ভাগাভাগির আটাত্তর বছর পরেও
ভাঙা ভাঙি বন্ধ হয়নি,
বরং প্রতিদিন ভাগ হয়ে যাচ্ছি–
কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান, কেউ খ্রিষ্টান এ–
ভাগ হয়ে যাচ্ছি ভিন্ন ভিন্ন জাতীয়তাবাদে!
ভাগ হয়ে যাচ্ছি ঠুনকো স্বার্থে!

আর ভাগ হতে হতে আমরা
খুব ছোট হয়ে যাচ্ছি
খুব একা হয়ে যাচ্ছি!
ভুলে যাচ্ছি, পূর্বপুরুষের হাড় পোঁতা মাটির গন্ধ,
ভুলে যাচ্ছি মাসি পিসির স্নেহ,
পাড়া পড়শীর চেনা মুখ!

আমরা ভুলে যাচ্ছি,
এ ভাগ হওয়া টা ছিল
সেদিনের  দূরদর্শী ষড়যন্ত্র,
কৌশলগত ম্যাসাকার!

করিম চাচার বাড়িতে এখন শাঁখ বাজে,
নবারুণ কাকু আজও নিঃস্ব–
ফুটপাতে চা বেচে,
তারা ভাগ  হয়েছিল দুই দেশে!
এখানে প্রাণ যার, ওখানে ধড় তার
মায়ের বুক থেকে ছিটকে পড়া–
যে শিশুটি বলেছিল 'এবার থামো–'
সে শিশুটির বুক ঝাঁঝরা হয়েছিল গুলিতে,
প্রাণভয়ে যে মা তিন রাত তিন দিন
ভাঙ্গা কবরের মধ্যে শিশুর মুখ চেপে বসে ছিল
সে এখন ভিনদেশী–জানেনা কেন?
মাটিতে চাপ চাপ রক্তে
পা পিছলে আছাড় খাওয়ার কথা শুনেছি
এক ভুক্তভোগী মায়ের মুখে,
কার রক্ত ছিল তিনি জানেন না,
কিন্তু সে পিছলা পথ যে ছিল রক্তে ভেজা
চিনতে ভুল হয়নি তাঁর,
রক্ত মেখে কিভাবে যেন বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তাঁরা!
মন গড়া ধাঁচে ওরা বিচ্ছিন্ন হয়েছে,
ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়েছে সম্পর্ক, স্বপ্ন–
কার মাঠে কে যায়,
কার ঘরে কে রয়
ওরা জানেনা!
শুধু জেনেছে দেশ ভাগ হয়েছে,
জেনেছে ধর্ম দিয়ে মানুষ ভাগ হয়েছে,
ওরা ভেঙে যেতে দেখেছে
ধর্মে, বর্ণে, জাতিতে–কখনো বা ভাষায়!

দেশভাগের আটাত্তর বছর পরেও
ভাগাভাগি অব্যাহত,
প্রতিনিয়ত মানুষ ভাগ হয়ে যাচ্ছে,
মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে,
তারা ভুলে গেছে এ ভাগের আরেক নাম ছিল স্বার্থ,
অন্য আরেক নাম ছিল উচ্ছেদ
যার বিকল্প হৃদয়ের মন্বন্তর,
যে ভাগ ছিল মেরুদন্ড ভাঙার আরেক নাম,
মায়ের বক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া
একটা পাঁজরের নাম!!