সে অনেক বছর আগে, ফেলে এসেছি কিছু টুকরো স্মৃতি
উঠোনের পিছনে পুকুর পাড়ে, আমার গাঁয়ের উজানে।
ফেলে এসেছি কাদামাখা উঠোন, উঠোনে বৃষ্টির শব্দ,
বর্ষায় ছাতা হয়ে দাঁড়ানো সেই প্রকাণ্ড আমগাছ,
তুফানে ভেঙ্গে পড়া গাছের ডাল, বাবুই পাখির বাসা
দু-হাতে কুড়ানো আম, ফেলে এসেছি।
ফেলে এসেছি বর্ষাকালে জলের নকশায় আঁকা
আমার কয়েকশ রঙ্গিন স্মৃতির সুবিশাল সিন্দুক।
দেয়াল বেড়ে উঠা ডালিমের ফুল, সরষের মাতাল ঘ্রাণ,
জল সিঁড়ি, সারি সারি নৌকো, খালের ভাঙা সাঁকো,
মাটির হাড়ি, তালপাতার সেপাইয়ে গড়া নড়বড়ে কুঁড়েঘর,
বৈশাখী মেলা, খেলনা আর কিছু রংচটা বেলুন,
হাতে লাগানো প্লাস্টিক ঘড়ি, বিকেলের উৎসব,
এ সব আমার বিপন্ন শৈশব, আমার হারানো বিস্ময়।
সে অনেক বছর আগে, বৈশাখের মাঝরাতে
জলের স্রোতে খাবি দেওয়া ডাঙ্গার মাছ, মাছে-ভর্তি ঝুড়ি,
হারিকেনের নিষ্প্রভ আলো, ভৌতিক রাক্ষুসে ছায়া,
রাতের আধারে অদূরে শিয়ালের ডাক, কুকুরের আর্তনাদ,
কাঁথায় মুড়ানো ভীতসন্ত্রস্ত শরীর, ফেলে এসেছি।
ফেলে এসেছি হেমন্তের সোনালী ফসল ঘরে তোলার নির্মল উচ্ছ্বাস।
সে আজ অনেক বছর পরে, অনেক বিস্ময়ের পরে
আকুল হৃদয় ডুবে যায় সেই শাশ্বত সুন্দর শৈশবে।
অনেক বেদনার পরে, মানুষ অনুভব করে–
মূলত তারা বেঁচে থাকে অতীত স্মৃতির জগতে।
ফেলে আসা সেসব দিন, চির-উজ্জ্বল, অমলিন।