সেদিন হবে শেষ—
যেদিন সূর্যের আলো আঁধার ছুঁয়ে বলবে,
"এই যে, সত্য এসেছিলো নগ্ন পায়ে,
কিন্তু মিথ্যার দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে
সে আজ রক্তাক্ত!"

আমি দাঁড়াবো এক ভগ্ন মিনারের মতো,
যেখানে প্রতিটি ইট একেকটি স্বপ্ন ছিল,
যেখানে প্রতিটি ধূলিকণা একেকটি আদর্শ,
আর বাতাসে মিলিয়ে যাওয়া ধোঁয়া
ছিল বিপ্লবের শেষ নিশ্বাস।

আমাকে বলবে—
"তুমি এক বামের ছদ্মবেশী,
তোমার অস্থি-মজ্জায় লাল পতাকা!"
বামেরা বলবে—
"তুমি এক উন্মাদ,
যার ভাষা অনর্থক আগুন ছড়ায়!"
ধর্মের কাছে আমি অধার্মিক,
আর অধার্মিকের কাছে
আমি এক ধর্মান্ধের প্রতিচ্ছবি।

আমি জানি, একদিন— আমার শরীরে পরানো হবে রাষ্ট্রদ্রোহের শেকল, অথবা ঠেকানো হবে বন্দুকের নল কপালে, যেখানে স্বাধীনতা এক নিষ্প্রাণ শব্দ মাত্র, আর সভ্যতা পরিণত হয়েছে এক নির্বাক দ্রৌপদীতে।

সেদিন— পাণ্ডবেরা থাকবে নির্বাসনে, কৌরবেরা হাসবে রক্তচোষা দাঁত বের করে, আর সভার ভেতর বসে থাকবে ঋণখেলাপিদের নীলকণ্ঠ রাজনীতি।

যেদিন নাগরিকের সামনে উন্মুক্ত হবে—
প্রতিটি হত্যা, প্রতিটি রক্তের দাগ,
যে কারাগার গিলেছে বিপ্লবীদের কণ্ঠ,
যে নালায় বয়ে গেছে জনতার কান্না,
সেদিন আর শাসকের মুখোশ থাকবে না অটুট।

যেদিন স্পষ্ট হবে প্রতিটি বিশ্বযুদ্ধের কারণ,
কার ইশারায় পুড়েছিল নগরীর শিশু,
কার কণ্ঠে গর্জেছিল যুদ্ধের দামামা,
সেদিন আর পতাকার ছায়ায় লুকাবে না মৃত্যু।

যেদিন পৃথিবী কেঁপে উঠবে,
ভূমিকম্পের প্রতিটি কাঁপনে কাঁপবে রাষ্ট্রের ভিত্তি,
প্রকাশ পাবে লোভী খনিগহ্বরের অন্ধকার,
প্রাকৃতিক নয়—দুঃশাসনের সৃষ্ট কম্পন।

যেদিন প্রতিটি বরফের বিন্দু গলার কারণ
নাগরিকের সামনে নগ্ন হবে,
দাবানলের শিখায় পোড়াবে সেই কালি,
যে কলঙ্ক লেপন করেছে শাসকের লোভ।

যেদিন পৃথিবীর প্রতি ডিগ্রি উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ
লুকিয়ে রাখা যাবে না মিথ্যার ছলাকলায়,
সেদিন সূর্য নয়, মানুষের চোখ জ্বলে উঠবে,
আগুন হবে প্রতিটি শিকল, প্রতিটি প্রাচীর।

সেদিন ইতিহাস হবে এক বৃদ্ধ ভবঘুরে,
যে ক্লান্ত চোখে দেখবে—
রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠরোধ,
বিবেকানন্দের নির্বাসন,
সুভাষের অন্তিম প্রার্থনা।
আবারো নেমে আসবে
এক কালো রাত্রি,
যেখানে মানুষের পরিচয়
হয়ে যাবে শুধুই ধর্মের নাম।

গুন্ডা মাফিয়াদের রাজনীতির নগ্ন নৃত্য,
যখন শহরের মোড়ে হবে উন্মোচিত,
তখন আমায় ফাঁসাবে এক মিথ্যে মামলায়,
আর আমার রক্তাক্ত দেহ
সাজানো হবে স্বাধীনতার বেদীতে।

কিন্তু জানি,
যেদিন সত্য জেগে উঠবে,
যেদিন আগুনের পরশমণি
ছুঁয়ে যাবে জনতার বুক,
সেদিন আমার দেহ
হয়তো পড়ে থাকবে রক্তাক্ত পথে,
কিন্তু আমার কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়বে
অগণিত কণ্ঠে,
ঝড় হয়ে, বজ্র হয়ে, বিদ্রোহ হয়ে!

সেদিন যদি আমার মা ব্যতীত
আর একজনেরও চোখে জল জমে,
তবে জেনে নিও,
আমি হারাইনি—
আমার স্বপ্নগুলো এখনো বেঁচে আছে!
না হয় এই টুকু সত্য হোক আমার শেষ সম্বল।

🖊️ নন্দ দুলাল মন্ডল ।