কিপটে বুড়োর নাতি

কিপটে বুড়োর নাতি
কবি
স্বত্ব কবি
বিক্রয় মূল্য ১৫০/-

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

ছড়া বইয়ের নাম ‘কিপ্টে বুড়োর নাতি’
- মোবারক হোসেন খান
........................

ছড়া লেখা কিন্তু তত সহজ নয় পড়তে যত সহজ মনে হয়। শিশুরা তাদের কথা তাদের মতো করে বলে। যখন যে ভাব আসে তখন সেভাবে প্রকাশ করে। সে কথাগুলো শুনলে মনে হয় কেমন যেন আবোল তাবোল। একথা সত্য নয়। তারা তাদের ভাবনাগুলো যখন যে ভাবে মনে আসে সে ভাবেই বলে। এতে কোন ধারাবাহিকতা নেই। তাদের মন সবসময় উড়াপল দিয়ে চলে। পাখির কথা বলতে বলতে ভূতের কথায় চলে যায়। কোন পরম্পরা নেই। এই পরম্বরাহীন কথাগুলো শব্দের মালায় সাজিয়ে লেখাটাই হলো ছড়া। ছড়া লেখার কাজটা বড় কঠিন। কারণ ছড়াটা তো আর শিমুরা লিখছে না। তারা তো বলেই খালাস। লেখার কাজটা করছেন লেখক। এই লেখকরা হলেন ছড়াকার। তাদের শিমুর মনাতত্ত্ব জানা থাকা চাই। শিমুর ভাবনার সঙ্গে একেবারে ডুবে যেতে হবে। তাদের ভাষার সঙ্গে আত্মীয়তা স্থাপন করতে হবে। শিমুর ভাবনা আর ছড়াকারের ভাবনা যখন একই “ওয়েবলেংথে” মিলন ঘটবে তখনই কেবল একটি প্রকৃত ছড়া রচিত হবে।

ছড়া সৃষ্টিতে কোনরূপ পারম্পর্য্য থাকে না। এলোমোলো ভাবে সৃষ্ট। শিমু-মনের ভাবনা খাপছাড়া ও অসংলগ্ন। তাদের মনের সঙ্গবন্ধ ভাব নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে ছড়া সেই আদিকাল থেকে। সপ্তক শতকে ল্যাটিন ভাষায় আদি শিশু সাহিত্য রচিত। ছড়া শিশু সাহির্ত্যেডি একটি রূপ। বলা যায় কাব্য রূপ। দশম শতকে পাঠ্যপুস্তক শিশু সাহিত্যের প্রচলন। ১৪৮৪ সালে “ঈশপের গল্প” প্রকাশিত হয়। পঞ্চদশ থেকে অষ্টদশ শতক পর্যন্ত বহু সচিত্র শিশু সাহিত্য পুস্তক প্রকাশিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে গ্রীস প্রাতৃদ্বয়ের জার্মান রূপকথা হ্যানস এ্যান্ডারসন লুইস ক্যারল প্রভৃতি শিমু-সাহিত্যের ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদান রাখেন। তাদের রচনার ভাষা গদ্য। বিশ্বসাহিত্যের এই গদ্য ধারাকে অবলম্বন করেই ছড়ার উদ্ভব বলে অনুমিত। বাংলা শিশু সাহিত্যের জন্ম ১৮১৮ খ্রীষ্টাব্দ। নীতিকথা, কথামালা প্রভৃতি বই প্রকাশের মাধ্যমে শিশু-সাহিত্যের যাত্রা শুরু। আর এই শিশুসাহিত্যকে অবলম্বন করেই কাব্যের জগতে ছড়ার প্রচলন।
শিশুমন চিরদিনই কল্পনাপবণ। তাদের চিন্তার মধ্যে কোন ধারাবাহিকতা নেই। শিশু মনের এই বিচ্ছিন্ন ভাবের প্রকাশ নিয়েই রচিত ছড়া। শিশুরা অপ্রাকৃত অলৌকিক গল্প শুনতে ও পড়তে ভালবাসে। রূপকথা আর উপকথা তাদের কাছে তাই অতি প্রিয়। তাদের কল্পনার জগতে রাজকুমার, রাজকুমারী, দৈত্য-দানব, পক্ষ্মীরাজ ঘোড়া এক অপূর্ব ভাবের সৃষ্টি করে। এ সকল উপাদান নিয়েও রচিত হয়েছে ছড়া। যদি বর্তমান যুগের কথা বলি, তাহলে দেখা যায় যে আধুনিক কালের বিজ্ঞানের সব আবিস্কারও শিশুদের মনে কৌতুহলের উদ্রেক করে। ফলে আদিকাল আর মধ্যকালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আধুনিক কালেও আধুনিক ছড়া সৃষ্টি হচ্ছে। এ সকল ছড়ার উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই। শিমুদের মনের ভাবনাগুলো যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছড়ার মাধ্যমে প্রকাশ।

