ফাগুন আসে, রঙ ছুটে যায় বাতাসের গায়ে, হাত থেকে হাতে ঘুরে যায় লাল, নীল, সবুজ, বিকেল বেয়ে নামে বাদ্যের ঢেউ, শহর মাতোয়ারা হয় উৎসবের ঘোরে। কিন্তু কে যেন শোনায় শুষ্ক এক সুর— "এই রঙ কি ধুয়ে দিতে পারে শূন্য পেটের অনল?"

ধানের শিষে বসন্তের ঘ্রাণ নেই, বৃষ্টিহীন মাঠের বুক ফাটে ক্লান্ত চিৎকারে, আকাশের গাঢ় নীল রঙের নিচে তৃষ্ণার ক্যানভাস এঁকে রাখে কৃষকের ফাটা হাত। একদিন যাদের হাতে ছিল সোনালি শিষের গল্প, আজ তারা গল্প বানায় ভাঙা স্বপ্নের মাটি দিয়ে।

শহরের মোড়ে মোড়ে রঙিন কাচের টুকরোর মতো ছড়িয়ে আছে পথশিশুর দল, তারা জানে না দোল পূর্ণিমা মানে কী, তাদের চাঁদ ওঠে ফুটপাথের ফাঁক দিয়ে, আর হারিয়ে যায় কুয়াশার চাদরে ঢেকে। তারা রঙ চেনে না, শুধু জানে পেটের ভেতর এক হাহাকার, যা প্রতিদিন দোলে ক্ষুধার দোলনাতে।

শাসকের বক্তৃতায় ঝরে পড়ে উন্নয়নের গন্ধ, তাদের কথার স্রোতে ফুল ফোটে, আশার গাছ জন্মায়, কিন্তু সেই গাছের শিকড়ে কোনো জল নেই, সেই ফুলে কোনো সুবাস নেই, শুধু শব্দের মোড়কে বাঁধা থাকে নীরব প্রতারণা।

রঙের গুঁড়োর নিচে চাপা পড়ে যায় অসংখ্য শূন্য থালা, রঙিন হাসির ভিড়ে ঢেকে যায় অগণিত চোখের জল। কেউ দোল খেলে, কেউ আবির ছোঁড়ে, কিন্তু দিগন্তের ওপারে বসে থাকে এক নিঃস্ব বসন্ত, যে আজও জানে না— এই রঙ তার জন্য নয়!

~ নন্দ দুলাল মন্ডল।