আমি যখন হিন্দুকে বলি
ওই যে পশু বলি,বাল্যবিবাহ
আরও কত কিসে ছড়াছড়ি।
তখন তাহারা চেচাইয়া বলে
ওই যে মোল্লা যত,
কহ দেখি তাহার দিকে চাহিয়া,
দেখবো তবে সাহস কত।
আমি যখন মুসলিমকে বলি
'জিহাদ' ব্যাখা ভুল বুঝিয়া যাহারা
চলিছে ভুল পথে ভাই,
আনিছে শত রক্ত গান,
দেখিয়া বুঝিয়া তুমিও সব,
তুমিও তবে নীরব রবে?
শবেবরাতে হালুয়া-রুটি
বাধ্য হয়ে তুমিও খাবে?
তখন তাহারা উত্তর দেয় ওই সতীদাহ,
ওই যে বর্নাশ্রম কহ দেখি তাহা নিয়া,
নতুবা তারা নীরব থাকে।
আমি যখন তৃনভূমি কে নিয়া বলিতে যাই, তাহার আমাকে বিজেরূপ বলিয়া বসে,
তারপর যখন বিজেরুপ নিয়া বলিতে থাকি তাহারা আমাকে সিপিরাম বলিয়া ধরিয়া নেয়।
তারপর যখন সিপিরামকে নিয়া বলিতে দেখে তখন কেউ দলচ্যুত কমিউনিস্ট বলিয়া দাগাইয়া দেয়।
আমি বুঝি, গোটা টাই বুঝি, আসলে আমাকে একটা গোত্রে না ফেললে আটকানো যাবে না, আটকানো যায়নি, আটকানো যায় না।
আমি যখন ওদের কুসংস্কার বা রুসুম
নিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করি,
কেমন একটা নীরবতা ছেয়ে যায় গোটা সাম্রাজ্যের বুকে, তারপর যখন আমার প্রবাহ শূন্য থেকে একের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে ওরা আমাকে নাস্তিক বলে দাগাইয়া দেয়।
আমি সবতেই একটু মুচকি হাসি,
অন্তত এই একটা মুহুর্তে ওরা অজান্তেই এক হয়,এক হয়ে যায়,
যাহা দেখিবার স্বাদ মোর বারেবারে হয়।
আসলে আমি কি?
আমি আসলেই জানি না,
আমি পরিব্রাজক না মুসাফির
আমার জানা নেই।
আমি জানি শুধু
পোলেটারিয়েট এর দুর্দশার কথা,
জানি মিথ্যা ইতিহাসে রাজ্য পাঠ,
বুকের উপর কাঁটাতারের যন্ত্রণায় দিক হারা সব নাগরিকের কথা,
জানি যুদ্ধ না চাওয়া সৈনিকের বুলেটে বুক পাতা বেদনার ব্যাথা।
আমি জানি গ্যালেলিওর অন্ধকার কারাগার,
আমি জানি প্রতিটি রাজ্যপাটকে বারেবারে উল্টে দিয়ে নব দিগন্তের সূচনার ইতিহাস,
আমি জানি চৈতন্যের বিপ্লবের কথা,
জানি গুরুচাঁদ ঠাকুরের 'ধর্ম না হোক তবু শিক্ষা'র কথা,
আমি জানি পলাতক সুভাষের বিশ্বজয়,
রবি ঠাকুরের জাতীয়তাবাদ
কিংবা পথ চেয়ে বসে থাকা এক রত্নগর্ভা মায়ের কথা৷
তবুও আমি জানিনা আমি কি, আমি কে, কোথায় আমার ঘর, কোথায় আমার বাড়ি।
তবে,
তবে এই টুকু উপলব্ধি করতে পারছি সে ঘর এতোটুকুও ছোটো নয় যা কাঁটাতারে ঘিরে ফেলা যায়,
আমি মুক্ত হতে চেয়েছি,
শুধু মুক্ত,
মুক্ত,
মুক্ত।