আমার বাবা
নরেশ পাটঘরা
আমার যেদিন জন্ম হয়েছিল
বাবার কি ভীষণ আনন্দ,
সারা বাড়ি নেচে বেড়িয়েছিল আর
সবাইকে ডেকে ডেকে বলেছিল,
"আমার বাড়িতে আজ লক্ষ্মী এসেছে"।
আমি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলাম
আমার বাবার আদরের রানী।
সারাদিন কাজের পরে
বাবা বাড়ি ফিরে এসে
আমার গাল ভরিয়ে দিতো চুমু খেয়ে খেয়ে।
আমি বাবাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে
সব সময় একটা চুমু বেশিই খেতাম বাবার চেয়ে।
আমি যখন মাস্টার ডিগ্রী পাস করলাম।
বাড়ির সবাই মিলে আমার সম্বন্ধে ঠিক করল।
ছেলে নাম করা আহা মরি এমন কেউ নয়
তবে সু শিক্ষিত ,মার্জিত।
বিয়ের আসরে ছেলের বাবা বলল,
এবার মেয়েকে সম্প্রদান করুন।
ছেলের জেঠু বলল, এবার মেয়েকে ছেলের
হাতের দান করুন।
বাবা বললো, না।
আমি মেয়েকে দান করতে পারবো না।
আমি বাবার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
বাবা কি বলছে, এত লোকের সামনে!
আমাকে তবে কেন বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়েছে?
বাবা সবার সামনে হাত জোড় করে
বিনয়ের সঙ্গে বলল,
আমার মেয়ে কি কোন বস্তু
যাকে আমি দান করবো?
যাকে আমি এত ভালোবাসা দিয়ে ,আদর দিয়ে
বড় করেছি। আমি আমার মেয়েকে
দান করতে পারবো না।
তাতে যদি আমার মেয়ের বিয়ে না হয়
কোন দুঃখ নেই। সারা জীবন
আমার কাছে রাখবো।
কিন্তু
সমাজের এই কুসংস্কার আমি মানি না।
মেয়ের বাবাকে ছোট করার এই হীন প্রথা
আমি মানতে পারব না।
বাবার কথাগুলো শোনার পর
আনন্দে আমার চোখ ভরে জল গড়িয়ে পড়ল।
আমার বাবার জন্য গর্বে বুক ভরে গেল।
মনে মনে বললাম, হে ঈশ্বর তোমার
অসীম করুণা যে এমন বাবা পেয়েছি আমি।
হবু বর স্বপ্ননীল এতক্ষণ
সব শুনছিল ।সেই আমার বাবাকে বললো,
আমি দান চাই না ,আপনি
আমাকে আমার সহধর্মিনী করে আমার
সঙ্গে থাকার অনুমতি দিন।
আমি সারা জীবন ,তার দায়িত্ব নেব।
সব সময় বন্ধুর মত পাশে থাকবো-
সব স্বপ্ন ,আশা -আকাঙ্খা পূরণের
সাধ্যমত চেষ্টা করব ।
বাবা সবার মাঝে আমাদের দুজনকে
দুহাতে বুকে চেপে ধরে বলল,
আমার আশীর্বাদ ,তোমাদের কুসংস্কারমুক্ত
আলোর পথ হোক ,নতুন চলার পথ।
দূর থেকে এখন আমি প্রতিটি মুহূর্ত
বাবাকে খুব মিস করি।