তোমাকে তো দেখিনি আগে এই জমকালো নগরীতে।
এই ব্যস্ত শহরে হাঁটতে গিয়ে রক্তস্নাত নিশীথে
গহীন অরণ্য পথে আমি তো আমাকেই খুঁজেছি,
নীরবে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকেছি মানুষের ভীরে
কতটুকু চেনাজানা হয়েছে মানুষে মানুষে
কতটুকু ভালোবাসা দিয়েছে প্রেমিক, চুম্বনে।
আমি তো খুঁজি নি কিছুই
খুঁজতে পারি নাই জীবনের টানে।

আছে যত পাপ তাপ ধর্মের বেড়াজালে
মানুষে মানুষে করেছে ভেদাভেদ কতটা সুকৌশলে।
এতো সব খুঁজতে গিয়ে আমার ঘুম হয় না
আমি জেগে রই, নিশি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি
সারাদিন স্বপ্ন দেখি, এক মানবতার সন্ধানী।

মানুষে মানুষে প্রাচীর তুলে রক্তের হলি খেলায়
কেন ঝড়ে যায় প্রাণ অকাল বৈশাখে,
কেন মেহেদি রাঙা হাত পরে থাকে রাজপথে ?
মননে মগজে তারি উত্তর খুঁজেছি আমি পৃথিবীর বুকে
চন্দ্রের জ্যোৎস্না আড়াল ক'রে সূর্যের তেজদ্বীপ্ত চোখে।

হে আমার বিষণ্ণতায় ঢেকে যাওয়া দ্রোহের কবি
তোমাকে তো দ্যাখিনি আগে এই জমকালো নগরীতে
কেন এসে দাঁড়ালে আজ সম্মুখ দুয়ারে,
কেন বাড়ালে হাত মুষ্টিবদ্ধ ক্রান্তি লগ্নে ?
মুক্তি চাই; মুক্তি চাই শ্লোগানে কম্পিত সুরে।

মর্ম মূল ছিন্ন করে বাতাসে তুলোর মত কেন এলে তুমি
কেন এলে আজ দানবের নগরী তে ?
আমার ভয় হয়, বড্ড ভয় হয় তোমাকে নিয়ে
যখন দেখি মাটির বুকে ধর্ষিতা বোনের নগ্ন নিথর দেহ
যখন দেখি সবুজ সতেজ শস্যের বুকে বিষাক্ত ফর্মালিন,
সচেতন বুদ্ধিজীবী পুষে দিচ্ছে বিষাক্ত বীর্য জাতির গর্ভে
জন্ম দিতে মুক্ত বুদ্ধিহীন প্রতিবন্ধী শিশু।
আমি আঁৎকে উঠি, শিউড়ে ওঠে আমার শরীর
তবে কি সব চলে যাবে আজ দুষ্টের দখলে ?

হে আমার সুন্দর সতেজ স্বপ্নেরা
হে আমার ফাগুনে'র প্রতিবাদী দুরন্ত কোকিল,
আমি তো খুঁজি নি ঢেউ তটিনী'র বুকে
তবুও কেন বার বার হিংস্র আঘাত হানে হৃদয় মাঝে
বুলেট আর বেয়নেটে'র রক্তাক্ত ছোবলে।
তবে কেন এলে এই রুক্ষ ফাগুনে
কেন এলে সমস্ত দিনের শেষে নিশ্চুপ স্তব্ধ রাত
কেন এলে তুমি
কেন এলে ?
তবে কি তোমার প্রজন্মের পরতে পরতে থেকে যাবে শুধুই
অন্ধকার
অন্ধকার
অন্ধকার।