আদিকাল থেকে বর্তমানকালের একটা সেতুবন্ধন নির্মানের জন্যই প্রকাশিত হয়েছে বিশিষ্ট ছড়াকার সামসুন্নাহার ফারুক রচিত “কিপ্টে বুড়োর নাতি”। সামসুন্নাহার ফারুকের আবির্ভাব সাহিত্য ভূবনে একজন কবি হিসেবে। ইতিমধ্যে কাব্য ভূবনে তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত। বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আলোচিত সমালোচিত হয়েছে কবিতার ভাষা ও নির্মান কৌশলের নান্দনিকতার জন্য। কাব্য জগতের এই সাফল্যই ছড়ার ভূবনে তার প্রবেশের অনুপ্রেরণা। তবে প্রচুর ছড়া লিখলেও কিংবা পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও প্রথম গ্রন্থকারে গ্রথিত হয়েছে “কিপ্টে বুড়োর নাতি” গ্রন্থে।

সামসুন্নাহার ফারুক একজন সচেতন শিল্পী। উল্লেখ না করলেও একথা চিরন্তন সত্য যে, শিল্পী না হলে কোন শিল্পই লেখক সৃষ্টি করতে পারেন না। সে গল্প উপন্যাসই হোক কি কবিতা ছড়াই হোক। অর্থনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী হয়েও সামসুন্নাহার ফারুক শিশুদের মনস্তাত্বিক বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান রাখেন। তাঁর মনের কোনে সঞ্চিত সেই জ্ঞানকে প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন কাব্রের আরেক রূপ “ছড়া”।

আরেকটা কথা প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে বাঙালী স্বভাবগতভাবেই দ্বিভাষিক। তাই ইদানিংকালে সাহিত্যভূবনের সকল লেখককেই অবলীলাক্রমে বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যে ইংরেজি শব্দ প্রয়োগ করতে দেখা যায়। বর্তমান সাহিত্য ভূবনে এই প্রবণতা বেশ লক্ষনীয়। অবশ্য এই সংযোজনে সাহিত্য সৃষ্টিতে কোন বিরুপ ভাবের প্রতিফলন ঘটে না। বরং মনের ভাবটা পরিস্ফুটনে সহায়ক ভূমিকাই পালন করে। সামসুন্নাহার ফারুক ‘কিপটে বুড়োর নাতি’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত ছড়াগুলোর ক্ষেত্রেও এই পথ অনুসরণ করেছেন- যেমন হোষ্ট, ডাষ্টবিন, ফ্যাট, কিড ইত্যাদি ইংরেজি শব্দগুলো বেশ মুন্শিয়ানার সাথে তাঁর ছড়াতে প্রয়োগ করেছেন।
‘কিপ্টে বুড়োর নাতি’ ছড়াগ্রন্থে সামসুন্নাহার ফারুক আটাশটি ছড়ার সমাবেশ ঘটিয়েছেন- সাজিয়েছেন নানা বিষয় নিয়ে তার ছড়ার জগত। শিয়াল মামা, মামদো ভূত, কিপ্টে বুড়ো, হুতুম প্যাচা, যাদুর কাঠি, মস্ত পালোয়ান, শীতের বুড়ি অর্থাৎ শিশুদের মুখের কথাগুলো তিনি অত্যন্ত সচেতনভাবে বেছে নিয়েছেন তাঁর ছড়া নির্বাচনের ক্ষেত্রে। সেই সাথে দ্বিভাষিক হিসেবে ইংরেজি শব্দও প্রয়োগ করেছেন ছড়ার প্রয়োজনে অত্যন্ত বোধগম্যভাবে। এক্ষেত্রে তাঁর সৃষ্টির কৃতিত্ব প্রশংসনীয়। এ দাবী তিনি করতেই পারেন।
যেমন:
খুকুমনির পুতুল বিয়ে
ঘুঙুর পায়ে নাচছে টিয়ে
কাঠঠোকরা ঢোলক বাজায়
শিয়াল মামা হোষ্ট।
সামসুন্নাহার ফারুকের লেখনীতে শিশুদের চিরন্তনী চিন্তা ও ভাবের প্রকাশ ঘটেছে তার রচিত ছড়ায় যেমন:
খুকুমনি মান করেছে
ভাত খাবে না আজি
মাছ ভাজা তার শেষ করেছে
হুলো বেড়াল পাজি।
‘কিপ্টে বুড়োর নাতি’ ছড়াটিতে আবহমান কালের সঙ্গে বর্তমানকালের একটি রূঢ় রূপ অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন-
কিপ্টে বুড়োর নাতি
ইষ্টি এলে বাজার গেল
ফুলিয়ে বুকের ছাতি
চুটোপুঁটি ওটকো বেগুন
যায় না ছোঁয়া বেজায় আগুন
বাজার দেখে ভিরমি খেলো
কিপ্টে বুড়োর নাতি
দেশটা গেলো তেষ্টাতে তার
ফাটলো বুকের ছাতি।