মানসী আমার!
এ চিঠি যখন তোমার হাতে পৌঁছাবে
তখন, ৩০ লাখ প্রাণ বিকিয়ে আনা এই দেশটার
প্রতি ইঞ্চি জমিন দখল নিচ্ছে চেতনার ফেরিওয়ালারা।
১৮ কোটি জবান চেপে ধরেছে বাকশালী ভূতেরা।
উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে গেছে
সব মানবতা, মনুষ্যত্ব ও ন্যায্যতা।

প্রিয়তমা-
এখন আমার দেশের ব্যাংকের ভল্টে
পয়সা রাখার জায়গা নাই।
ওদিকে ট্রলারে করে সাগরভাসী দেশছাড়া
তোমার-আমার শত অনুজ।

মরুভূমির দেশে আমার বোনেরা
সরকারি কাগজে কাজের নামে গিয়ে ইজ্জ্বত হারাচ্ছে
সীমান্তে পাচার হচ্ছে হাজারো ‍মা-শিশু বোন আমার।
রঙিন চশমা এটে সাগরভাসী ভাইয়েরা
নিজেদের মূত্রে নিবারণ করছে তৃষা।

আর আমরা নিত্য চায়ের কাপে ঝড় তুলছি
আঙুলের কড় গুণছি,
আর তো মাত্র বছর ছয়-
এরপর  মধ্য আয়ের দেশ হবোই, হবো আমরা।
ডিজিটাল পুরোদস্তুর।

এ জন্য থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া কি মিয়ারমারের জঙ্গলে
পঁচে মরুক আমার হাজার ভাই
সাগরে মূত্রপানে গোল্লায় যাক হাজার অবলম্বন আমাদের।
চুলায় যাক গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা
আমরা মধ্য আয়ের দেশ হবোই।

প্রিয়তমা আমার,
তুমি হয়তো জাননা
একমণ ধান বেচে আমার কৃষক
এখন এক কেজি গরুর মাংস কেনেন।
আর একটা সিরিজি জিতলে
৮ কোটি টাকা মেলে ১৫ ক্রিকেট বীরের।
এদিকে দুই বছর পার হলেও
এক লাখ করে টাকা পায়না
তাজরীনে অঙ্গার আমার ১১১ ভাই-বোনের পরিবার।

তুমি আশ্চর্য্য হবে শুনে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাঙালিত্ব দেখাতে এসে
ইজ্জতহানি হয় আমার কত বোনের।
স্বঘোষিত নারীবাদীরা তার কিছুই জানেনা
দেশ রক্ষার লাঠিয়াল বাহিনী কিছুই করতে পারেনা।

ওদিকে, ময়লা পোড়ানোর মামলায় ফখরুলরা জেলে পঁচে
আর মহানবীকে অবজ্ঞা করা লতিফরা মুক্তি পায়।
শুধু রাবণকে কিছু বললেই লঙ্কাকাণ্ড-হাজতবাস।

প্রিয়তমাসু-
এই শহরে এখন বেওয়ারিশ কুকুরের চেয়ে
মানুষের জীবনের দাম কম।
শিক্ষা নিয়ে অহরহ বাণিজ্য আর রাজনীতি
তার দহনে আত্মহনন করে শাওন, নিতুরা।
প্রেসক্লাব আর কোর্ট মামাবাড়ি ভেবে দখলে নেয়
পা চাঁটা খয়ের খা আর সুশীলেরা।

ফারাক্কা আর টিপাইমুখের বীভৎসতা তুমি জাননা,
তবে ক্ষমতা পোক্ত করতে এবার
বিনে পয়সার ট্রানজিট তুমি দেখবে
মাসুল ছাড়া পণ্যের লেনদেন বুঝবে।

হৃদয়নারী-
এখন এখানে কি দিন, কি রাত
মাঠে-ময়দানে, পার্কে কি বাসে
ধর্ষিত হচ্ছে আমাদের বোন আর মা
আর পাড়ায় পাড়ায় কোমরে অস্ত্র গুজে
বিরোধীদের ঠেঙাচ্ছে সদ্য গোঁফ ওঠা হাজারো অনুজ।
তা দেখে গোঁফে তেল মাখছে
সরকারের পোষা ঠেঙারে লাঠিয়ালরা।

মানসী-
এখন দেশ বিক্রির দালাল-সুশীলরা বাড়ছে ম্যালথাসের সূত্রে
কবিরা ইতর আর নাস্তিক হয়ে উঠছে ক্রমশ।

উপাধি বিলিয়ে দালালি করে বিকাচ্ছে বিবেক
কোটার কোটরে ঢুকে পড়েছে পুরো দেশ।
তোমার মেধাবী ‍বন্ধুরা এখন
ফাই-ফরমাশ খেটে চালাচ্ছে ছাপোষা জীবন
আর দেশ কিনে নেওয়া কোটাধারীদের জমিদারি বাড়ছে।

শহরে পর্নো আর বেলাল্লপনার অন্ত নেই
অভিজাত পাড়ায়, কি দামি রেস্তোরা-মলে
ঢুকলেই চমকে যাবে,
ভুলে ইউরোপের কোনো ক্যাসিনো বা বারে ঢুকেছ কিনা।

এখন শহরের রাস্তায়
তোমার দাঁড়িওয়ালা বাবার দিকে সন্দ্বিগ্ধ চোখ
নামাজি নির্ভৃতচারী ভাইকে নিয়ে র, মোসাদের নাটক
আর পর্দানশীন বোনকে নিয়ে রাস্তায়,
এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে নাক-সিটকানি
রাস্তায়, হাটে-মাঠে মুন্নী কি জওয়ানির রাজত্ব।

তবু এই মাটি মানুষকে নিয়ে আমি স্বপ্ন আঁকি
বাকশালের ওই ভূত বোতলবন্দী হবে।
মুক্তি পাবে প্রেসক্লাব আর কোর্ট
টিএসসি কিংবা যত্রতত্র বন্ধ হবে ছাত্রলীগের দুষ্টুমি
সিআইএ, র, মোসাদ হবে পগারপার
মুক্তি পাবে মানবতা আর গণতন্ত্র,
নিশ্চিহ্ন হবে চেতনার লেবাস পড়া
দেশ বিক্রির কুশীলবরা
ভেস্তে যাবে রাম-রাজ্যের স্বপন।

থ্রি-জি নয়, উপকূলের সুনামির ছোবলে
বিপর্যন্ত প্রতি ঘরে যাবে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ
বিলুপ্ত হবে কোটার জমিদারি প্রথা।
সাগরে ভেসে মরতে যাবেনা আর কোনো ভাই
ফিরিয়ে দেওয়া হবে না হাতজোড় করে
আশ্রয় চাইতে আসা সাগরভাসী কাউকেই।

ততোদিন প্রিয়
তুমি নাই র’লে অপেক্ষায়
তবুও আমি নিরন্তর সেই সুর্যোদয়ের দিন গুণছি।

৩০মে- ৪ জুন, ২০১৫ ঢাকা।