
কিংবা, ' ভালো না লাগলে বেরিয়ে যাও '–
তখন নিজেকে আগাছা ছাড়া
আর কি মনে হতে পারে?
এখানে আমি কে,
আমার নিজস্বতা কোথায়?
যদি থাকতো লেখাপড়া থামিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে
পাত্রস্থ থেকে সব ইচ্ছাকে শৈশব থেকেই
তো বিসর্জন দিতে হয়েছে!
মা ঠাম্মার কাছে শুনে এসেছি
' মেয়েদের ইচ্ছে থাকতে নেই,
বেশি চাওয়া থাকতে নেই,
জেদ থাকতে নেই,
উচ্চ স্বরে কথা বলতে নেই'
' ঘরের বউয়ের রোজগার করার প্রয়োজন নেই,
ঘরের বউ, পুরুষ জাতির সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আছে'!
ভরণপোষণ ঔষধ জামাকাপড়
এর বাইরে
আর কি প্রয়োজন থাকতে পারে মেয়েদের?
একটু-আধটু শরীর খারাপ মন খারাপ
চেপে রাখতে না পারলে দুর্ব্যবহার
শিকেয় ঝুলে আছে,
টপ করে ছুঁয়ে দেবে তোমায়,
মেয়ে মানুষের একটু সহ্য করতেই হয়,
'যে গরু দুধ দেবে, সে যে লাথি মারবে না–এটা কিভাবে হয়?
টিকে থাকতে হলে সইতে হয়'–
আসলে এই পৃথিবীটা
এখনো পুরুষের একার দখলে রয়েই গেল;
কেবল নারীর কোন ঘর হলো না,
নারীর কোন পর হলো না,
সন্তান হলো না,
নারী মা ও হতে পারলে না;
কেবল বরের সাথে শ্বশুর বাড়িতে
সন্তানের জননী হয়ে
থেকে গেল,
পৃথিবীতে নারী কেবল পুরুষের অধীন হয়ে
পুরুষের প্রয়োজন হলো;
এ পৃথিবী নারীর হলো না,
নারী এখনো মানুষ হলো না,
মানুষ পরিচয়টা কবে আসবে কে জানে!
হয়তো অনেকেই রে রে করে উঠে বলবেন–
' মেয়েছেলের আবার পৃথিবী কি গো!
মেয়ে মানুষের পৃথিবী তো পুরুষমানুষ,
নারী তো মেয়েমানুষ!
পিতা স্বামী পুত্রই তো নারীর পৃথিবীর কর্ণধার,
চিরকাল পুরুষই তো নারী জাতির নিয়ন্ত্রক শক্তি,
তার আবার কেন পৃথিবীর মালিকানা চাই'!!